Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Murder

এলাকায় নতুন সমীকরণ! ‘পথের কাঁটা’ সরাতেই কি খুন তপসিয়ায়

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, দীর্ঘদিনের এই লড়াইয়ের জেরেই খুনের পরিকল্পনা। তাতে অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসছে আব্বাস নামে এক জনের কথা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন। কিন্তু ওই দু’জনের নাম-পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করেনি।

আরিফ খান।

আরিফ খান। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৭:২১
Share: Save:

এক জনের প্রভাব এলাকায় ক্রমহ্রাসমান। আর বেআইনি প্রোমোটিং থেকে জমির হাতবদল, বেআইনি পার্কিং ব্যবসা থেকে পুকুর বোজানোর কারবারের জগতে অন্য জন উঠে আসছেন ধূমকেতুর গতিতে! এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি, মারামারি লেগেই থাকছে। কিন্তু যিনি নতুন উঠছেন, তাঁর তেমন যোগাযোগ নেই পুলিশ মহলে। অন্য দিকে, অপর জনের পুলিশ মহলে ভাল যোগাযোগ। যার সুবাদে তাঁর এক ফোনে পুলিশ বার বার ধরে নিয়ে যাচ্ছে অপর জনের দলের ছেলেদের। ধরা পড়ছেন তিনি নিজেও। এই পরিস্থিতিতে কি ‘লড়াই শেষ’ করতেই শেষে খুনের পরিকল্পনা? আনন্দপুরের তপসিয়া রোডের জড়িবুটি গলিতে শুক্রবার প্রকাশ্য রাস্তায় আরিফ খান নামে এক প্রোমোটারকে কুপিয়ে খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে এমনই নানা তথ্য। পুলিশ যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, দীর্ঘদিনের এই লড়াইয়ের জেরেই খুনের পরিকল্পনা। তাতে অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসছে আব্বাস নামে এক জনের কথা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন। কিন্তু ওই দু’জনের নাম-পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করেনি। তবে তাঁরা স্থানীয় নন বলেই পুলিশের দাবি। ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার আগে আব্বাস নিজের ফোন থেকে ফোন করে আরিফকে ডেকে এনেছিলেন। বছর চল্লিশের আরিফের ফোনের কল ডিটেল রেকর্ড অনুযায়ী, সমঝোতা করার আলোচনা করতেই ডাকা হয়েছিল তাঁকে। ৩৬ডি নম্বর তপসিয়া রোডের যে বাড়ির সামনে তাঁকে কোপানো হয়, সেখানেই অপেক্ষা করছিল আব্বাসের দল। ওই বাড়ির গায়ে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তাতে দেখা গিয়েছে, আরিফের গলার কাছে, ঘাড়ে ও বুকের এক দিকে পর পর কুপিয়ে চিরে দেওয়া হচ্ছে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও তাঁর উপরে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে কোপানো হচ্ছে।

শনিবার ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, গার্ডরেল দিয়ে পুলিশ ওই বাড়িটির সামনের অংশ ঘিরে রেখেছে। দফায় দফায় বৃষ্টিতেও জমাট বাঁধা রক্তের দাগ মোছেনি। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি বহুতলের দোতলায় থাকেন বছর পঁচিশের আব্বাস। সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, ঘরে দুই সন্তান নিয়ে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আব্বাসের বাবা নিজেকে মনু নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘‘ছেলেকে মানুষ করতে পারিনি। খুব অল্প বয়সে বিয়ে করে নিয়ে এল। স্ত্রীকেও এখন সময় দেয় না। দলবল নিয়ে ঘোরে, নেশা করে পড়ে থাকে।’’ এই বাড়ির কয়েকটি বাড়ি পরেই থাকতেন আরিফ। সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী শাহাজাদি বেগম কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মাকে
সামলানোর চেষ্টা করে চলেছে দুই মেয়ে। এক জনের বয়স ১৪, ছোট জনের ১০। বড় মেয়ে কোনও মতে বলে, ‘‘বাবার নামে বদনাম শুনতে পাবেন না। আব্বাসের সঙ্গেই শুধু ঝামেলা।’’

আরিফের ঘরের বাইরেই অপেক্ষায় ছিলেন মহম্মদ আজ়াদ ওরফে মঙ্গল। আরিফের বন্ধু পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, এক সময়ে চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন আরিফ। এর পরে শুরু প্রোমোটিং। তপসিয়া রোডের এই এলাকায় সে সময়ে টালির ঘর বেশি ছিল। কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে টাকা ভাগাভাগির হিসাবে সেই সব টালির বাড়ি জমি-সহ কিনে নেন আরিফ। এর পরে সেখানেই ওঠে বহুতল। এক-একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট হাজার-দেড় হাজার টাকায়। ধীরে ধীরে জড়িবুটি গলি, কসাই মহল্লা, পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতু লাগোয়া এলাকার ‘বড় দাদা’ হয়ে ওঠেন আরিফ। সেই সূত্রেই স্থানীয় রাজনীতিতে নাম লেখান। রাজ্যের এক মন্ত্রীর ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিতি বাড়তে থাকে আরিফের। কিন্তু গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার পরে নির্মাণ ব্যবসায় ভাটা আসে। তাই ফের ব্যাগ তৈরির কাজ শুরু করেন আরিফ। এর মধ্যেই উত্থান আব্বাস ও তাঁর দলবলের। মঙ্গল বলেন, ‘‘মারধর, টাকা তোলা— সব কিছুর সঙ্গেই যুক্ত আব্বাস। আরিফ ওকে বুঝিয়েছিল। না শোনায় পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই রাগেই এই খুন। কালকের বাচ্চা ছেলে আব্বাস যে তাঁকে খুন করে দিতে পারে, হয়তো ভাবতেই পারেনি আরিফ। তা হলে একা যেত না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Dispute police investigation Promoter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE