Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Subodh Singh

নেপালের ক্যাসিনোয় হাতবদল হত সুবোধের লুট করা সোনা

সুবোধকে নিয়ে কাজ করা তদন্তকারীদের দাবি, সোনা লুটের নেপথ্যে মূল মাথাই শুধু নয়, সেই সোনা ভিন্‌ রাজ্য হয়ে বিদেশে পাচারের কাজও জেলে বসেই নিয়ন্ত্রণ করত সে।

সুবোধ সিংহ।

সুবোধ সিংহ। —ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৫
Share: Save:

বিহারের বেউর জেলের ২২ নম্বর সেল। ২০১৮ থেকে সেখানেই বন্দি কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহ। কিন্তু তার পরেও বিভিন্ন রাজ্যে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতির ঘটনায় বার বার নাম জড়িয়েছে সুবোধ-গ্যাংয়ের। বিভিন্ন রাজ্যের তদন্তকারীদের দাবি, জেলে বসেই সেই সব ডাকাতি নিয়ন্ত্রণ করত সুবোধ। যার জেরে প্রায় ৩০০ কেজি সোনার ‘মালিক’ বিহারের ওই গ্যাংস্টার!

সুবোধকে নিয়ে কাজ করা তদন্তকারীদের দাবি, সোনা লুটের নেপথ্যে মূল মাথাই শুধু নয়, সেই সোনা ভিন্‌ রাজ্য হয়ে বিদেশে পাচারের কাজও জেলে বসেই নিয়ন্ত্রণ করত সে। তদন্তকারীদের দাবি, তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি রাজ্যের এসটিএফের হাতে এসেছে নেপালের হোটেলের নাম। যেখানে ক্যাসিনোর মাধ্যমে সোনার হাতবদল হত। আর তার বিনিময়ে টাকা চলে আসত সুবোধ-গ্যাংয়ের কাছে। এ রাজ্যে সুবোধের অপরাধ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে তদন্ত চালানো আধিকারিকদের দাবি, ‘‘ডাকাতির ছক কষে তা বাস্তবায়িত করা, এমনকি লুট করা সোনা কী ভাবে নেপাল পৌঁছবে, তার জন্যেও সুবোধের গ্যাংয়ে পর্যায়ক্রমে স্তর রয়েছে। এসব কিছুই ঠান্ডা মাথায় পরিচালনা করত সুবোধ।’’

পুলিশ সূত্রের দাবি, যে কোনও ডাকাতি বা অপরাধের নেপথ্যে সুবোধ থাকলেও তদন্তে নেমে তার যোগসূত্র খুঁজে ওই গ্যাংস্টার পর্যন্ত পৌঁছনো কঠিন হয়ে যায়। কারণ, ‘সুবোধ-সাম্রাজ্যে’-র বিভিন্ন স্তরে রয়েছে সাজানো ‘কর্মী’। শুধু বিহারেই সুবোধের গ্যাংয়ের হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রায় ৩০০ দুষ্কৃতী।

পুরনো তদন্তকারীদের দাবি, রওশন যাদবের মতো আরও দু’-এক জন দুষ্কৃতী সুবোধের অতি ঘনিষ্ঠ ছিল। তারাও বর্তমানে জেলবন্দি। কোনও ‘অপারেশন’ স্থির করার পরে, সুবোধ তার দ্বিতীয় স্তরকে (অতি ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতী) দায়িত্ব দিত। সেখান থেকে বার্তা পৌঁছত বিহারে জেলের বাইরে থাকা তৃতীয় স্তরের দুষ্কৃতীদের কাছে। এর পরে তারা সংশ্লিষ্ট জায়গা অর্থাৎ, যেখানে ডাকাতি করা হবে, সেখানকার দুষ্কৃতীদের ‘সুপারি’ দিত। সেখানে কেউ খবর জোগাড় করত, কেউ রেকি করত। সব শেষে অন্য দুষ্কৃতী দল গিয়ে ‘কাজ’ সম্পন্ন করত। তবে গোটা কর্মকাণ্ডে কেউ নিজের আসল নাম ব্যবহার করত না। পুরো কর্মকাণ্ডে সরাসরি সুবোধের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, এমন এক-দু’জন দুষ্কৃতীই থাকত। পুরনো পুলিশ আধিকারিকদের কথায়, ‘‘যে দুষ্কৃতীরা শেষ স্তরে কাজ করছে, তারা জানতেই পারত না যে ওই কাজের আসল মাথা সুবোধ। তাই ডাকাতি করা দুষ্কৃতী ধরা পড়লেও সুবোধ পর্যন্ত পৌঁছনো কঠিন হত।’’ তবে ডাকাতির ধরন দেখে অনুমান করা যেত, তা সুবোধ-গ্যাংয়েরই কাজ। যদিও ঠিকঠাক সূত্র ধরে সুবোধ পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে নিজের দোষ স্বীকারে সে কখনও দ্বিধা করেনি বলেও পর্যবেক্ষণ পুরনো তদন্তকারীদের।

সূত্রের খবর, ২০০৮-’০৯ সাল নাগাদ এ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনায় কয়েকটি ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে সুবোধ। ২০১১ সালে দিল্লিতে ফের ব্যাঙ্ক ডাকাতিতে নাম জড়ায় সুবোধের। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হলেও ২০১৫ নাগাদ জেল থেকে বেরোয় সে। পুলিশের সূত্রের দাবি, এর পরেই ব্যাঙ্ক ডাকাতি ছেড়ে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানকারী সংস্থা ও বড় সোনার দোকানে ডাকাতির ছক কষতে শুরু করে। পুলিশ আধিকারিকদের কথায়, ‘‘ওই সব ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলির অফিস খুব বড় হয় না। তাই স্বল্প পরিসরে ‘অপারেশন’ চালাতে লোক কম লাগবে এবং অনেক সোনা পাওয়া যাবে— এই ভাবনা থেকেই ব্যাঙ্ক ডাকাতি ছেড়ে ওই সমস্ত সংস্থায় ডাকাতি শুরু করে সুবোধ।’’ তবে ডাকাতিতে কারও প্রাণহানি
না করার মতো সুবোধের মানসিকতাও তাঁদের অবাক করেছে বলে
জানান ওই দুষ্কৃতীর বিভিন্ন মামলার তদন্তকারীরা।

২০১৬ সালে ডানলপে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করে সুবোধ-গ্যাং। দলের সকলে প্রায় ধরা পড়লেও অধরা ছিল সুবোধ। একই রকম ভাবে আলাদা আলাদা দলকে কাজে লাগিয়ে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে সোনার ডাকাতি শুরু করে। ২০১৭ সালে আসানোলের হীরাপুরে ডাকাতি করলে স্থানীয় পুলিশ ও সিআইডি বিহারে যায়। অন্য রাজ্যের পুলিশও সেই সময়ে সুবোধকে ধরতে বিহারে আস্তানা গেড়ে বসে। ভিন্‌ রাজ্যের তদন্তকারীদের তখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিহার এসটিএফ। ২০১৮-তে বিহারের রাজীবনগর ও রূপাসপুর থানায় সুবোধের বিরুদ্ধে দু’টি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হওয়ার পরেই ধরা পড়ে সে। তার পর থেকে বেউর জেলই হয় সুবোধের ঠিকানা।

অন্য বিষয়গুলি:

Subodh Singh Gold Sumggling police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy