প্রতীকী ছবি।
হাতের কাছেই রয়েছে সমাধান। অথচ তার পরেও গত ৪৮ ঘণ্টায় পুলিশ বুঝে উঠতে পারেনি, নিউ টাউনে গভীর রাতে উদ্ধার হওয়া মূক-বধির তরুণীর সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে। ওই তরুণীর আকারে-ইঙ্গিতে বলা ‘কথা’ বুঝতে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদদের সাহায্য নিতে দেরি হচ্ছে কেন, তা নিয়েই এ বার উঠছে প্রশ্ন।
‘ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’কে পূর্ণাঙ্গ ভাষার স্বীকৃতি দিতে বর্তমানে মামলা চলছে দিল্লি হাইকোর্টে। আকার-ইঙ্গিতে মূক-বধিরদের সঙ্গে কথা চালাতে পারেন, এমন বিশেষজ্ঞদের অভাব নেই শহরে। তবু একাধিক ঘটনায় তাঁদের সাহায্য নিতে রীতিমতো ‘অনীহা’ দেখা যায় পুলিশ মহলে। অথচ ২০০০ সালে জেলের বন্দিদের গাড়িতে মূক-বধির এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আসল অপরাধীদের কার্যত ধরিয়ে দিয়েছিলেন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদেরাই। নিউ টাউনের ঘটনাতেও সাহায্য নিতে সেই টালবাহানার ছবিই উঠে আসছে।
বহু মামলার তদন্তে পুলিশকে সাহায্য করা, সরকারি ‘ডেফ অ্যান্ড ডাম্ব স্কুল’-এর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনেক সময়েই মূক ও বধির অভিযোগকারী অথবা সাক্ষীর কথা বুঝতে না পারায় তদন্তের খুঁটিনাটি ধরতে পারে না পুলিশ।’’ যেমন হয়েছিল ২০০০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলের কাছে বন্দিদের গাড়িতে ধর্ষণের ঘটনায়। সে রাতে ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীদের টিআই প্যারেড করানো হলেও অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পারেননি মূক ও বধির মেয়েটি। তার পরেই রামেশ্বরবাবুর দ্বারস্থ হয় পুলিশ। অভিযোগকারিণীর সঙ্গে তিনি আকারে-ইঙ্গিতে কথা বলতেই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মেলে।
‘‘পুলিশের একটা মহল থেকে চেপে যাওয়ার জন্য হুমকিও এসেছিল। আমি সিআইডি-কর্তা বি ভি থাম্বিকে বলি, আমার সঙ্গে মেয়েটির কথার ভিডিয়ো দেশের অন্যত্র বিশেষজ্ঞদের দেখানো হোক। আপনারা সবটা যাচাই করে নিন।’’— বলছেন রামেশ্বরবাবু। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের সময়েই প্রথম জানা যায় যে, মেয়েটিকে একটি খাবারের দোকানে নিয়ে গিয়ে রুটি-মাংস খাইয়েছিল অভিযুক্তেরা। তার পরে সেই দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। ঘটনার দিন যে সব পুলিশকর্মী ডিউটিতে ছিলেন না, তাঁদের ছবিও নিয়ে এসে দেখানো হয় ওই কর্মীদের। সেই ছবির মধ্যেই ছিল আসল অপরাধীদের ছবি। পরে টিআই প্যারেডেও তাদের চিনিয়ে দেন নির্যাতিতা। রামেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘খাতায়-কলমে অন্য লোককে সই করিয়ে নিয়ে সে দিন তাঁদের হয়ে ডিউটি করেছিল অপরাধী পুলিশকর্মীরা। গোড়ায় সেটা বোঝা যায়নি। দশ বছরের সাজা হয় তাদের।’’
ভাষা না বোঝায় সুবিচারে দেরি হওয়ার বিষয়টি উঠে আসছে অনেকের অভিজ্ঞতায়। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদ রেশমি কোনার যেমন বলছেন, ‘‘কথা বুঝতে না পেরে পুলিশ আকছার মূক-বধিরদের পাগল বলে ধরে নেয়।’’ শ্বশুরবাড়িতে ধর্ষণের শিকার এক মূক-বধির তরুণীর ‘কথা’ কল্যাণী আদালতে তুলে ধরেছেন আর এক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদ রজনী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিজ্ঞতা— ‘‘আট জন বাঘা বাঘা উকিলের সামনে মেয়েটির হয়ে কথা বলতে হয়েছে আমায়। তবু সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদদের সাহায্য নিতে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ খুব দেরি করে।’’
নিউ টাউনের মূক-বধির মহিলার উপরে নির্যাতন হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করেনি। তাঁর ভাই জানিয়েছেন, তরুণী ভয়ে কিছুটা থম মেরে আছেন। তবে তাঁর কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেও পরিবার সূত্রের দাবি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে ওই তরুণীর ‘কথা’ বুঝতে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদের দ্বারস্থ হয়নি পুলিশ। যদিও শুক্রবার বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘দরকারে নিশ্চয়ই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশারদদের সাহায্য নেব।’’ বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে বর্তমানে ওই তরুণী চিকিৎসাধীন। সেখানকার সুপার পার্থপ্রতিম গুহ জানিয়েছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটিকে ‘রেফার’ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy