রণক্ষেত্র: পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালানোর সময়ে খুলে গিয়েছে জুতো। রাস্তায় পড়ে যাওয়া এক মিছিলকারীকে লাঠিপেটা করতে উদ্যত পুলিশ।
ধর্মতলা, জানবাজার চত্বর যেন রণক্ষেত্র! অলিগলি সব বন্ধ। পুলিশও কার্যত ব্যারিকেডবন্দি। বৃহস্পতিবার বাম ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযানের মিছিলে এই দৃশ্য দেখে তাজ্জব হয়েছিলেন অনেকেই। মিছিলে ‘গোলমালের’ জেরে এ দিন বহু বাম সমর্থক আহত হয়েছেন। বহু মিছিলকারীর মাথায়, চোখে লাঠির আঘাত লেগেছে। লালবাজারের পাল্টা দাবি, মিছিলকারীদের হামলায় কয়েক জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার পিছনে পুলিশের ‘পরিকল্পনাগত ত্রুটি’কেই দায়ী করছেন অনেকে। যার সমর্থন মিলছে প্রাক্তন পুলিশকর্তা, এমনকি কর্মরত আধিকারিকদের একাংশের গলাতেও। যদিও লালবাজার সূত্রে পরিকল্পনাগত খামতির কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নিউ মার্কেট, ধর্মতলার অলিগলি এমন ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল যে আহত পুলিশকর্মীদের উদ্ধারে অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারেনি। উল্টো দিকে,
পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচতে পালাতেও পারেননি মিছিলকারীরা। ভেজা রাস্তা দিয়ে দৌড়তে গিয়ে কেউ কেউ পড়ে গিয়েছেন। পালানোর সময়ে অনেকের জুতো খুলে গিয়েছে। মিছিল শেষ হওয়ার পরেও এস এন
ব্যানার্জি রোডে প্রচুর জুতো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বাম যুব নেত্রী মীনাক্ষী গোস্বামী বলেন, ‘‘চার দিক আটকে পুলিশ লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে। মেয়েদের বেধড়ক মেরেছে।’’ মৌলালিতেও মহিলাদের উপরে পুরুষ পুলিশকর্মীরা লাঠি চালিয়েছেন বলে বাম নেতৃত্বের অভিযোগ। তাঁদের আরও অভিযোগ, পর্যাপ্ত মহিলা
পুলিশ ছিল না। এমনকি, আহতদের অনেককেই পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বড় অংশের বক্তব্য, বুধবার রাতে পুলিশ এলাকার সব দোকান বন্ধ রাখতে বলে গিয়েছিল। এ দিন সকাল থেকে অলিগলি বন্ধ করা হয়। তাঁদের দাবি, পুলিশ পরিকল্পনা করেই সব রাস্তা আটকেছিল। এক স্থানীয় বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘এ দিনের ঘটনায় কার লাভ হল বলুন তো?’’ মিছিলে আহত হওয়া এক যুবকের অভিযোগ, ‘‘আমি পড়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ লাথি মেরেছে।’’ লাঠির ঘায়ে আহত এক মহিলা সমর্থকের অভিযোগ, ‘‘পুরুষ পুলিশকর্মীরা আমাকে গালিগালাজ করেছেন।’’
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার মনে করেন, এই ধরনের নিরস্ত্র আন্দোলন সংযত মেজাজে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। গোলমাল হলে মিছিলকারীরা যাতে দ্রুত এলাকা ছেড়ে যেতে পারেন, তার জন্য বেরোনোর রাস্তা রাখা দরকার। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংযত মনোভাব দেখানো প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, মহিলাদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত মহিলা পুলিশ বোধহয় নেই। মহিলাদের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব গায়ে হাত না-দিয়ে নিরস্ত করাই শ্রেষ্ঠ পন্থা।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘আলোচনার মাধ্যমেই এই ধরনের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করা কাম্য। মনে রাখতে হবে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ কিন্তু যুদ্ধ করতে নামেনি।’’
মিছিল নিয়ন্ত্রণে লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল বলে মনে করছেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তও। তাঁর বক্তব্য, ছাত্র-যুবদের মিছিল নিয়ন্ত্রণে অনেক সংবেদনশীল হতে হবে। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ করা হলে ভিড় দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার পথ রাখতে হবে। পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘মিছিলকারীরা আহত হলে পুলিশেরই তো দায়িত্ব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। তবে মিছিলকারীরাও যে ভাবে পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছেন, তা অনভিপ্রেত।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অনেকের মাথায় আঘাত লেগেছে কেন? নিয়ম অনুযায়ী, লাঠি চালানোর সময়ে পায়ের পিছনে আঘাত করা হয়। তা হলে কি কলকাতা পুলিশের কর্মীদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকছে?’’ এস এন ব্যানার্জি রোডে যেখানে মিছিল আটকানো হয়েছে, সেটাও ভৌগোলিক দিক থেকে যথাযথ নয় বলে মনে করেন পঙ্কজবাবু। এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। হোয়াট্সঅ্যাপ করা হলেও রাত পর্যন্ত উত্তর আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy