Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

প্রতিবাদী স্বর চাপা দিতেই কি পুলিশ ও নির্দেশের ঘেরাটোপ

ছুটির দিন হলেও প্রতিবাদের আশঙ্কায় সাধারণের জন্য বন্ধ ছিল নন্দন। কেবল সিনেমার টিকিট থাকলে শো শুরুর ১০ মিনিট আগে ঢোকার অনুমতি মিলেছে।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় আন্দোলন চলছে।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় আন্দোলন চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

রবিবারের প্রতিবাদী শহর দেখল শুনশান নন্দন চত্বর জুড়ে নিরাপত্তার দাপাদাপি। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন দফায় দফায় আন্দোলন চলল, তেমনই প্রতিবাদের স্বর থামাতে নজরে এল প্রশাসনিক তৎপরতাও।

এ দিন নন্দনের একটি গেট বাদে সব প্রবেশপথ ছিল তালাবন্ধ। নন্দনের যে গেটে একটু ফাঁক রয়েছে, সেখানেও দাঁড়িয়ে দুই নিরাপত্তারক্ষী। এগোলেই দাঁড়িয়ে আরও কয়েক জন। গেটের ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকতে চাইলে প্রথমে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিনেমার টিকিট দেখালে মিলছে নন্দন চত্বরে ঢোকার অনুমতি। টিকিট না থাকলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন এই কড়াকড়ি? সদুত্তর মেলেনি। কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের এক জন বললেন, ‘‘উপরের নির্দেশে সবটা হচ্ছে।’’

ছুটির দিন হলেও প্রতিবাদের আশঙ্কায় সাধারণের জন্য বন্ধ ছিল নন্দন। কেবল সিনেমার টিকিট থাকলে শো শুরুর ১০ মিনিট আগে ঢোকার অনুমতি মিলেছে। নন্দনে গিয়েও এ দিন ফিরতে হল গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘‘কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, বলছে না। প্রতিবাদের আশঙ্কায় এমনটা হয়ে থাকলে কি আটকানো যায়?’’

আন্দোলন আটকাতে শনিবারই আর জি কর এবং সংলগ্ন শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লালবাজার। আগামী এক সপ্তাহ এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে খবর। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই এ দিন কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসক এবং পড়ুয়ারা। বৃষ্টি মাথায় বিধান সরণি ধরে মিছিল যায়। যোগ দেন সাধারণ মানুষও। সন্ধ্যায় খন্না মোড় থেকে অন্য একটি মিছিলে পথে নামেন টালিগঞ্জের তারকারা। পা মেলান শুভশ্রী, অঙ্কুশ, ঋত্বিক-সহ টালিগঞ্জের একাধিক শিল্পী।

বিকেলে রবীন্দ্র সদন থেকেও একটি মিছিল বেরোয়। কালীঘাট হয়ে তা শেষ হয় নেতাজি ভবনে। সেই মিছিলে অংশ নেন এসএসকেএমের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। উদ্যোক্তাদের এক জন দেবস্মিতা পাঁতি বলেন, ‘‘আমাদের দাবি ন্যূনতম। কাজের জায়গায় নিরাপত্তা এবং আর জি কর কাণ্ডের দোষীদের শাস্তি। এই দু’টি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’ এ দিন এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন একটি স্কুলের প্রাক্তনীরাও রাস্তায় নামেন। ওই মিছিল থেকে আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে স্লোগান ওঠে। সল্টলেক স্টেডিয়ামে ডার্বি ম্যাচ বাতিল হওয়ার পরে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় রাত ন’টায়। বাইপাসে শামিল হন সমর্থকেরা। সেখানে কয়েক জন সমর্থককে আটক করে পুলিশ। তারই প্রতিবাদে যাদবপুরের ওই মিছিলটি। আবার রাত ন’টা নাগাদ পর্ণশ্রী পোস্ট অফিস থেকে বেহালা থানা পর্যন্ত মিছিল করেন এলাকার মানুষ। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। দফায় দফায় বৃষ্টিও প্রতিবাদী স্বরকে চেপে দিতে পারছে না।

আর জি কর চত্বরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারির নেপথ্যে ডাক্তারদের আন্দোলন ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ তুলছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। একই অভিযোগ আর জি করের আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকদের। তাঁদের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসকেরা আমাদের সমর্থন জানিয়ে রোগী পরিষেবা দিচ্ছেন। তা হলে তাঁরা কি আসবেন না? আমরা রাজনৈতিক দলকে ঢুকতে দিচ্ছি না। বার বার আবেদন রাখছি, রাজনৈতিক পতাকা, ব্যানার বাইরে রেখে সাধারণ মানুষ হিসাবে পাশে দাঁড়ান। তার পরেও এমন নিষেধাজ্ঞা?’’ আবাসিক চিকিৎসকদের আরও দাবি, ‘‘এত বড় হামলা পুলিশ রুখতে পারল না, এখন আন্দোলন ভাঙতে এ সব হচ্ছে।’’

‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’-এর রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী হামলার সময়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখল। আর যখন আমরা বাইরে থেকে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছি, তখন চক্রান্ত করে এমন নির্দেশিকা জারি হল!’’ প্রতিবাদ রুখে দেওয়ার জন্য এমন নির্দেশিকা বলে মনে করছেন
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের দাবি, ‘‘চিকিৎসক সমাজ
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আর জি করে যাচ্ছে না। আমরা প্রতিবাদে শামিল হতে যাচ্ছি। রাজ্য প্রশাসনের তাতেও আপত্তি? আন্দোলনকে
বন্ধ করতেই কৌশলগত ভাবে এই নির্দেশিকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE