ভিড়াক্কার: পুজোর দিনে একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ঢল। ফাইল চিত্র
পুজোর সন্ধ্যায় সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে ঢোকার মুখে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের মধ্যে মশকরা— ‘‘এ বার তো ভিআইপি পাসের রক্ষাকবচ নেই। তাই ভেবেও লাভ নেই। ভিড়ই ভবিতব্য!’’ রাতে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে আবার উল্টো চিত্র। প্রতিমা দর্শনের জন্য শিশুকোলে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সীকে তাঁর স্ত্রী বিরক্ত মুখে বললেন, ‘‘এ বার নাকি কোথাও ভিআইপি পাস হয়নি! ওই তো ভিআইপি ঢুকছে। তুমি ব্যবস্থা করতে পারোনি সেটা বলো!’’
ভিআইপি পাস আছে না নেই— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে পুজোর চার দিন টানা বিভ্রান্তি চলল এ নিয়েই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ প্রতিমা দর্শনে বেড়িয়ে হতাশ হলেন। কারণ দেখলেন, মণ্ডপে ঢোকার লাইনে তাঁরা দাঁড়ালেও ভিড়কে পাশ কাটিয়ে দেদার মণ্ডপে ঢুকছেন ‘ভিআইপি কার্ড’ধারীরা। কেউ আবার হাতে ভিআইপি পাস থাকলেও পুলিশ কেন ঢুকতে দিচ্ছে না, এই বলে তর্ক জুড়লেন মাঝ রাস্তায়। মুদিয়ালি ক্লাবে দর্শনার্থীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠল এক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপে দর্শকদের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি থামাতে আসরে নামতে হল মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। দশমীর রাতে এক পুজোকর্তা বললেন, ‘‘এ বার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ছিল ভিআইপি পাস। পুজোটা যে মিটেছে, সেটা ভেবেই শান্তি!’’
পুজোর আগে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, এ বার কোনও পুজোয় ভিআইপি কার্ড চান না তিনি। এর পরেই শুরু হয়েছিল ভিআইপি কার্ড নিয়ে বিভ্রান্তি। পুজোর চার দিন সেই বিভ্রান্তিই বজায় ছিল বলে অভিযোগ পুজো-জনতার বড় অংশের। দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অগ্রণীতে এ বারও ভিআইপি গেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। তবে সেই পথ দিয়ে ঢুকতে পেরেছেন শুধুমাত্র ‘চেতলা ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি’ লেখা ব্যাজধারীরা এবং কিছু আমন্ত্রিত অতিথি। উদ্যোক্তাদের দাবি, বয়স্কেরাও ওই পথ দিয়েই প্রতিমা দর্শন করতে পেরেছেন। তবে সেখানেই স্নেহা দত্তবণিক নামে এক তরুণী বলছেন, ‘‘আমার ঠাকুরমার বয়স ৭৭। সঙ্গে আমরা আরও আট জন রয়েছি। আমরা ঢুকতে পারব না? ঠাকুমা একা যাবেন কী করে!’’
একই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপে। সেখানে মণ্ডপের সামনের সরু অংশে ভিআইপি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। দর্শনার্থীদের অনেকের প্রশ্ন, ‘‘ভিআইপি নাকি হবে না! তা-ও এই ব্যবস্থা কেন?’’ ত্রিধারার অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমারের অবশ্য দাবি, ‘‘পাড়ার লোক এবং হাতে গোনা কয়েক জনের জন্য ক্লাবের তরফে আমন্ত্রণ জানিয়ে কয়েকটি কার্ড করা হয়েছিল। ওই ক’টা না রাখলে হয় না।’’ একই যুক্তি হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসুর। তিনি বলেন, ‘‘স্পনসর, পাড়ার লোকদের জন্য কিছু ব্যবস্থা তো রাখতেই হয়। ফোরামের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমরা এই সমস্যার কথা বলেছিলাম। তিনি সমস্যাটা বুঝেছিলেন।’’
তাতে অবশ্য পাস নিয়ে বিভ্রান্তি যে কাটেনি, তা বোঝা গিয়েছে মুদিয়ালির মণ্ডপেই। এক দর্শনার্থীকে গালিগালাজ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই ক্লাবের কর্তা মনোজ সাউ বললেন, ‘‘এত ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। কার্ড যাঁদের ছিল না, তাঁরাও ভিআইপি অংশ দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। তাই সামান্য তর্কাতর্কি হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।’’ একডালিয়ার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী সুব্রতবাবু বললেন, ‘‘পাড়ার লোকের জন্য কিছু পাস রেখেছিলাম শুধু। কিন্তু আমাদের মণ্ডপে আসা এক দর্শকের মোবাইল কেড়ে নিয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। তবে ব্যাপারটা বাড়ার আগেই আমি মিটিয়ে দিয়েছি। দর্শনার্থী সকলের আগে।’’
তবে অনেকেরই আক্ষেপ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও পুজো এ বার ভিআইপি-মুক্ত হল কই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy