চলতি মাসের শুরুর ঘটনা। আশুতোষ কলেজ চত্বর থেকে ধৃত তরুণের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে অবাক তদন্তকারীরা। তাঁর ঘরের দেওয়াল জুড়ে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ছবি। টেবিলে ডেস্কটপ কম্পিউটারের সঙ্গে রাখা দু’টি ল্যাপটপ। তবে কোনওটাই স্বাভাবিক নিয়মে চলে না। প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিন বা অ্যাপ্লিকেশনের কোনও কাজ নেই তাতে। পাসওয়ার্ড দিয়ে কম্পিউটার খুললেই দেখা যায়, স্রেফ কালো এক ‘উইন্ডো’!
এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘সাধারণ কম্পিউটারের আড়ালে সে এক গোপন জগৎ। টর ব্রাউজ়ার নামে কম্পিউটার ব্যবহারের এক গোপন পদ্ধতিতে মাদক থেকে নিষিদ্ধ জিনিস সংগ্রহ ও বিক্রি করতেন ওই তরুণ। বাবা-মা জানতেন, ছেলে কম্পিউটারে গেম খেলেন। অবস্থাপন্ন পরিবার, তাই ছেলের খেলার খরচ জোগাতে কার্পণ্য করেননি তাঁরা।’’ ওই আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘ভাগ্যিস, ছেলেটাকে মাদক-সহ হাতেনাতে ধরেছিলাম। নইলে টর ব্রাউজ়ার ধরে ডার্ক ওয়েবের হদিস পাওয়া অসম্ভব।’’
গত ২৬ তারিখ বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় পালিত হয়েছে বিশ্ব মাদক-বিরোধী দিবস। গত এক বছরে প্রায় এক কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত হওয়া এবং মাদক কারবারের মাথাদের গ্রেফতার করাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে এর মধ্যেও দেশের সব ক’টি মাদক-দমন শাখার গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে টর ব্রাউজ়ার। গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘একটা হয়, অপরাধের পরে গ্রেফতার। আর একটা হয়, অপরাধ করার আগেই আটকানো। মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করাটা দ্বিতীয় পর্যায়ে পড়ে। মাদক-সহ আটক করতে না পারলে কাউকেই গ্রেফতার করা যায় না। এতেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে টর ব্রাউজ়ার।’’
দীর্ঘদিন কলকাতায় কাজ করা, বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো’ (এনসিবি)-র আধিকারিক মনোজ মিশ্র জানান, বিধাননগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু নামী স্কুলে মাদকের চক্র ধরেছিলেন তাঁরা। দেখা যায়, গেম খেলা ও কম্পিউটারে কাজ করার নামে দেদার টর ব্রাউজ়ার ব্যবহার হচ্ছে। বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ডে ‘বিট কয়েন’ কিনেছিল পড়ুয়ারা। তা দিয়েই বরাত দেওয়া মাদক ‘কুরিয়র’ মারফত পৌঁছত বাড়ি বাড়ি। মনোজের কথায়, ‘‘বিট কয়েন এক ধরনের ক্রিপ্ট কারেন্সি বা ভার্চুয়াল টাকা। এর দাম ওঠানামা করে। কখনও প্রতি কয়েনের মূল্য কয়েক লক্ষ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। কুরিয়র সংস্থাগুলিকে ধরলে তারা বলে, খামে ভরা চিঠির ভিতরে কী আছে, তা তারা দেখতে পারে না।’’
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত আবার মনে করেন, কলকাতার স্কুলগুলিতে যে মাদক কারবারিরা সক্রিয়, বিট কয়েন কেনার মতো টাকা তাদের নেই। তিনি জানান, ‘দ্য হিডেন উইকি ডট অর্গ’-এর মতো বহু ওয়েবসাইট সক্রিয় রয়েছে। টর ব্রাউজ়ার ব্যবহার করে সেখানে ঢুকলেই খোলাখুলি মাদকের কারবার চলতে দেখা যায়। সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘ওদের ধরাছোঁয়া যাবে না। কাউকে ধরা সম্ভব তার আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। কিন্তু টর ব্রাউজ়ার ব্যবহার করে আইপি-টাই লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। তখন কেউ কলকাতায় বসেই নাইজিরিয়ার আইপি দিয়ে দুষ্কর্ম করতে পারে।’’
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমেও মাদক ব্যবসা চলছে। মোবাইলে হোয়াট্সঅ্যাপ চালু করতে একটি ফোন নম্বর প্রয়োজন। অনলাইনে এমন প্রচুর ‘ভার্চুয়াল মোবাইল নম্বর’ রয়েছে। তারই যে কোনও একটি ব্যবহার করে ফোনে হোয়াট্সঅ্যাপ চালু করা যায়। এর পরে একটি ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) যাওয়ার কথা ওই নম্বরে। যে সাইট থেকে ‘ভার্চুয়াল নম্বর’ নেওয়া হয়েছে, সেখানে নম্বরটির উপরে ক্লিক করলে ওটিপি-ও দেখে নেওয়া সম্ভব।
অতএব, কে কোথায় বসে দুষ্কর্ম করছে, সেই হদিস পেতেই কালধাম ছুটছে তদন্তকারীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy