প্রতীকী ছবি।
সিনেমার বান্টি-বাবলিকেও হার মানাতে পারে তারা। স্বামী-স্ত্রীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে জালিয়াতি করে বেড়ানো এক মহিলা ও তার পুরুষ সঙ্গী সম্পর্কে এমনটাই দাবি করেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তাব্যক্তি ও আইনজীবীদের একাংশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বাস্তবের সেই বান্টি-বাবলির নাম অনির্বাণ সেনগুপ্ত ও কেয়া ঘোষ। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাসিন্দা ওই দু’জন স্বামী-স্ত্রী ও সমাজকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে মূলত সম্পন্ন প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করত। তার পরে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে সেটাকেই হাতিয়ার করে প্রতারণার জাল বিস্তার করত। তদন্তকারীদের দাবি, গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকার প্রতারণা করেছে তারা।
পুলিশের দাবি, বছর দুই আগে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাসিন্দা ছন্দা দাসের সঙ্গে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছিল অনির্বাণ ও কেয়া। ছন্দার সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় তাদের। মহিলার স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। ছন্দার গানের শখ। বিষয়টি জানার পরেই অনির্বাণ ও কেয়া প্রস্তাব দেয়, তাঁর গানের অ্যালবাম তৈরি করা হবে। মুম্বইয়ের স্টুডিয়োয় হবে রেকর্ডিং। বিভিন্ন চ্যানেলে গানের সম্প্রচার হবে। অভিযোগ, এমনই সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছন্দার কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪১ লক্ষ টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল অনির্বাণ ও কেয়া। যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু তাদের খোঁজ মেলেনি। সম্প্রতি ওই মামলায় আলিপুর আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তার পরেই আত্মসমর্পণ করে জামিন নেয় ওই দু’জন। তার পরেই ফের তারা বেপাত্তা হয়ে যায়।
আর একটি ঘটনায় যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ের বাসিন্দা অমৃতাংশু দাশগুপ্তকে ব্যবসায় অংশীদার করা হবে বলে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছিল অনির্বাণ ও কেয়া। তার পরেই গায়েব হয়ে যায় তারা। সেই ঘটনাতেও যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তবে ওই দু’জনের খোঁজ মেলেনি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। ছন্দার আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এদের বিরুদ্ধে পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েক জন মৎস্যজীবীও প্রায় ২০ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই প্রতারকেরা এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। সেই কারণেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি।’’ যাদবপুর থানার তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সময় মতো চার্জশিট দিতে না পারলে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হত। সেই কারণে ওই প্রতারকদের খুঁজে না পাওয়া সত্ত্বেও চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। তবে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে সব রকম চেষ্টা করা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই প্রতারকের সঙ্গে রাজ্যের এক মন্ত্রীর একাধিক ঘনিষ্ঠ ছবি উদ্ধার হয়েছে। প্রতারণার কাজে সেই ছবি নানা ভাবে ব্যবহার করত অনির্বাণ ও কেয়া। সেই মন্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ওই মন্ত্রীর সঙ্গে কী ভাবে তাদের আলাপ হল এবং কোথায় সেই ছবি তোলা হল, তা জানতে পারলেই অভিযুক্তদের বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানা যাবে বলে ধারণা পুলিশের।
ওই মন্ত্রী তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা। বিরোধী দলে থাকাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, অনির্বাণ ও কেয়া প্রথমে শিকারকে বেছে নেয়। পরিচয় গাঢ় হলে তাঁকে প্রতারণা করার ছক কষে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য এর পরে ব্যবহার করা হয় রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সেই ছবি। প্রতারণা-পর্ব শেষ হলেই নিশ্চিন্তে গা-ঢাকা দেয় তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy