পুড়ে যাওয়া কুকুর-বেড়ালের মৃত্যুর শংসাপত্র জোগাড় করতে নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। প্রতীকী ছবি।
মাসখানেক আগে নাকতলা রোডের একটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৮টি বেড়াল এবং একটি কুকুরের। পুলিশ সূত্রের খবর, বন্ধ ফ্ল্যাটে খাঁচাবন্দি অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল তারা। ঘটনার দিন পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি বটে, তবে পরে অবলা প্রাণীগুলি মৃত্যুর যথাযথ কারণ খুঁজতে অভিযোগ দায়ের করে একটি পশুপ্রেমী সংস্থা। সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে এ বার পুড়ে যাওয়া কুকুর-বেড়ালের মৃত্যুর শংসাপত্র জোগাড় করতে নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ, সকলেই চিঠি দিয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, কুকুর-বেড়ালের মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া তাদের কাজ নয়!
সূত্রের খবর, ঘটনার দিন নেতাজিনগর থানা থেকে ফোন করে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকে কুকুর-বেড়ালের দগ্ধ দেহগুলি সরাতে বলা হয়েছিল। পরে দেহগুলি ধাপায় ফেলে দেয় ওই বিভাগের কর্মীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি নেতাজিনগর থানা ওই বেড়াল-কুকুরগুলির মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করে। কিন্তু দফতর জানিয়ে দেয়, কুকুর-বেড়ালের শংসাপত্র প্রদানের বিষয়টি তারা দেখে না। তা ছাড়া সে দিন পুড়ে যাওয়া দেহগুলি ধাপার জঞ্জালে ফেলা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে শংসাপত্র পেতে পদ্ধতি মেনে দেহগুলির ময়না তদন্ত করানোর প্রয়োজন ছিল বলেও জানানো হয় পুলিশকে। সেই চিঠি পেয়ে এর পরে শংসাপত্রের জন্য পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকে চিঠি লেখে পুলিশ। কিন্তু তারাও জানিয়ে দেয়, এই বিষয়টি তাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত।
এর পরেই বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংস্থার তরফে প্রশ্ন উঠেছে, নাকতলার অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হওয়া কুকুর-বেড়ালের দেহগুলি ময়না তদন্তে কেন পাঠানো হল না। একটি পশুপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার রাধিকা বসুর অভিযোগ, ‘‘নেতাজিনগর থানার তরফে ময়না তদন্তের জন্য দেহগুলি নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো উচিত ছিল। এর পাশাপাশি, মৃত পশুর ময়না তদন্ত করাতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের তরফেও কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তবে কি অবলা প্রাণী বলেই বিষয়টি লঘু করে দেখা হচ্ছে?’’
বেলগাছিয়া প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত প্রাণীদের ময়না তদন্তের পদ্ধতি বছর দুয়েক ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অধীনে এখানে আলাদা করে ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে। এটা ঠিক যে, পশু-মৃত্যুর কারণ খুঁজতে ময়না তদন্ত করার সরকারি পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, পার্ক স্ট্রিট, রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনায় একাধিক মানুষের পাশাপাশি পোষ্যেরও মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময়ে পচাগলা হাড় পোষ্যের কি না, তা খতিয়ে দেখতে ময়না তদন্তের জন্য বেলগাছিয়ায় নমুনা পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘১২ বছর আগে বালিগঞ্জে একটি ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডে এক ব্যক্তির সঙ্গে মারা গিয়েছিল পোষ্যও। সে সময়ে ওই পোষ্যের দেহ ময়না তদন্তের জন্য বেলগাছিয়ায় আনা হয়েছিল। নাকতলার অগ্নিকাণ্ডের পরে দেহগুলি জঞ্জালের স্তূপে না ফেলে বেলগাছিয়ায় আনা উচিত ছিল পুলিশের।’’
যদিও এ নিয়ে নেতাজিনগর থানার এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘ঘটনার সময়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পরে দায়ের হয়। তাই ময়না তদন্তের প্রয়োজন পড়েনি।’’ কিন্তু বদ্ধ ফ্ল্যাটে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় কেনই বা পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে দেহগুলি ময়না তদন্তে পাঠানো হল না? এ প্রশ্নের জবাব কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন ওই আধিকারিক। ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কালিতা শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy