রং মেখে ফেরার পথে কলেজ স্ট্রিট মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা, মাস্কহীন এক তরুণীর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘মুখে তো রং মেখেইছি, মাস্কও রঙিন হয়ে গিয়েছে। তাই খুলে রেখেছি। যা কিছু করোনার নিয়ম আবার দোলের পরে মানব।’’
দোল উৎসব উজ্জাপন। ছবি ছবি: বিকাশ মশান।
বিধান সরণির একটি কলেজের এক ফালি উঠোনে গাদাগাদি ভিড়। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই তো নেই-ই, সেই সঙ্গে সকলের মুখই মাস্কহীন। সেখানে মাঝেমধ্যেই উড়ছে আবির, তারস্বরে বাজছে সাউন্ড বক্স। এক জনকে জাপটে ধরে কয়েক জন মিলে রং মাখানোও চলছে পুরোদমে। চার দিক থেকে ঘিরে ধরা দলবলের উদ্দেশে এমনই এক পড়ুয়ার মন্তব্য, ‘‘আরে মাস্কটা তো খুলতে দে। মাস্ক পরে কি রং খেলা যায়!’’
আশঙ্কা সত্যি করে দোলের আগের দিন, বৃহস্পতিবার থেকেই বেপরোয়া রং খেলায় মাতলেন এ শহরের অনেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বটেই, বাদ গেল না অফিস বা আবাসনগুলিও। রং খেলার নামে পাড়ায় পাড়ায় সাউন্ড বক্সের তাণ্ডবও ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর গড়িয়ে সেই আওয়াজ স্থানীয় বাসিন্দাদের রাতের ঘুমও কেড়েছে বলে অভিযোগ। মানিকতলা মেন রোডে এমনই একটি পাড়ার আয়োজনে দেখা গেল, এ দিন দুপুর থেকেই চলছে দেদার রং খেলা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, কিছু দিন আগেই করোনার সংক্রমণের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই লড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেউ নাচতে নাচতে মাটিতে শুয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ভুলে জোর করে একে অপরের চোখে-মুখে রং মাখাতে ব্যস্ত। শোভাবাজার এবং দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ের কলেজে আবার দোল উৎসবের মধ্যে ‘ডিজে’র আয়োজন করা হয়েছিল। প্রশ্ন করে জানা গেল, ওই দুই কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন কোনও উৎসবের আয়োজনের কথা জানেনই না! দুপুরের পরে সেখানে চটুল গানের সঙ্গে নাচ, রং খেলা এবং খানাপিনাও চলেছে বলে অভিযোগ। একই রকম পরিস্থিতি শিয়ালদহের একটি কলেজে। তবে পুরনো বিতর্কের জেরে এ বার আর আলাদা করে দোল উৎসবের আয়োজন করেননি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার এ দিন থেকেই স্কুল-কলেজের দোল উৎসবকে রীতিমতো টেক্কা দিতে শুরু করেছে শহরের আবাসনগুলি। ই এম বাইপাসের ধারের একটি আবাসনে সংক্রমণের কারণে গত দু’বছর দোল খেলা নিষিদ্ধ ছিল। এ বছর নিষেধাজ্ঞার বালাই না থাকায় সকাল থেকে বেলুন-পিচকারি নিয়ে নেমে পড়েন আবাসিকেরা। আজ, শুক্রবার থাকছে প্রভাতফেরি-সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন। মুকুন্দপুরের একটি আবাসনে রং খেলার আলাদা জায়গার বন্দোবস্ত করা হলেও এ দিন সেখানে নিয়মবিধি মানার বালাই চোখে পড়েনি। পাটুলি, যাদবপুর, বালিগঞ্জ, গড়িয়া-সহ একাধিক জায়গায় পুলিশের তরফে সরকারি নিয়মবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার চালানো হলেও আদতে কোথাওই সে সব মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বাগমারি রোডের একটি আবাসনে কয়েক জনের রং খেলা দেখে সেখানকার এক আবাসিকের প্রশ্ন, ‘‘এ দিনই এই অবস্থা হলে শুক্রবার থেকে কী হবে?’’
রং খেলার হিড়িক চোখে পড়েছে ময়দান, বাবুঘাটের মতো একাধিক জায়গাতেও। সে সব সামলাতে গিয়ে নাজেহাল এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘দু’বছর ধরে রং খেলতে না পারার প্রতিশোধ যেন একবারে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। নিয়মবিধি মানার কোনও বালাই নেই। নিয়ম বোঝাতে বোঝাতেই আমরা হাঁপিয়ে যাচ্ছি।’’
রং খেলতে গিয়ে এই নিয়মভঙ্গ নিয়েই চিন্তায় চিকিৎসকদের বড় অংশ। চিকিৎসক কুণাল সরকার বললেন, ‘‘করোনা কৃপা করে চরিত্র পাল্টেছে বলে কিছুটা নিশ্চিন্তে আছি। দিনকয়েকের মধ্যে ফের চরিত্র পাল্টে করোনা ভয়াবহ কোনও আকার নিলে আক্ষেপের সীমা থাকবে না। তাই এই মুহূর্তে যতটা সতর্ক থাকা যায়, ততই ভাল।’’ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর মন্তব্য, ‘‘করোনা কিন্তু রয়েছে। তাকে নতুন করে ডালপালা মেলার সুযোগ না দেওয়াই ভাল। তা ছাড়া, আমার বেলাগাম উৎসব যাপন যেন অন্যের দুঃখের কারণ না হয়, সেটাও তো দেখা দরকার!’’ চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বললেন, ‘‘যে কোনও উৎসবে এটা মনে রাখতে হবে, আমরা যতটা বেলাগাম হব, নিজেদের পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকিও ততই বাড়াব।’’
রং মেখে ফেরার পথে কলেজ স্ট্রিট মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা, মাস্কহীন এক তরুণীর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘মুখে তো রং মেখেইছি, মাস্কও রঙিন হয়ে গিয়েছে। তাই খুলে রেখেছি। যা কিছু করোনার নিয়ম আবার দোলের পরে মানব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy