Advertisement
E-Paper

রোগ-জর্জর পুর পরিষেবায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা

বেআইনি নির্মাণে বেহাল দশা নিকাশির। পানীয় জল বা রাস্তা, দৈন্যের ছাপ সর্বত্র। এরই মধ্যে ভোট রাজপুর-সোনারপুরে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৮
বোড়ালের রক্ষিতের মোড় থেকে নতুন হাট পর্যন্ত রাস্তার এমনই বেহাল দশা।

বোড়ালের রক্ষিতের মোড় থেকে নতুন হাট পর্যন্ত রাস্তার এমনই বেহাল দশা। নিজস্ব চিত্র।

খাল সংস্কার হয়েছে। কিন্তু জল জমার সমস্যা কমেনি। কারণ, বেআইনি নির্মাণের জেরে বিভিন্ন
এলাকার নিকাশি নালা অবরুদ্ধ। তাই বৃষ্টির জমা জল সেই খালে গিয়ে পড়তে পারে না।

বছর চারেক আগে সেচ দফতর টালি নালা, রানিয়া, খুঁড়িগাছি ও দাঁতপুর খালের সংস্কার করেছিল। তা সত্ত্বেও একটু ভারী বৃষ্টিতেই রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় হাঁটুজল জমে যায়। পুরসভা পাম্প চালালেও জল এলাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খাল সংস্কার হলেও এলাকার নিকাশি নালাগুলি প্রায় অবরুদ্ধ। কারণ,
নালা ও পুকুর বুজিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। অবস্থা এমনই যে, টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই অধিকাংশ রাস্তা জলের নীচে চলে যায়। গত বর্ষায় একটু বেশি বৃষ্টি হওয়ায় এক-এক জায়গায় মাস দুয়েক জল জমে ছিল। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের রানিয়ার ঠনঠনিয়া এলাকার এক গৃহবধূ বললেন, ‘‘গত বর্ষায় এখানে সাত দিন ধরে ঘরের ভিতরে হাঁটুজল ছিল। পাশের এলাকা জনতামাঠে তো অনেক বাড়িতে মাসখানেক ধরে কোমর সমান জল ছিল।’’

বৃষ্টির নামেই তাই আতঙ্কে ভোগেন গড়িয়ার সারদাপল্লি, অবন্তীপুর, নবগ্রাম, কন্দর্পপুর, তেঁতুলবেড়িয়া অথবা সোনারপুরের কামরাবাদ, মিশনপল্লি, বৈকুণ্ঠপুর, খিরিশতলা, নতুনপল্লি, সুভাষগ্রাম, হরিনাভি, রানিয়া ও বোড়ালের বাসিন্দারা। এক দিনের বৃষ্টিতেই জ‌ল জমে যায়। পরপর ক’দিন বৃষ্টি হলে তো বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পাম্প নিয়েও অভিযোগ বিস্তর। বাসিন্দাদের দাবি, কাউন্সিলরেরাই বেনামে পুরসভাকে পাম্প ভাড়া দেন। পাম্প চালানোর ক্ষেত্রেও কারচুপি চলে বলে অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভার কাছে রিপোর্ট যায় পাম্প চালানো হচ্ছে বলে। কিন্তু কার্যত দেখা যায়, অধিকাংশ সময়ে পাম্প চালানো হচ্ছে না। অথচ, পাম্পের ভাড়া বাবদ পুরসভার মোটা টাকা খরচ হয়।

সমস্যা রয়েছে পানীয় জল নিয়েও। ওই এলাকায় নলকূপের জলে আর্সেনিক রয়েছে বিপজ্জনক মাত্রায়। তাই পুরসভার জলই ভরসা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনে দু’বার পাইপলাইনের জল এলেও চাপ খুব কম। বাড়িতে বাড়িতে দেওয়া জলের সংযোগেও একই সমস্যা। শহর লাগোয়া হওয়ায় রাজপুর-সোনারপুরে প্রচুর বহুতল আবাসন গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, ওই সমস্ত আবাসন পাম্প চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ায় এলাকার জলস্তর নেমে যাচ্ছে।

অভিযোগ আছে রাস্তা নিয়েও। বহু দিন সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ রাস্তাই গর্তে ভরা। নির্বাচনের আগে পিচের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের বক্তব্য, এক দিনের টানা বৃষ্টিতেই ওই প্রলেপ সাফ হয়ে যাবে। বোড়ালের রক্ষিতের মোড় থেকে নতুনহাট পর্যন্ত ছ’কিলোমিটার রাস্তার দশা ভয়াবহ। আশপাশের পাঁচ-ছ’টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সেটাই একমাত্র পথ। ন’নম্বর ওয়ার্ডের কামরাবাদের নেতাজিপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার একমাত্র রাস্তার পাঁচ বছরে সংস্কার হয়নি। হাঁটতে গেলেও প্রতি পদে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা।

পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘এলাকার অনেক অংশ নিচু। তাই পাম্প চালিয়ে বৃষ্টির জমা জল খালপথে ফেলতে সময় লাগে। করোনার জন্য গত দু’বছরে পরিকাঠামোগত কাজ ভাল ভাবে হয়নি। এখন নিকাশি, রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে ধাপে ধাপে এগোনো হচ্ছে।’’

পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘১৩ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি আর কাটমানি। পরিষেবা তাই শিকেয়।’’

এলাকার বিজেপি নেতা সুনীপ দাস বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিতে পারে না। ভোট এখন শাসকের হাতের মুঠোয়। তাই ওরা পরিষেবা নিয়ে ভাবে না।’’

Sonarpur Rajpur Sonarpur West Bengal Municipal Election 2022
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy