E-Paper

‘অপারেশন’-এর কয়েক মাস আগেই তৈরি থাকত যাবতীয় ব্যবস্থাপনা, দামি গাড়ি আনত সুবোধ

বিহারের বেউর জেলে বন্দি হওয়ার পরে সেখানে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত সুবোধ। জেলে তার নিজস্ব ‘সাম্রাজ্যে’ ওই সমস্ত দুষ্কৃতীকে এক রকম স্থায়ী কর্মী করে নিত সুবোধ।

হেলমেট পরিয়ে ব্যারাকপুর কোর্টে আনা হয়েছে সুবোধ সিংহকে। শনিবার।

হেলমেট পরিয়ে ব্যারাকপুর কোর্টে আনা হয়েছে সুবোধ সিংহকে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৪
Share
Save

এলাকা সম্পর্কে খবর জোগাড় করা, রেকি করা— সব কিছুই হত পরিকল্পনা করে। ‘অপারেশন’-এর আগে অন্তত দু’-তিন মাস সংশ্লিষ্ট এলাকায় দুষ্কৃতীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা তো বটেই, কাজের জন্য হাতবদল হওয়া দামি গাড়িও কেনা হত। কারণ, অপরাধের পরে কী ভাবে এলাকা ছেড়ে বেরোনো হবে, তা সব থেকে আগে সুনিশ্চিত করা হত। আর এই পুরো ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি ‘অপারেশন’-এর আগে কয়েক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করত বিহারের গ্যাংস্টার সুবোধ সিংহ।

কুখ্যাত ওই দুষ্কৃতীকে নিয়ে কাজ করা পুরনো পুলিশ আধিকারিকদের কথায়, ‘‘নিখুঁত ভাবে ছক না কষে কোনও অপারেশনই বাস্তবায়িত করত না সুবোধ।’’ বিহারের নালন্দার বাসিন্দা সুবোধের অপরাধ জগতে হাতেখড়ি অনেক কম বয়সেই। সূত্রের খবর, এক সময়ে বিহারের ডাকসাইটে এক পুলিশকর্তার হয়ে এনকাউন্টার করত সুবোধ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পুলিশের সঙ্গে মতানৈক্য হয় সুবোধের। তাই নিজের দল তৈরি করে সে। সেই সময়ে হরিয়ানার এক দুষ্কৃতীর সঙ্গে জুটি বাঁধে সুবোধ। শুরুর দিকে, বিভিন্ন ভাবে লোকজনকে প্রলোভন দেখায় সে। কারও সঙ্গে কারও ঝামেলা থাকলে সুবোধের কাজ ছিল, এক পক্ষকে বেছে নিয়ে তাকে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া। সেখানে বদলা নিতে সহযোগিতার হাত বাড়াত সে। তার পরে সুপারি নিয়ে নিজের দলকে দিয়ে খুন করিয়ে দিত।

সূত্রের খবর, একটা সময়ের পরে সুবোধকেই মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। সেই খবর পেয়ে বিহার থেকে সরে যায় ওই দুষ্কৃতী। পুরনো তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেই সময়ে ওড়িশা হয়ে এ রাজ্যে চলে আসে সুবোধ। ভাইয়ের এক বন্ধুর সহযোগিতায় টিটাগড়, ঘোলা এলাকায় কয়েক বছর গা-ঢাকা দেয়। তাকে নিয়ে কাজ করা পুলিশ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ওই সময়ে সে চিনতে শুরু করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে। তখনই টিটাগড়ের এক দুষ্কৃতীর সঙ্গে পরিচয় গাঢ় হয় সুবোধের। সেই সূত্রে এ রাজ্যের বিভিন্ন অপরাধে হাত পাকাতে শুরু করে সে। কিন্তু পুলিশের চাপে পড়ে ২০০৮ নাগাদ বাংলা ছেড়ে ফের বিহারে চলে যায় সুবোধ। সেখানে গিয়ে অপহরণ করে খুনের মতো অপরাধে সুবোধ-গ্যাংয়ের নাম জড়াতে থাকে বলেও জানাচ্ছেন পুরনো তদন্তকারীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সেই সময়েও ঠান্ডা মাথায় ছক কষতে জুড়ি মেলা ভার ছিল সুবোধের।’’

বিহারের বেউর জেলে বন্দি হওয়ার পরে সেখানে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত সুবোধ। জেলে তার নিজস্ব ‘সাম্রাজ্যে’ ওই সমস্ত দুষ্কৃতীকে এক রকম স্থায়ী কর্মী করে নিত সুবোধ। প্রতি মাসে তাদের বাড়িতে পৌঁছে যেত সুবোধের দেওয়া মাসোহারা। পুরনো তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সিওয়ানের ‘ডন’ সাহাবুদ্দিনকে অনুসরণ করেই পথ চলার ইচ্ছে ছিল সুবোধের। কারণ, সমস্ত মামলা থেকে মুক্ত হয়ে এ বার সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দিকেই এগোতে চাইছিল সুবোধ। তদন্তকারীদের অনুমান, সেই কারণেই হয়তো বিপুল আর্থিক তহবিলের প্রয়োজন ছিল।

সূত্রের খবর, বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি নির্দিষ্ট জেলায় সুবোধের সাম্রাজ্যের কয়েক জন করে ‘লিঙ্ক ম্যান’ রয়েছে। তেমনই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও সুবোধ নিজের লোক তৈরি করেছিল। তাদের থেকেই খবর যেত, কে বা কারা বড় মাপের ব্যবসায়ী এবং তাঁদের গতিবিধি। সেই সূত্র ধরেই ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলকে ভয় দেখিয়ে মোটা টাকা আদায়ের জন্য গুলি চালানোর মতো কাণ্ড ঘটিয়েছিল সুবোধ। ওই মামলায় ইতিমধ্যেই বেলঘরিয়া থানার হেফাজতে রয়েছে ওই দুষ্কৃতী। সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের শেষে শনিবার ফের তাকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ফের সাত দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে। সুবোধের আইনজীবী কমলজিৎ সিংহ আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের শরীর ভাল নেই। এত দিন হেফাজতে থাকার পরেও পুলিশ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।

পাল্টা সরকারি আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, অজয়ের উপরে যে দু’জন গুলি চালিয়েছিল, তাদের এখনও ধরা যায়নি। আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। তাই এখনও সুবোধকে পুলিশি হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। দু’পক্ষের কথা শুনে বিচারক ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এ দিনও বিশাল পুলিশবাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয় ব্যারাকপুর আদালত। কড়া নিরাপত্তায় মাথা-মুখ হেলমেটে ঢেকে সুবোধকে প্রিজ়ন ভ্যান থেকে নামিয়ে কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়। একই ভাবে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় বেলঘরিয়া থানায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Subodh Singh Barrackpore Court police investigation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।