বন্ধুর: হাওড়ার শালিমার এলাকার রাস্তা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বড় বড় গর্ত, ধুলোয় ভরা ভাঙা রাস্তা। প্লাস্টিক ও অন্য আবর্জনা পড়ে রুদ্ধ হয়ে যাওয়া নর্দমা ও নিকাশি খাল। এক ঝলকে এটাই হাওড়ার শালিমারের চেহারা।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা এলাকায় বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অথচ পুর পরিষেবা অপ্রতুল। এলাকায় এখনও নেই পুরসভার পানীয় জলের লাইন। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৈরি সাব-মার্সিবল কিছু পাম্প থেকে জল মেলে দিনে দু’বার। সেই জল নিতে মারামারি পড়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওড়ার দক্ষিণ প্রান্তে গঙ্গার ধার বরাবর এই এলাকায় উন্নয়ন থমকে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ আর ব্যক্তি মালিকানার ত্রিমুখী ফাঁসে শালিমার এলাকা কার্যত অনাথ। পানীয় জল আর আলোর অভাব নিয়ে বারবার বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অথচ শালিমারেই রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ রেল ইয়ার্ড ও রেল স্টেশন। রয়েছে একটি ট্রাক টার্মিনাস। রোজ কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হয় এই এলাকা থেকে। রেল ইয়ার্ড, স্টেশন, এবং ট্রাক টার্মিনাস ঘিরে নানা কারখানা, গুদাম গড়ে ওঠায় এক সময়ে এলাকায় এসেছিলেন ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা। রাস্তার দু’পাশে কলকাতা বন্দর কতৃর্পক্ষের জমিতে ঘর-বাড়ি বানিয়ে বংশ পরম্পরায় তাঁরা রয়ে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করেন প্রায় আট হাজার মানুষ। এর মধ্যে সাত হাজারেরও বেশি বাসিন্দা দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার। এলাকার এক পুরনো বাসিন্দা রঞ্জিত চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘ভোটের সময়ে সকলেই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এই এলাকার অবস্থা ৩০ বছর আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে।’’
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ জানান, শালিমারের অবস্থা নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে সেখানে একটি দল পাঠানো হবে। কী কী সমস্যা রয়েছে, তার রিপোর্ট পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুর কমিশনার। শালিমারের দু’নম্বর গেট থেকে শুরু করে বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান ফটক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা শালিমারের প্রধান রাস্তা লোয়ার ফোরশোর রোড ও শালিমার রোড।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের শালিমার স্টেশনকে গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলতে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার নির্মাণকাজ চলছে বর্তমানে। মাথা তুলছে বেশ কিছু বহুতলও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সুযোগে রমরমা বেড়েছে এক শ্রেণির দুষ্কৃতীদের। নিউ টাউনের ধাঁচে প্রোমোটিং থেকে শুরু করে ইমারতি জিনিস সরবরাহের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এলাকায়। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শালিমারে রয়েছেন অনির্বংশ পট্টনায়ক। তিনি বলেন, ‘‘এত বছরে এই এলাকার কোনও উন্নয়নই হয়নি। প্রশাসন এ দিকে তাকায় না। রাত হলেই গোটা এলাকা চলে যায় মদ্যপ কিছু দুষ্কৃতীদের হাতে।’’
নিজের বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ বলেন, ‘‘এখানে মুখ খুললে বিপদ। শাসকদলের সাহায্য নিয়ে এখানে দুষ্কৃতী-রাজ চলছে। জোর যার মুলুক তার।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেও ট্রাক টার্মিনাসের দখল নিয়ে শালিমারে গোলমাল, খুন-জখম লেগেই থাকত। দু’টি পরিবহণ সংস্থার গোলমালে এক দিনে ১১টি ট্রাক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সিন্ডিকেটের ব্যবসা ঘিরে শুরু হয়েছে গোলাগুলির লড়াই। তার জেরে ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ পড়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের। তবে হাওড়ার ডিসি (সাউথ) স্বাতী ভাঙালিয়া বলেন, ‘‘গুলি চালানোর ঘটনায় এক জনকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। এলাকায় কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy