শ্রীভূমির পুজো মণ্ডপ দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ের জেরে ব্যাপক যানজটের কবলে পড়ে ভিআইপি রোড এবং ইএম বাইপাস। —ফাইল চিত্র।
একেই বোধহয় বলে ‘প্রভাবশালী’ পুজো।
উৎসবের দিনে যানজটে আটকে মানুষ চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হবেন। সময়ে বিমানবন্দরে না পৌঁছনোর জেরে বিমান ধরতে পারবেন না। তীব্র যানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে কাতরাবেন সঙ্কটজনক রোগী। ঘুরিয়ে দেওয়া হবে বাস বা গাড়ির রাস্তা। রোগী সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকলেও অ্যাম্বুল্যান্সকে রাস্তা বদলে আধ ঘণ্টার জায়গায় দু’ঘণ্টার পথ উজিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। হেনস্থার মুখে পড়ে ক্ষোভ বাড়বে পুলিশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। তবু পুজোর কলেবর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না প্রশাসন।
শ্রীভূমির কারণে রাস্তায় তৈরি হওয়া এ হেন পরিস্থিতিই কি উৎসবের দিনে শহরবাসীর প্রাপ্য? এ নিয়ে পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা তথা মন্ত্রী সুজিত বসু কিংবা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামীকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি, উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজেরও।
শনি ও রবিবার শ্রীভূমির পুজো মণ্ডপ দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ের জেরে ব্যাপক যানজটের কবলে পড়ে ভিআইপি রোড এবং ইএম বাইপাস। তার পরে সোমবার নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ। এ দিন লালবাজার জানিয়েছে, যানজটের মোকাবিলায় প্রয়োজন মতো যা করার, তা করা হবে। তবে পুজোর সময়ে উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরগামী কোনও দূরপাল্লার বাস ভিআইপি রোড ধরবে না। তার বদলে ইএম বাইপাস-যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাশ দিয়ে সল্টলেকের ব্রডওয়ে ধরে নিউ টাউন ঘুরে যাবে সেগুলি। একই সঙ্গে দূরপাল্লার বাস যাবে শ্যামবাজার, পাতিপুকুর-যশোর রোড এবং বি টি রোড দিয়েও। প্রতি দিন বিকেল থেকে ওই বিকল্প পথের ব্যবস্থা চালু হবে। এ দিন বিকেল থেকেই দূরপাল্লার বাসগুলিকে ওই সব রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বাস সংগঠনগুলিকেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ভিআইপি রোডের আশপাশের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিও জানিয়েছে, শ্রীভূমির জন্য ভিআইপি রোডে যানজটের ফলে রোগী নিয়ে ঘুরপথে নিউ টাউন বা সল্টলেক হয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে হচ্ছে।
কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশের দাবি, শনি ও রবিবার শহরের অধিকাংশ মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য না খোলায় দেদার দর্শক দূর-দূরান্ত থেকে শ্রীভূমিতেই ভিড় জমিয়েছিলেন। যার জেরে সপ্তাহান্তে গভীর রাত পর্যন্ত ভিআইপি রোড ও ইএম বাইপাস যানজটে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সোমবার অফিস খোলা থাকায় এবং উত্তরবঙ্গ-সহ দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসের রুট ঘুরিয়ে দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি আগের দু’দিনের মতো হয়নি বলেই দাবি কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশের। তবে ভিআইপি রোডে গাড়ির চাকা গড়িয়েছে ধীর গতিতেই। কাল, বুধবার থেকে ফের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। তাই তার পর থেকে পুজোর দিনগুলিতে ভিআইপি রোড ও বাইপাসের
পরিস্থিতি কী রকম থাকবে, তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশের।
কিন্তু মহালয়া থেকেই কেন শ্রীভূমির মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হল? ওই পুজোকে ঘিরে ভিআইপি রোড এবং ইএম বাইপাসে প্রতি বার যে পরিমাণ হেনস্থা ও ভোগান্তির শিকার হন শহরবাসী, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কি তার আন্দাজ করতে পারেনি বিধাননগরের পুলিশ?
বিধাননগর কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, রবিবার রাতে বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা-সহ কমিশনারেটের সিংহভাগ পুলিশকর্তা ও পুলিশকর্মীদের লেক টাউন মোড়ে নামতে হয় যানজট সামলাতে। পরিস্থিতি সামলাতে লেক টাউনের ঘড়িমোড় থেকে যশোর রোড সংযোগকারী রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বাঙুর হয়ে যশোর রোডের দিকে গাড়ি ঢুকিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে নাজেহাল দশা হয় ভিআইপি রোডের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার রাতে এক দিকে রাস্তায় আটকে হেনস্থা, অন্য দিকে ভিড়ে ঠাসা পরিস্থিতি— এর জেরে এক সময়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে কটাক্ষ ও কটূক্তি। সূত্রের খবর, এ হেন পরিস্থিতিতে শ্রীভূমির পুজো ঘিরে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পুলিশের একাংশের দাবি, এ বারও শ্রীভূমির তরফে আলো ও শব্দের খেলা দেখানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্চপদস্থ কর্তারা রাজি না হওয়ায় অনুমতি মেলেনি।
এ ছাড়া একাধিক রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করা বা গাড়িগুলিকে ইচ্ছেমতো ঘুরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রীভূমির স্থানীয় বাসিন্দারাও। অভিযোগ, স্থানীয়দের বাড়িতে ঢোকার জন্য পাস দেওয়া হলেও পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বয়স্কেরা থাকা সত্ত্বেও গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy