কেউ মাত্র দশ দিন আগে লাইসেন্স পেয়েছেন। কারও আবার সেটাও নেই। সপ্তাহখানেক আগে হাতে আসা শিক্ষানবিশ (লার্নার) লাইসেন্স নিয়েই স্টিয়ারিংয়ে বসেছেন। অনেকে আবার ৩১ ডিসেম্বর রাতভর গাড়ি চালিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনেও ফের বেরিয়েছেন গাড়িচালক ভাড়ায় দেয়, এমন সংস্থার হয়ে!
ক্লান্ত শরীরে, অপটু হাতে এর পরে তাঁদের কেউ কেউ বেসামাল হয়ে ধাক্কা মেরেছেন বাতিস্তম্ভে, কেউ ট্র্যাফিক সিগন্যাল না বুঝে ঢুকে পড়েছেন একমুখী রাস্তায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার পথচারী বা সহযাত্রীদের গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া উৎসবের দু’টি দিনের পরে এমন তথ্যই সামনে আসছে পুলিশি সূত্রে।
লালবাজার জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রাতে কলকাতা পুলিশ মোট ৫৪০ জনকে গ্রেফতার করেছিল। বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে ১৮৭ এবং ১৭৯টি ক্ষেত্রে। বছরের প্রথম দিনে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০৮ জনকে। ওই দিন বেপরোয়া এবং মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ১০৫ এবং ১০১টি ক্ষেত্রে। পুলিশি সূত্রের খবর, এই বছর দেখা গিয়েছে, যে সব সংস্থা গাড়িচালক ভাড়া দেয়, ধরা পড়া অনেকেই তেমন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এক ট্র্যাফিক-কর্তার মন্তব্য, ‘‘নিজেরা পার্টি করতে যাচ্ছেন, পরে গাড়ি চালাতে পারার মতো অবস্থায় না-ও থাকতে পারেন ভেবে অনেকেই চালক ভাড়ায় নেন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, শেষ মুহূর্তে এমন চালক এসেছেন, ক্লান্তিতে যাঁরা তাকাতেও পারছেন না। বহু ক্ষেত্রে লাইসেন্স রয়েছে কি না, সেটা দেখার মতো পরিস্থিতিও নাকি ছিল না।’’ পুলিশের দাবি, এমন বহু গাড়ি ধরা হয়েছে, যেগুলির নিয়মিত চালক ছুটি নিয়েছেন বলে সদ্য চালাতে শেখা বা অতীতে অল্প কিছু দিন চালিয়েছেন, এমন ব্যক্তি স্টিয়ারিংয়ে বসেছেন!
এই ধরনের পরিস্থিতি হল কেন? চালক ভাড়ায় দেয়, এমন একটি সংস্থার মালিক সুখবীর সিংহ বললেন, ‘‘এই ব্যবসায় প্রতিদিন চাহিদা সমান থাকে না। এখন কোভিডের পরে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর আর ১ জানুয়ারি রাতারাতি চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই এমন হয়েছে।’’ গিরিশ পার্ক এলাকার এমন একটি সংস্থার প্রধান নিমাই হাজরার দাবি, ‘‘চালক পাওয়া যাবে কি না, জানতে চেয়ে প্রচুর ফোন এসেছে। অনেকে বলেছেন, চালক স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই হল!’’ লালবাজার যদিও এমন চালকদের বিরুদ্ধে শুধু নয়, তাঁরা যে সংস্থার সঙ্গে জড়িত, সেগুলির মালিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।