দুর্ঘটনার মুহূর্তের ফুটেজ। এসি মেট্রোর দরজায় ঝুলছেন সজল।—ফাইল চিত্র।
চলন্ত ট্রেনে হাত আটকে যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মেট্রো-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায় অর্থাৎ গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানোর মামলা করেছে পুলিশ। থানায় এই অভিযোগই এনেছেন মৃত সজলকুমার কাঞ্জিলালের আত্মীয়স্বজন।
গাফিলতির বেশ কিছু নমুনা পুলিশ থেকে সাধারণ মেট্রোযাত্রীদের চোখে উঠে আসছে। এবং তা বেরিয়ে আসছে প্রশ্নের আকারে। পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে দরজায় ঝুলন্ত যাত্রীকে নিয়ে ট্রেন বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটি কি শনিবার সন্ধ্যায় তখনই কারও চোখে পড়েনি? ওই প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ প্রান্তে রেলরক্ষী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি কেন? যাত্রীকে ঝুলতে দেখে গার্ডই বা কেন ট্রেন থামালেন না? দরজায় ঝুলন্ত যাত্রীর ‘অস্বাভাবিক’ স্পর্শ সত্ত্বেও ট্রেন চালু হল কী ভাবে? অর্থাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটি-গাফিলতি এবং উদাসীনতা-গাফিলতির অজস্র কাঁটা। সেই কাঁটায় বিদ্ধ মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। চালক-গার্ডদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মেট্রো নিজেদের বক্তব্য রেল নিরাপত্তা কমিশনারকে জানাবে। আজ, সোমবার এসে তদন্ত করবেন ওই কমিশনারই। চালক-গার্ডদেরও তাঁর সামনে হাজির হতে হবে।
মেট্রো-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ২০-৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু বস্তু আটকে গেলেও ট্রেনের দরজা বন্ধ হতে পারে। তাই হয়তো যাত্রীর হাত আটকে থাকা অবস্থাতেই ট্রেন চলতে শুরু করেছিল। মেট্রো-কর্তাদের একাংশের দাবি, দরজার রবারের আস্তরণ থেকে ওই যাত্রীর হাত টেনে বার করা সম্ভব ছিল। তিনি কি চেষ্টা করেও তা পারেননি? নাকি ভয় পেয়ে কিছুটা হতবুদ্ধি হয়েই প্রাণে বাঁচতে চলন্ত ট্রেনের ফুটরেস্টে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন— প্রশ্ন তুলছেন মেট্রোকর্তাদের অনেকে।
মেট্রোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভিড়-বাসের দরজায় অনেকে যে-ভাবে ঝোলেন, ট্রেনের বন্ধ দরজায় সেই ভঙ্গিতে ঝুলছিলেন সজলবাবু। তিনি কী ভাবে দরজার একচিলতে (মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটার) ‘ফুটরেস্ট’-এ পা রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন, তা বোঝার চেষ্টা করছেন মেট্রোকর্তারা। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়া পর্যন্ত ওই যাত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থাতেই দেখা যাচ্ছে। পড়ে যাওয়া বা তারও আগে ট্রেনের দরজায় কী অবস্থায় তাঁর হাত আটকে ছিল, তা স্পষ্ট নয়।
মেট্রোর তরফে কারশেডে দুর্ঘটনার পুনর্গঠন করে দেখা হয়েছে। মেট্রোকর্তাদের একাংশ জানান, হাত আটকে যাওয়া থেকে ট্রেন থামা পর্যন্ত ব্যবধান ছিল ১০-১৫ সেকেন্ডের। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে তৈরি কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, দিল্লিতে রেল বোর্ডকে তা জানিয়েছে মেট্রো।
ট্রেনের গেটে কেউ বা কিছু আটকে থাকলে ড্যাশবোর্ডে তা খেয়াল করার কথা চালক ও গার্ডের। তদন্তকারীদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে কামরায় কিছু একটা আটকেছে মনে হলেও গেট না-খোলায় পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, চালক বা গার্ড সেটা আঁচ করতে পারেননি। কামরায় তখন কী ঘটছিল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান: কামরায় ঢুকে থাকা বন্ধ মুঠি খোলার চেষ্টা করছিলেন যাত্রীরা। যাতে হাত ঠেলে বার করে দেওয়া যায়। হাতটি দরজার বাইরে গেলে কিছু আঁকড়ে ধরতে না-পেরে যাত্রীটি লাইনের ধারে পড়ে যেতে পারেন। পরে লাইনের ধারেই তাঁর দেহ পাওয়া যায়। নতুন রেকে সিসি ক্যামেরা ছিল না। তাই কামরায় কী ঘটেছে, তার ছবিও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy