—ফাইল চিত্র।
বাঁক কাঁধে পুণ্যার্থীদের মুখেও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’! কিংবা একযোগে প্রতিবাদে শরিক শহরের জিমতুতো ফিটনেস-পাগলেরা। অভূতপূর্ব সব দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে।
উত্তর কলকাতায় জ্যোতিষী, পুরোহিতেরা মিছিল ডেকেছিলেন। দক্ষিণে সমাজমাধ্যমের ‘কনটেন্ট নির্মাতা’ তথা ইউটিউবার, ফুড ভ্লগারদেরও আলাদা মিছিল। পার্কের প্রাতর্ভ্রমণকারী থেকে নামী, অনামী স্কুল, কলেজের প্রাক্তনীরাও মিছিলের সংগঠক বা কর্মকর্তার ভূমিকায়।
শুরুটা হয়েছিল মেয়েদের তরফে সামাজিক ছক-ভাঙা এক নৈশ প্রতিবাদের ডাকে। একসঙ্গে অনেকগুলি জায়গায় মিছিলেও প্রতিবাদের বারুদ নেতিয়ে পড়েনি। তার বদলে আজও জারি রয়েছে প্রতিবাদী অগ্নিশিখার বিচিত্র প্রকাশ।
প্রতিবাদের সূত্রে কয়েকটি অপ্রিয় প্রশ্নও অবশ্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সমাজমাধ্যমে রিল বা ভিডিয়ো নির্মাতাদের দিকে আঙুল উঠছে, প্রতিবাদ না-করে শুধু খাবার বা কেনাকাটির ছবি দিলে কি তাঁরা ‘ফলোয়ার’ কমার ভয় পাচ্ছেন? কোনও জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকার প্রতিবাদ দেখেও জল্পনা, নতুন ছবির মুক্তির ব্যাপার না-থাকলে মোটেও প্রতিবাদের নামগন্ধ করতেন না। সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়, গুরুগ্রামের বাঙালি রন্ধন বিশারদ শমিতা হালদার আর জি করের ঘটনা নিয়েও যথেষ্ট সরব। তিনি বলছেন, ‘‘যাঁরা উপার্জনের জন্য শুধুই সমাজমাধ্যমের উপরে নির্ভরশীল, তাঁদের মধ্যে কিছু আশঙ্কা তো থাকবেই। তবে আন্তরিক প্রতিবাদের প্রবণতাই বেশি। সৎ প্রতিবাদটুকু মানুষ চিনতেও পারে।’’
প্রতিবাদের চরিত্রে এই রদবদলে কিন্তু এক ধরনের সামাজিক বদলের চিহ্নও স্পষ্ট। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী নিশ্চিত, ‘‘রাজনৈতিক দল-নির্ভর প্রতিবাদ বা আন্দোলনে মানুষের এখন চরম ক্লান্তি। তাই অনেকেই নতুন নতুন পরিচয়ে প্রতিবাদ করছেন, মুক্তির স্বাদ পাচ্ছেন।’’ তবে কোনও রাজনৈতিক দল এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে বলেও উপল মনে করেন। যেমন আজ, মঙ্গলবার, বাংলার ছাত্রসমাজের ডাকে নবান্ন-অভিযানটির পিছনে গেরুয়া-শিবিরের উপস্থিতির কথা উঠে আসছে।
ডায়মন্ড হারবার উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের শিক্ষিকা অনিন্দিতা ঘোষালের কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মতো রাতারাতি বিরাট রাজনৈতিক বদল না-আনলেও এই প্রতিবাদেরও রাজনৈতিক গুরুত্ব খুবই। ভবিষ্যতেও এর প্রভাব থাকবে।’’ তাঁর মতে, ভারতের মতো বড় দেশে সর্বাত্মক আন্দোলন সহজে না-ঘটলেও এই আন্দোলনে ছোট ছোট গোষ্ঠীর পথে নামাটা শাসকের জন্য দুশ্চিন্তার। ধর্ষণ বা ওই ধরনের ঘটনায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্য রাজ্যের সরকারও এর পরে দুশ্চিন্তায় পড়বে।
সব কিছুই সমাজমাধ্যমে জাহির করার দিনে অনেকেই প্রতিবাদকে সন্দেহের চোখে দেখেন। কোনও কোনও প্রতিবাদী-মিছিলে নিজস্বী-হিড়িক নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। তবে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্ত রায় বলছেন, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমিত্ব এলেও সেটা ভালই বলব। আত্মপ্রচারটা বিক্ষিপ্তই।’’
রাস্তায় জল ঠেলে, বৃষ্টি মাথায় বধির, দৃষ্টিহীন বা হুইলচেয়ারে আসীন প্রতিবাদীদের দেখে অনেকেরই এই আকালে স্বপ্ন দেখারই ইচ্ছে হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষাকর্মী শম্পা সেনগুপ্ত মনে করাচ্ছেন, ‘‘প্রতিবন্ধীরা সবার পাশে থাকলেও অনেক সময়েই কোনও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় তথাকথিত সুস্থ, সবল নাগরিকদের সাড়া মেলে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ একটি মিছিলে পশুপ্রেমীরা আবার আর জি কর-কাণ্ডের পাশাপাশি গর্ভিনী হাতি মায়ের হত্যার ঘটনাটিরও প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের এক জন বলছেন, ‘‘চারপাশে প্রতিবাদের মেজাজ ছিল বলেই হয়তো আমাদের অন্য দুঃখের কথাগুলিও অনেকের কানে পৌঁছল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy