ফেরা: মা রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে আহত সফি আলম। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
মুখ সম্পূর্ণ ঝলসে গিয়েছে। ব্যান্ডেজ করা। ঠোঁট নাড়ানোর অবস্থাও নেই। তার মধ্যেই হাসপাতালে শোয়া, বছর আটচল্লিশের মহম্মদ শাহিদ ইশারায় কাছে ডেকে নিলেন মেয়ে ফতিমাকে। বাবার মুখের কাছে মেয়ে কান নিয়ে যেতেই জড়ানো গলায় শাহিদ বললেন, ‘‘ইদ মুবারক। চিন্তা নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে দরজার দিকে ছুটল কিশোরী ফতিমা।
বছর পনেরোর ফতিমাদের বাড়িতে ভাল কিছু রান্না হয়নি। নতুন পোশাকও পরা হয়নি। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়াও হয়নি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে বিছানায় কেটেছে তার। সেই দশ ফুট বাই চোদ্দো ফুটের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফতিমা শনিবার বলল, ‘‘বাবা ওই ভাবে হাসপাতালে পড়ে আছেন, এই অবস্থায় কিছু ভাল লাগে! আমরা ইদের আনন্দ করব বাবা ভাল হয়ে ফিরলে।’’
গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগে গার্ডেনরিচের বিচালিঘাট রোডের একটি চারতলা বাড়িতে। ফেটে যায় গ্যাস সিলিন্ডার। কেঁপে ওঠে এলাকা। ২২ জনকে এসএসকেএমে ভর্তি করাতে হয়। তাঁদেরই এক জন ফতিমার বাবা শাহিদ। বিস্ফোরণস্থলের কাছেই তাঁর বিরিয়ানির দোকান। আগুন দেখে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিলিন্ডার ফাটায় ঝলসে যায় তাঁর মুখ।
বিচালিঘাট রোডের ওই পাড়া জুড়ে এ দিনও থমথমে ভাব। বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটেনি। আরও এক আহত, বছর আটচল্লিশের আব্দুল আজ়িমের ঘর বিচালিঘাট রোডের কাছেই কসাই বস্তিতে। গলি, তস্য গলি পেরিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, আজ়িমের স্ত্রী ও ছেলে এসএসকেএমে পড়ে আছেন সকাল থেকেই। আজ়িমের এক ছেলে মহম্মদ ফাহিম বললেন, ‘‘বড়দা মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। বাড়িতে আমি আর বোন আছি। ডাক্তার বলেছেন, বাবার ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।’’
আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিচালিঘাট রোডের ওই দুর্ঘটনায় আহত সুরেশ সিংহ, আসগর আলি, মহম্মদ শেকুর পরিজনেরা। কেউ হাসপাতাল থেকে ফিরলেই তাঁর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন আসগরের ভাই আকবর আলি। শেকুর বাড়িতে চলে এসেছেন তাঁর তিন দিদি এবং জামাইবাবু। স্ত্রী শবনম জ়ারিন বা মা সায়েদা বানু কথা বলার অবস্থা নেই। চুপ করে বসে শেকুর বছর এগারোর ছেলে মহম্মদ আজ়মির। শেকুর দিদি সালমা বানু বললেন, ‘‘ডাক্তারেরা বলেছেন, ভাইয়ের ৬৭ শতাংশ পুড়েছে। জানি না, কী হবে! আজই ওর জন্মদিন। ইদে জন্মদিন পড়ায় খুব আনন্দে ছিল। এখন সে-ই হাসপাতালে!’’
তবে, খুশির খবর সফি আলম নামে বছর তেইশের তরুণের বাড়িতে। তাঁরও শরীরের কিছু অংশ পুড়েছে। জ্বলে গিয়েছে চুলও। তবে, শুক্রবারই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। ছেলের পোড়া অংশ দেখিয়ে সফির মা রাজিয়া খাতুন বললেন, ‘‘এই অবস্থায় বেরোবে না। তবে, ইদে ছেলে বাড়িতে আছে, এটাই আনন্দের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy