দুই পৃথিবী: (বাঁ দিকে) ছটপুজো চলাকালীন বাঁশের ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্র সরোবরের প্রবেশপথ। ইএম বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালের পিছনের পুকুরে শব্দবাজি ফাটাচ্ছে খুদেরা (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
দুই সরোবর কার্যত দুর্গ বানিয়ে পাহারা দেওয়া হল ঠিকই, কিন্তুশহর ছটের তাণ্ডব থেকে মুক্ত হল কই? রবিবার দিনভর শহরের নানা জায়গার চিত্র দেখে এই প্রশ্নই উঠে গেল। জলাশয়ের দিকে যাওয়ার সময়ে যেমন দেদার ট্র্যাফিক বিধি ভঙ্গ করা হল, তেমনই চলল অবাধে ওতারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজানো। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোও বন্ধ হল না! সন্ধ্যার পরে আবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের প্রথম দিকে কয়েকটি উইকেট পড়ার পরে বাজি ফাটানোর ধুম আরও বাড়ল। যা দিনের শেষে প্রশ্ন তুলে দিল,উৎসব যাপনের নামে একটা বড় অংশের বাসিন্দাদের সব রকম দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার এই রোগ সারবে কবে? সচেতন নাগরিকদের বড় অংশের আবার প্রশ্ন, সরোবর রক্ষায় এতটা তৎপর পুলিশ, তা হলে অন্য ক্ষেত্রে তারা অকৃতকার্য হয় কী করে?
এ দিন দুপুরে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখা যায়, ১২টি গেটের প্রতিটিতে আলাদা দল গড়েপুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। দু’টি করে গেট ধরে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা। বড় গেট ছাড়া সব দিক দিয়েই সরোবরে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই দিনভর এলাকা ঘুরে দেখছেন কলকাতা পুলিশের উপনগরপাল পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। গেটে রাখা হয়েছে সহকারী নগরপাল পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকদের। জানা গেল, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকেই সরোবরের দখল নিয়েছিলেন ২৫০ জন পুলিশআধিকারিক। নিয়মিত টহল দিয়েছে পুলিশের গাড়ি। ১২ নম্বর গেটের কাছে এক চায়ের দোকানদার বললেন, ‘‘এমন বন্দোবস্ত দেখে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধ লাগতে চলেছে! পুলিশ ছটপুণ্যার্থীদের কোনও গাড়িই সরোবরের দিকে আসতে দেয়নি। সরোবরের সমস্ত দিকে দু’কিলোমিটার আগে থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ পরিবেশকর্মী তথা রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করার মূল মামলাকারী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এত দিনে মানুষকে পাকাপাকি ভাবে আটকানো গিয়েছে মনে হচ্ছে। আজ পুলিশের পাশাপাশি আমরাও সরোবর পাহারায় ছিলাম।’’ দেখা গেল, একই রকম কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা সুভাষ সরোবর চত্বরও। বেলেঘাটা থানার দিকের গেটে তো বটেই, ই এম বাইপাসের দিকের গেটেও কড়া পুলিশি নজরদারি রাখা হয়েছে।
কিন্তু এমন নজরদারি শহরের অন্যত্র চোখে পড়েনি। রবিবার ছুটির দিন হলেও দুপুরের দিকে কসবা কানেক্টরে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি গাড়ি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই সেখানে এসে দাঁড়ায় একটি লরি।সেই লরি থেকেই চকলেট বোমায় আগুন ধরিয়ে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে আশপাশে। একটি গাড়ির চালক নেমে প্রতিবাদ করতে গেলেন, কিন্তু সিগন্যাল খুলে যাওয়ায় লরি চলতে শুরু করল দ্রুত। কাছেই কর্তব্যরত পুলিশকর্মী দেখেও আটকালেন না। একই অবস্থা ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পিছনের জলাশয়ের সামনেও। সেখানে স্থানীয় নেতা-দাদাদের উদ্যোগে ছটপুজোরবন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেখা গেল, দুপুর সাড়ে তিনটে থেকেই সেখানে বাজনা বাজিয়ে, গাড়িতে বক্স লাগিয়ে পুণ্যার্থী-দল আসতে শুরু করেছে। সেখানেও চোখে পড়ল দেদার শব্দবাজি ফাটানোর চিত্র। এক পুণ্যার্থীকে এ ব্যাপারে প্রশ্নকরা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাজি ছাড়া উৎসব হয় না। একটু এ সব না ফাটালে চলে!’’ অভিযোগ, একই রকম ছবি ধরা পড়েছে হেস্টিংস, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, কাশীপুর, বেলেঘাটার নানা জায়গাতেও। টালিগঞ্জ এলাকায় আবার ছটের ভিড়ের মধ্যে থেকে বাজিতে আগুন ধরিয়ে ছুড়ে দেওয়া হয় রাস্তার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। তবে সব চেয়েআতঙ্কের ছবি দেখা যায় ইডেন গার্ডেন্স চত্বরে। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ ধরেই ভিড়ের মধ্যে থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠছিল। এক যুবক বাজিতে আগুন ধরাতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেন। আচমকা বাজিটি ফেটে যাওয়ায় অনেকেই ভয়ে ছুটতে শুরু করেন। কয়েক জন রাস্তায় পড়েও যান। কাছেই কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা কোনও মতে পরিস্থিতি সামলান।
শহরের বেশ কিছু জায়গায় শনিবার রাত থেকেই তারস্বরে মাইক বাজানোর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলার সময়ে অনেক জায়গায় আবার বক্স বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বেহালা চত্বরেই এমন বক্স বাজানো নিয়ে গন্ডগোল পৌঁছয় থানায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে ওই এলাকার এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘কয়েক ঘণ্টা এখন হয়তো বন্ধ থাকবে, তার পর রাত ৩টে থেকেই আবার বাজনা বাজতে শুরু করবে। প্রচণ্ড আওয়াজের ওই সব বাজনা নিয়ে এর পরে ভোরের সূর্য প্রণাম করতে জলাশয়ের দিকে যাবে। ঘুমোতে পারব বলে মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy