অসন্তোষের মুখে পড়ে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে কয়েক জন রোগীকে। মঙ্গলবার, এন আর এসে। নিজস্ব চিত্র
রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা হাসপাতালে সারা রাত কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন তাঁরা। ডাক্তার-নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা করে ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও জোর দিয়ে বলেছিলেন তাঁদের অনেকে। কিন্তু যা তাঁরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তা হল, কেন এই ঘটনার জেরে তাঁদের রাতভর এমন হেনস্থার শিকার হতে হবে? কেন ‘বন্দি’ থাকতে হবে হাসপাতালে? কেন জুটবে না প্রয়োজনীয় পরিষেবাটুকুও?
সোমবার সারা রাত হাসপাতালে আটকে থাকা রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের একাংশ তাই মঙ্গলবার সকালে পাল্টা কিছু করে দেখাতে চেয়েছেন। নিজেরাই ইট দিয়ে হাসপাতালের গেটের চেন-তালা ভেঙে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেছেন তাঁদের কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, সন্ধ্যা থেকে গোলমালের জেরে ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’-এর পরে হাসপাতালেই আটকে ছিলেন তাঁরা। রাত বাড়তে জুনিয়র ডাক্তারেরা হাসপাতালের দু’টি মূল গেট আটকে দেন। সন্ধ্যায় যাঁরা রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁরাও সারা রাত ভিতরে আটকে থাকেন। এ দিন সকাল থেকেই তাই তাঁদের সহানুভূতি ক্রমে ক্ষোভের চেহারা নেয়। হাসপাতালের ভিতরে যেখানে রোগীর আত্মীয়েরা অপেক্ষা করেন, সেখানে ত্রিপল চাপা দেওয়ার জন্য পড়ে থাকা ইট কুড়িয়ে নেন পরিজনেরা। তার পরে ওই ইট দিয়ে ইমার্জেন্সির লোহার গেটের চেন-তালা ভেঙে তাঁরা হাসপাতালের বাইরে আসেন। এঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘আমরা তো ডাক্তারবাবুদের সমর্থনেই এগিয়ে এসেছিলাম। তা হলে আমাদের এত ভোগান্তি হল কেন?’’
এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ দেখা যায়, বহরমপুর থেকে আসা এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের মূল প্রবেশপথের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। বহরমপুরের ওই বাসিন্দা রেবতী সাহার স্ট্রোক হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সে শোয়া বছর পঁয়তাল্লিশের রেবতীদেবীর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। হাসপাতালের বাইরে দীর্ঘক্ষণ অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে ধৈর্য হারান তাঁর ভাইপো বুদ্ধদেব সাহা। প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘পিসির যদি মৃত্যু হয়, তবে এই হাসপাতালের সামনেই হোক।’’ এই বলে তিনি স্ট্রেচারে শোয়ানো রেবতীদেবীকে হাসপাতালের গেটের সামনেই নামিয়ে দিতে যান। তা দেখে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন আন্দোলনকারীরা। রেবতীদেবীকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়। তবে ডাক্তারদের একাংশকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভিতরে নিয়ে গেলে কী হবে? পরিষেবা তো পাবে না।’’ পরে বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘সত্যিই কোনও চিকিৎসা পায়নি পিসি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও কোনও লাভ হয়নি।’’
এমনই দৃশ্য এ দিন একাধিক বার চোখে পড়েছে এন আর এসের সামনে। বুকে ব্যথা নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে শুয়ে ছটফট করছিলেন ৭২ বছরের বৃদ্ধা শান্তি চৌধুরী। জল চাইছিলেন। বহরমপুর থেকে আসা রেবতীদেবীর অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনেই আটকে ছিল শান্তিদেবীর অ্যাম্বুল্যান্স। মাকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেও কিছু করে উঠতে পারছিলেন না তাঁর ছেলে অমরনাথবাবু। রবিবার রাতে সোমা প্রামাণিক নামে এক মহিলার প্রসব হয়েছিল। তাঁর পরিজনেরা হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন যে, শিশুটিকে তাঁরা দেখতেও পাচ্ছেন না। কিন্তু বলেও লাভ হয়নি।
বসিরহাটের বাসিন্দা এক ক্যানসার রোগীকে এ দিন হাসপাতাল থেকে সন্ধ্যায় ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য বেশ কয়েক জন রোগী সকাল থেকে কোনও পরিষেবা পাচ্ছিলেন না বলে তাঁদের পরিজনেরা এই রোগীকে স্ট্রেচারে করে শিয়ালদহ উড়ালপুলের মুখে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে অবরোধ শুরু করে দেন। যোগ দেন আরও কিছু রোগীর পরিবারের লোকজন, যাঁরা এ দিন কোনও পরিষেবা পাননি। ঘটনাস্থলে থাকা ডিসি (এসইডি) দেবস্মিতা চক্রবর্তী ও বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে অবরোধ তোলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy