বেপরোয়া: যাবতীয় বিধি উড়িয়ে ভিড় উপচে পড়েছে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায়। পার্ক স্ট্রিটে। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কে প্রতিষেধক নিয়েছেন আর কে নেননি, তা কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। তাই জমায়েত-ভিড়ে না যাওয়াই ভাল। আজ, বড়দিনের উৎসবের প্রাক্কালে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন নিয়ে এমনই সতর্কবার্তা শোনা গেল নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড জন রবার্টসের মুখে।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ মলিকিউলার বায়োলজিস্ট রিচার্ড বলেছেন, ‘‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে ঠিকই। কিন্তু প্রতিষেধকের পুরো ডোজ় নেওয়ার পরেও ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং তা দ্রুত ছড়াচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে কোভিড-বিধি মেনে চলা এবং ভিড় থেকে দূরে থাকাই ভাল।’’
কোভিড-বিধির ক্ষেত্রে মাস্কের গুণগত মানের উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন ‘স্প্লিট জিন’-এর (এই আবিষ্কারের কারণেই ১৯৯৩ সালে ‘ফিজ়িয়োলজি অর মেডিসিন’ বিভাগে নোবেল পেয়েছিলেন তিনি) আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী। তাঁর মতে, মাস্ক ব্যবহার করাটাই যথেষ্ট নয়। বরং ‘ভাল মান’-এর মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন দূরত্ব-বিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। প্রসঙ্গত, বিশ্ব জুড়েই ওমিক্রনের ক্রমবর্ধমান দাপটে অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। যে কারণে বিদেশে তো বটেই, দেশেরও একাধিক প্রান্তে বড়দিন, নতুন বছরের উৎসব পালনের ক্ষেত্রে কড়া বিধি জারি করা হয়েছে। তার মধ্যেও অবশ্য নিয়ম ভাঙার ধারাবাহিকতা অব্যাহত। সেই কারণেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকের কার্যকারিতার প্রশ্নটি।
ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রতিষেধকগুলি কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মনেও। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা তথা ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ে (সেকেন্ড ওয়েভ) করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই মূলত সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করেছিল। যার ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। তা আটকানোর উদ্দেশ্যেই বর্তমান প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে। অন্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও তা কার্যকর হতে পারে। তবে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে এই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা কতটা, এই মুহূর্তে সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীও বলছেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলার জন্য ওমিক্রন সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য এখনও আমাদের কাছে নেই।’’ তবে একই সঙ্গে রিচার্ড মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে দ্রুততার সঙ্গে করোনার প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, তা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘‘বায়োলজি এবং বায়োটেকনোলজি ক্ষেত্রের গবেষণা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরির ঘটনাতেই প্রমাণিত। তবে এখানে একটি কথা স্পষ্ট ভাবে বলা প্রয়োজন। তা হল, দ্রুত প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে এর নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে মোটেই আপস করা হয়নি। সমস্ত পরীক্ষার পরেই প্রতিষেধক বাজারে আনা হয়েছে।’’ একটু থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে এখনও যে হেতু নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই, তাই ভিড় এড়ানোই ভাল। কারণ, কে প্রতিষেধক নিয়েছেন, আর কে প্রতিষেধক নেননি, তা তো আমরা জানি না!’’
কিন্তু বড়দিন, নতুন বছরের উৎসবের আবহে এই সব সতর্কবার্তা আদৌ মানা হবে তো? প্রশ্ন সেখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy