প্রতীকী ছবি
যোগাযোগকারী: “হ্যালো! এটা কি ব্লাড ব্যাঙ্ক? রক্তের প্রয়োজন।”
ফোনের ব্যক্তি: “ব্লাড ব্যাঙ্ক নয়, তবে ব্লাড সার্ভিস প্রোভাইডার। হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং নার্সিংহোমগুলোর সঙ্গে আমাদের চুক্তি করা থাকে। কী দরকার বলুন?”
যোগাযোগকারী: “পরিবারের দু’জন অসুস্থ। ও পজ়িটিভ এবং বি পজ়িটিভ গ্রুপের দু’ইউনিট করে রক্ত চাই।”
ফোনের ব্যক্তি: “চার ইউনিটের দাম ১১ হাজার টাকা পড়ে যাবে!”
যোগাযোগকারী: “এত?”
ফোনের ব্যক্তি: “কোথাও কোনও রক্ত নেই। ক্যাম্পই তো হচ্ছে না। নিজেদের সোর্সে বার করে দেব। আমাদের দাতা গিয়ে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দেওয়ার বদলে যে রক্ত পাবে, সেটাই আপনাকে দেব। দাতারও তো একটা খরচ আছে নাকি?”
যোগাযোগকারী? “কেমন দাতা? ঠিকঠাক রক্ত পাওয়া যাবে তো?”
ফোনের ব্যক্তি: “সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই তো রক্ত তুলব। ভুল রক্ত হলে তালা ঝুলিয়ে দেব। আমি হাওড়া উত্তরপাড়ার রঞ্জন নস্কর। নামটা লিখে রাখুন।”
শহরে কি তবে ফের শুরু হল ‘ব্লাড সেলারের’ রমরমা? গত কয়েক দিনে পাওয়া একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খবর, শহর এবং শহরতলি জুড়ে চলছে এমন একাধিক রক্ত বিক্রির চক্র। যারা দু’ইউনিট রক্তের ‘দাম’ হাঁকছেন কখনও ১২ হাজার, কখনও ১৫ হাজার টাকা। কোথাও আবার রোগীর পরিবারের অবস্থা বুঝে এক ইউনিট রক্তের দর উঠছে ২০ হাজার টাকা!
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি দেশে রক্ত বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য যে কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়ার কথা। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত বাবদ কিছু টাকা নিলেও তা নেয় রক্ত রাখার জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ, দাতার দেওয়া রক্তের পরীক্ষা, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কয়েকটি খাতের খরচ হিসেবে। যা কখনওই বিক্রয়মূল্য নয়। একই নিয়ম প্রযোজ্য বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও।
তা হলে এই চক্র কাজ করছে কী ভাবে? সূত্রের খবর, এমন চক্রের সঙ্গে হাসপাতাল, নার্সিংহোম, এমনকি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির কর্মীদের যোগসাজশ থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য থাকে একটি দল। রক্তের প্রয়োজনে কেউ ফোন করলে তাঁর থেকে রক্তের নমুনা ও রিকুইজ়িশন চেয়ে নেয় তারা। এই চক্রের আর একটি দল কাজ করে দাতা হিসেবে। এরা ওই রিকুইজ়িশন ও রক্তের নমুনা নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে যায়। অন্য গ্রুপের দাতা হলেও রক্ত দিয়েই সেখানে যে কোনও গ্রুপের রক্ত পাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়। এর পরে সেই রক্ত মোটা টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় রোগীর পরিজনকে!
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অচিন্ত্য লাহা বললেন, “টাকার বিনিময়ে যিনি রক্ত দিলেন এবং যিনি তা নিলেন, তাতে উভয়েরই ক্ষতি। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্ট রক্ত বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। অনেকেই রক্তদানকে পেশা বানিয়ে সেই টাকায় নেশা করতেন। সাধারণত, দু’বার রক্তদানের মাঝে যে তিন মাসের ব্যবধান থাকার কথা, তা এঁরা মানতেন না। ফলে দূষিত রক্ত পাওয়ার আশঙ্কা যেমন ছিল, তেমনই রক্ত দিতে দিতে অনেকের মৃত্যুও হত।” আর এক আন্দোলনকারীর দাবি, “এই কারণেই উপহারের বিনিময়ে রক্তদান নিষিদ্ধ। কিন্তু অতিমারির এই কঠিন সময়ে সেটাই আবার ফিরে এসেছে। প্রশাসন কী করছে?”
রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের যুগ্ম অধিকর্তা গোপালচন্দ্র বিশ্বাস যদিও বললেন, “কোনও কোনও পেশাদার রক্তদাতা অসাধু উপায়ে কিছু কাজ করে। তবে আমাদের কাছে অভিযোগ জানালে নিশ্চয়ই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy