Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Corona

COVID-19: বেলাগাম ভিড় কালীঘাটে, নিয়ম ভাঙার রোগ রুখবে কে

মন্দির খোলার কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিধিনিষেধ আদৌ কেউ মানছেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

অমান্য: যে গেট দিয়ে শুধু বেরোনোর কথা, কালীঘাট মন্দিরের সেই চার নম্বর গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য দর্শনার্থীদের হুড়োহুড়ি। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা অথবা জীবাণুনাশের ব্যবস্থা, কিছুই নেই সেখানে। সোমবার।

অমান্য: যে গেট দিয়ে শুধু বেরোনোর কথা, কালীঘাট মন্দিরের সেই চার নম্বর গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য দর্শনার্থীদের হুড়োহুড়ি। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা অথবা জীবাণুনাশের ব্যবস্থা, কিছুই নেই সেখানে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৯
Share: Save:

করোনা কি কলকাতা থেকে বিদায় নিয়েছে?

সপ্তাহের যে কোনও দিন কালীঘাট মন্দিরে গেলে এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতেই সরকারি কড়াকড়ি খানিকটা শিথিল হয়েছে। অভিযোগ, সেই সুযোগে করোনা-বিধি একেবারে শিকেয় তুলে দিয়েছেন ওই মন্দিরের অধিকাংশ দর্শনার্থী। প্রতিদিন থিকথিকে ভিড় দেখা যাচ্ছে সেখানে। দূরত্ব মেনে চলারও কোনও বালাই নেই। এমনকি, মাস্কও পরছেন না তাঁদের অনেকে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার যখন তুঙ্গে ছিল, তখন মাস দেড়েক বন্ধ রাখা হয়েছিল কালীঘাট মন্দির। সংক্রমণের প্রকোপ কমায় গত ২২ জুন ফের খুলে যায় মন্দির, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। সেই সময়ে সেবায়েত কাউন্সিল ও কালী টেম্পল কমিটি জানিয়েছিল, করোনা-বিধি কঠোর ভাবে পালন করা হবে।

কিন্তু মন্দির খোলার কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিধিনিষেধ আদৌ কেউ মানছেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। মন্দির কমিটি নিয়ম করেছিল, দর্শনার্থীরা দু’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। কোনও ভাবেই গর্ভগৃহে প্রবেশ করা যাবে না। মন্দিরে ঢোকার পথে দর্শনার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপা হবে, এমনটাও জানানো হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দু’নম্বর গেটে দর্শনার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপার কোনও ব্যবস্থাই নেই। লাইন দিয়ে যখন তাঁরা ঢুকছেন, তখন পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখারও কোনও চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না কারও মধ্যে।

সেবায়েতদের একাংশের অভিযোগ, দর্শনার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপা বা তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকছে কি না, তা দেখার জন্য কোনও নিরাপত্তাকর্মীকে মোতায়েন করেনি মন্দির কমিটি। সেই কারণেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মন্দিরের অধিকাংশ স্যানিটাইজ়েশন টানেলও বিকল হয়ে গিয়েছে। একমাত্র দু’নম্বর গেটের সামনের একটি টানেল সক্রিয় আছে। কিন্তু সেই টানেল দিয়ে যে তরল ঝরে পড়ছে, তাতে রাসায়নিকের কোনও গন্ধ নেই। ফলে, সেখানে জীবাণুনাশকের বদলে কী ভরা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেবায়েতদের একাংশের দাবি, রাসায়নিক নয়, জল ভরা আছে ওই যন্ত্রে। তাঁদের আরও অভিযোগ, গর্ভগৃহে প্রবেশ আপাতত বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ভোরের দিকে কিছু ‘বিশেষ’ দর্শনার্থী গর্ভগৃহে ঢুকে পড়ছেন।

প্রতিদিন ভোর ৪টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে ওই মন্দিরে মঙ্গলারতি হয়। মূল মন্দিরের দু’নম্বর গেট ও গর্ভগৃহের দরজাও তখনই খোলা হয়। ঘণ্টাখানেকের আরতি শেষে মন্দিরের মূল দরজা ফের বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল ৬টায় সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য দু’নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, প্রতিদিনই ভোরের দিকে কিছু ‘বিশেষ’ দর্শনার্থী আরতির সময়ে গর্ভগৃহে ঢুকছেন সেবায়েতদের একাংশের যোগসাজশে। গর্ভগৃহে সিসি ক্যামেরা না থাকার সুযোগেই এক শ্রেণির সেবায়েত মোটা টাকা প্রণামীর বিনিময়ে এমনটা করছেন বলে অভিযোগ।

শুধু গর্ভগৃহই নয়, চার নম্বর গেটের বাইরেও ‘ভিআইপি দর্শনার্থীদের’ একটি লাইন তৈরি করেছেন সেবায়েত ও পাণ্ডাদের একাংশ। চার নম্বর গেট দিয়ে দর্শনার্থীদের বেরোনোর কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেখানেই এক পাশ দিয়ে ‘ভিআইপি’ দর্শনার্থীরা লম্বা লাইন এড়িয়ে মন্দিরে ঢুকে পড়ছেন। সেখানেও মোটা টাকা প্রণামীর খেলা। আরও অভিযোগ, অনুমতি না-থাকলেও অনেক সময়ে মন্দিরের ছ’নম্বর গেটও খুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই গেট দিয়েও ঢুকে পড়ছেন ‘বিশেষ’ কিছু দর্শনার্থী।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের পরে মন্দির খোলার সময়ে স্যানিটাইজ়েশন টানেলের পাশাপাশি মন্দির চত্বরে স্যানিটাইজ়ারের যন্ত্রও বসানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রায় প্রতিটি যন্ত্রই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সেবায়েতদের একাংশের অভিযোগ, পরিস্থিতি ভয়াবহ। মন্দির কমিটি করোনা প্রতিরোধে কার্যত কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই কালীঘাট মন্দির যে কোনও সময়ে করোনার আঁতুড়ঘরে পরিণত হতে পারে। তৃতীয় ঢেউ এলে পরিস্থিতি কী হবে, সেটা ভেবেই আতঙ্কিত সেবায়েতদের অনেকে।

সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং কালী টেম্পল কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার কার্যত সমস্ত অভিযোগই মেনে নিয়েছেন। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক করা হয়েছে। খুব দ্রুত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করে সব রকম বিধিনিষেধ বলবৎ করা হবে।’’

দীপঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘গর্ভগৃহের দরজা-সহ মন্দিরের বেশ কিছু জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। নিয়ম ভেঙে গর্ভগৃহে কারা ঢুকছেন, ওই ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে যাবে। মন্দিরের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা বিচারকের কাছে জানানো হবে। কারণ, মন্দিরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা জেলা বিচারকেরই অধীনে রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Kalighat Temple Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy