Advertisement
E-Paper

আর্সেনিক থেকে বাঁচতে ভরসা বোতলের বিষ-জল

শুধু তা-ই নয়, পানীয় জল তৈরির যে কোনও কারখানায় এক জন মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং একটি পরীক্ষাগার থাকাটা বাধ্যতামূলক।

দেগঙ্গায় এ ভাবেই কারখানা থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে ‘পানীয়’ জল। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দেগঙ্গায় এ ভাবেই কারখানা থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে ‘পানীয়’ জল। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০২:২৪
Share
Save

কারখানায় ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ জল তুলতে হলে অনুমতি নিতে হয় বিডিও অথবা জেলাশাসকের কাছ থেকে। সেই জল পাত্রে ভরে বাজারে বিক্রি করতে গেলে চাই ‘বুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস’-এর ছাড়পত্র। যার জন্য সরকারকে বছরে দেড় লক্ষ টাকা করও দেওয়ার কথা কারখানা মালিকের।

শুধু তা-ই নয়, পানীয় জল তৈরির যে কোনও কারখানায় এক জন মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং একটি পরীক্ষাগার থাকাটা বাধ্যতামূলক। মাটির নীচ থেকে তোলা জলের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে জীবাণু বা রাসায়নিক আছে কি না, সেই তথ্যও রাখার কথা। তিন থেকে ছ’মাস অন্তর সেই রিপোর্ট সরকারি দফতরে পাঠিয়ে তবে কারখানার লাইসেন্সের নবীকরণ করাতে হয়। বলাই বাহুল্য, এই সমস্ত নিয়মের কোনওটিই মানে না জল বোতলবন্দি করার কারখানাগুলি।

উত্তর ২৪ পরগনার সব চেয়ে বেশি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা দেগঙ্গা ব্লক। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহের অধিকাংশ কলই খারাপ। তা ছাড়া, দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পলতা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ চালু হয়নি। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই শ’খানেক কারখানা পঞ্চায়েত থেকে সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে মার্শাল পাম্প লাগিয়ে মাটির নীচ থেকে দেদার জল তুলছে। তার পরে তা বোতলে বা জারে ভরে বিক্রি করছে।

দেগঙ্গা ব্লকের পূর্ত আধিকারিক নারায়ণ ঘড়াইয়ের অভিযোগ, ‘‘সরকারি ভাবে গভীর নলকূপ বসাতে গেলেও আগে প্রকল্পের রূপরেখা জমা দিতে হয়। অনুমোদন মিললে তবেই তা বসানো যায়। কিন্তু ওই সমস্ত জল কারখানা অনুমোদন চেয়ে আমাদের দফতরে কোনও আবেদন করে না। বিনা অনুমতিতেই চলছে ব্যবসা।’’

বারাসত-টাকি রোডের ধারে দেগঙ্গা থানার সামনেই একটি কারখানায় দেখা গেল, গ্যালন গ্যালন জল মাটির নীচ থেকে তুলে জারে ভরে ভ্যানরিকশায় চাপিয়ে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রদীপ গোলদার নামে কারখানার এক কর্মী জানান, পঞ্চায়েত থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন তাঁরা। তবে আর কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের সচিব সুষেণ পালিত বললেন, ‘‘২০১৯ সাল থেকে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া চালু হয়েছে। কিন্তু পানীয় জল কারখানার কোনও লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।’’

তা হলে সকলের চোখের সামনে কী ভাবে চলছে কারখানা? কেনই বা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় পঞ্চায়েত কিংবা প্রশাসন? দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিন্টু সাহাজির বক্তব্য, ‘‘আমাদের ব্লকে এমন ক’টি জল কারখানা আছে, তার খোঁজ করতে বলা হয়েছে। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জেলার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব সরকারের কথায়, ‘‘অনুমোদন ছাড়া ভূগর্ভের জল তোলার নিয়মই নেই। অবৈজ্ঞানিক ভাবে কারখানাগুলি জল তোলায় প্রতিটি ব্লকে জলস্তর নেমে যাচ্ছে। জলে নানা রকম রাসায়নিক পাওয়া যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অন্য দিকে, কারখানাগুলি পরীক্ষা না করেই যে জল বিক্রি করছে, তা আদৌ পানের যোগ্য কি না, বোঝা যাচ্ছে না।’’ অবৈধ জল কারখানার বিষয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে কোথায় কোথায় এ রকম জল কারখানা চলছে, তার খোঁজ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অবৈধ কারখানার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত জল কারখানাগুলিও। বেলিয়াঘাটার একটি কারখানার মালিক উমেশ সাউয়ের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি জল কারখানাগুলি মুনাফা লুটতে নিয়ম-নীতির ধার ধারে না। জল তুলে পরিশোধন না করেই বিক্রি করছে। মানুষ সেই জলই পান করছেন।’’

কারখানার অপরিশোধিত জল খেয়ে ভুগতে হচ্ছে বারাসতের ন’পাড়ার সুভোন দাসের পরিবারের মতো অনেককেই। জলবাহিত রোগ বাড়ছে দেখে কারখানার জল কিনে খেতেন সুভোনেরা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি, দিদি, জামাইবাবু— সকলেই হেপাটাইটিসে ভুগছি। ডাক্তার জানিয়েছেন, জল থেকেই ওই রোগ হয়েছে। এলাকার জলে আর্সেনিক। তাই জীবন বাঁচাতে পয়সা দিয়ে কারখানা থেকে জল কিনে খাচ্ছিলাম। কিন্তু সেই জলেও যদি এ রকম বিষ থাকে, তা হলে কোন জল খাব?’’

Packaged Water Deganga Arsenic

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।