প্রতিবন্ধী-পুলিশ ধস্তাধস্তি। সোমবার।— নিজস্ব চিত্র।
আইন অমান্য আটকাতে ঢাল আর গার্ডরেল নিয়ে প্রস্তুত ছিল বিরাট বাহিনী। তবু তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে প্রতিবন্ধীরা পথ পরিবর্তন করতেই এক লহমায় ভেঙে গেল পুলিশের যাবতীয় বাধা। শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বের কথায় আন্দোলনকারীরাই রণে ভঙ্গ দিয়ে পুলিশের মুখ রক্ষা করল। সোমবার দুপুরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল।
সেই দিনটা ছিল ৩ ডিসেম্বর, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। বিভিন্ন দাবিতে আইন অমান্য কর্মসূচি হাতে নিয়ে সে দিন পুলিশের ঠ্যাঙানি খেতে হয়েছিল প্রতিবন্ধী ছেয়েমেয়েদের। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর ডাকে সে দিনের ধর্মতলা চত্বরে সমবেত প্রতিবন্ধীদের চলাফেরার একমাত্র অবলম্বন হুইল চেয়ারও ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ। সেখানেই না থেমে সংগঠনের নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-সহ কয়েক জনের নামে মামলা দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু তাঁদের কোনও নোটিস না পাঠিয়েই ‘ফেরার’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়! এর বিরুদ্ধেই ছিল সোমবারের আইন ভাঙার কর্মসূচি।
পুলিশ এ দিন আইন অমান্যকারীদের আটকাতে রানি রাসমণি ও রেডরোড ক্রসিংয়ের মুখে গার্ডরেল, লোহার ব্যারিকেড, হাইড্রলিক লিফ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। তার কিছুটা আগেই তৈরি হয়েছিল মঞ্চ। গোটা ঘটনার ছবি তোলারও ব্যবস্থা ছিল। নেতারা বক্তব্য রাখার পরেই শুরু হয় আইন অমান্যের প্রস্তুতি। পুলিশ ওই ক্রসিংয়ের তিনটি লেনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। সওয়া একটা নাগাদ আইন ভাঙার ডাক দেন নেতৃবৃন্দ। পুলিশকে কার্যত ধোকা দিয়ে উল্টোপথে ধর্মতলার দিকে এগোতে থাকেন কান্তিবাবু। তাঁর সঙ্গে সহস্রাধিক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে। মিছিল প্রথমে বাঁ দিকে কিছুটা এগিয়ে ফের ডান দিকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে ঘুরে যায়। দিশাহারা কয়েক জন পুলিশকর্মী তখন মিছিলের শুরুর নাগাল পেতে দৌড়োতে শুরু করেন। ততক্ষণে মিছিল ঢুকে পড়েছে শহীদ মিনার ময়দানে। সেখান থেকে মেয়ো রোড।
মিছিলের নাগাল পেতে দৌড়ে আসা কয়েক জন পুলিশ তখন মরিয়া। ছিলেন কয়েক জন মহিলা পুলিশও। হাতে হাতে রাস্তার ধারে থাকা কয়েকটি গার্ডরেল টেনে এনে আন্দোলনকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু প্রবল ধাক্কায় সে সব উল্টে যায়। মহিলা পুলিশকর্মীরাও উঠে পড়েন ডিভাইডারে। সেখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক সময়ে কান্তিবাবু ফুটপাথে বসে পড়েন। আন্দোলনকারীরাও রণে ভঙ্গ দেন। পুলিশও হাফ ছেড়ে বাঁচে। ঘটনাস্থল থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে মাইকে ঘোষণা করে পুলিশ। হাজারো চোখের সামনে পুলিশের এমন অসহায়
অবস্থা দেখে পথ চলতি এক যুবক মন্তব্য করেন, ‘‘ঢাল-তলোয়ার থেকেও কেউ যে নিধিরাম সর্দার হতে পারে, কলকাতা পুলিশকে দেখে তা বুঝতে পারলাম।’’
লালবাজারের এক কর্তা দাবি করেন, প্রতিবন্ধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে সামনের সারিতে কয়েক জন যুবক ছিলেন, যাঁরা পুলিশকে ধাক্কা মেরেছেন। তাঁর দাবি, তাঁরা প্রতিবন্ধী নন। অভিযোগ অস্বীকার করে কান্তিবাবুর পাল্টা দাবি, ওঁরা সকলেই বধির।
কান্তিবাবু বলেন, ‘‘আমি সব জায়গায় ঘুরছি। পুলিশ আমাকে পলাতক দেখালো কেন? আমি তো এখানে আছি। পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করুক।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমি চোর না ডাকাত, যে পালিয়ে যাব? এটা আমার পক্ষে খুব অসম্মানজনক। যে কারণেই বাধ্য হয়ে আইন অমান্য কর্মসূচি নিতে হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছে, চার্জশিট দিয়েছে। ফেরার ঘোষণা করেছে, অথচ আমি কিছুই জানি না! এ পুলিশ পোশাকের আড়ালে কাপুরুষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy