—প্রতীকী চিত্র।
‘ধর্ষণ’ এবং পাল্টা অপহরণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ধরা পড়ল পুলিশের জালে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও দু’জনকে। সোমবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে ওই তিন জনকে কলকাতায় নিয়ে আসে লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিন জনের নাম বিক্রম দাস, অনয় দাস এবং সুশান্ত মণ্ডল। মুম্বই পালানোর ছক ছিল অভিযুক্তদের।
এই নিয়ে শুধু অপহরণের মামলাতেই মোট চার জনকে ধরা হল। বিক্রমই গোটা ঘটনার মূল চক্রী বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। ঋণের পাহাড় মেটাতে ওই যুবক পরিকল্পনামাফিক ঘটনাটি সাজিয়েছিলেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে আনন্দপুর থানায় গণধর্ষণের একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। সম্পর্ক ‘জোড়া’ লাগানোর নামে এক তরুণীকে ডেকে এনে গাড়ির ভিতরেই বেহুঁশ করে বেহালার বাসিন্দা এক যুবক এবং তাঁর গাড়িচালক গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত এবং তাঁর চালকই অপহৃত হয়েছেন বলে নেতাজিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ধর্ষণ ও পাল্টা অপহরণের সেই মামলার তদন্তে শনিবার শৌভিক দাস মাল ওরফে সানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এমনকি, আদৌ তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
ধৃত শৌভিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেই বিক্রমের নাম উঠে আসে। ঘটনার পরেই পালিয়ে যান অভিযুক্ত। অবশেষে সোমবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয় তিন অভিযুক্তকে। পুলিশের নাগাল এড়াতে একাধিক রাজ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তাঁরা। ধৃত তিন জনকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল আদালতে বলেন, ‘‘গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। অভিযুক্তদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে।’’
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্রমই অপরাধের পরিকল্পনা করেছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন তরুণী এবং শৌভিক-সহ বাকিদের। বেহালার ওই যুবকের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতানোর লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনার ছক কষা হয়েছিল। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের প্রোডাকশন হাউস খুলতে মুম্বইয়ের একটি সংস্থার থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিলেন বিক্রম। ঋণের টাকা শোধ দিতে না পারায় তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই ঋণ পরিশোধ করতেই বেহালার যুবকের থেকে টাকা হাতানোর ছক কষেন বিক্রম।
প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশ জানিয়েছে, সিনেমার কথা বলে পরিকল্পনা করেই যুবককে ডেকে এনেছিলেন বিক্রম। যুবক এবং তাঁর গাড়িচালক এলে তাঁদের নেতাজিনগরের একটি ফ্ল্যাটের ভিতরে আটকে রাখা হয়। তাঁরা যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে বেহুঁশ করে দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। দু’জনকে আটকে রাখতে বিক্রমকে সাহায্য করেন অনয় এবং সুশান্ত। এর পরেই অপহৃত যুবকের গাড়ি নিয়ে বেরোন বিক্রম। সঙ্গে নেন শৌভিক এবং ধর্ষণের অভিযোগকারিণী তরুণীকে।
লালবাজার জানিয়েছে, পুলিশের যাতে সন্দেহ না হয়, সে জন্য অপহৃত ওই যুবকের গাড়িই ব্যবহার করেছিলেন অভিযুক্তেরা। ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর মোবাইল ফোনও ব্যবহার করা হয়। ‘প্রমাণ’ হিসেবে গাড়িটি সিসি ক্যামেরায় যাতে ধরা পড়ে, সেই ব্যবস্থাও করা হয়। ওই রাতেই আনন্দপুর থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন তরুণী। পুলিশের অনুমান, অভিযোগের কাগজ দেখিয়ে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বিক্রম।
এ দিকে নেতাজিনগর থানায় দায়ের হওয়া পাল্টা অপহরণের অভিযোগের তদন্তে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে পৌঁছে অপহৃত দু’জনকে উদ্ধার করে। এর পরেই গা-ঢাকা দেন অভিযুক্তেরা। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, প্রথমে ওড়িশা যান বিক্রম। সেখান থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ। এর পরে হায়দরাবাদ হয়ে মুম্বই পালানোর ছক ছিল তাঁর। তদন্তকারী এক কর্তা বলেন, ‘‘সিনেমার কায়দায় ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল। চক্রান্তে আরও কেউ যুক্ত কি না, দেখা হচ্ছে। ধৃতদের থেকে ১৯টি মোবাইল ও ব্যাঙ্কের কার্ড-সহ ১৮টি পরিচয়পত্র মিলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy