Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Fraud Case

আঙুলের ছাপেও প্রতারণার ফাঁদ, দরকার সতর্কতা

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই মহিলা দাবি করেছেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যে সিম কার্ডের কথা নোটিসেউল্লেখ করেছে, সেই নম্বরটি আদৌ তাঁর নয়।

A Photograph representing scams through mobile phones

আঙুলের ছাপ ব্যবহারকরে প্রতারণার ঘটনা এখন বেশি ঘটছে। প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৫
Share: Save:

ঘটনা ১: কয়েক বছর আগের কথা। ভবানীপুরের বাসিন্দা এক বয়স্কা মহিলার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছিল রাজস্থান পুলিশ। কারণ জানতে চাওয়ায় ওই প্রৌঢ়াকে পুলিশ আধিকারিক বলেছিলেন, তাঁর মোবাইলের সিম কার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতি হয়েছে। শুনে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল মহিলার। তাঁর দাবি, যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটি আদৌ তাঁর নয়। কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন প্রৌঢ়া। তদন্তে জানা যায়, তাঁর দাবিই সত্যি।

ঘটনা ২: মাস দেড়েক আগে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকারবাসিন্দা এক মহিলার কাছে পুলিশের সমন আসে। সমন পেয়ে তিনিজানতে পারেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তে তাঁকে হাজিরা দেওয়ার নোটিস পাঠিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ওই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর মোবাইলের সিম কার্ড ব্যবহার করে আর্থিক জালিয়াতি হয়েছে।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই মহিলা দাবি করেছেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যে সিম কার্ডের কথা নোটিসেউল্লেখ করেছে, সেই নম্বরটি আদৌ তাঁর নয়। তিনি আরও জানান,কয়েক মাস আগে তিনি তাঁর মোবাইল নম্বরটি ‘পোর্ট’ করিয়েছিলেন। সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট আউটলেটে একাধিক বার তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। মহিলার সন্দেহ, সেই আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে তোলা হয়েছিল অন্য একটি সিম কার্ড। যেটি ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানো হয়েছিল। পুলিশ অভিযোগেরতদন্ত করছে।

ভবানীপুরের বাসিন্দা প্রৌঢ়াও পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, সিম কার্ড নেওয়ার সময়ে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার আউটলেটে একাধিক বার তাঁর আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) নেওয়া হয়েছিল। তাঁর অনুমান, দ্বিতীয় বার নেওয়া আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে সিম কার্ড তুলেছিলেন কোনও এক ব্যক্তি। যা ব্যবহার করে সংঘটিত হয়েছিল আর্থিক অপরাধ।

পুলিশ এবং সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আঙুলের ছাপ ব্যবহারকরে প্রতারণার ঘটনা এখন বেশি ঘটছে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি। সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যেই এই ধরনের ঘটনা এখন ঘটছে। ভবানীপুর এবং চ্যাটার্জিহাটের দুই বাসিন্দাই একাধিক বারআঙুলের ছাপ দিয়েছিলেন। প্রথম বার ছাপ দেওয়ার পরে তাঁদের বলা হয়েছিল, ছাপ ঠিক মতো ওঠেনি। তাই আবার দিতে হবে। দ্বিতীয় বার আঙুলের ছাপ দেওয়াই ভুল হয়েছিল তাঁদের। তাই এ সব ক্ষেত্রে সতর্কথাকা দরকার।’’

বিভাস জানান, দুই ব্যক্তির আঙুলের ছাপ কখনওই এক হতে পারে না। তাই এ সব ক্ষেত্রে সাইবার প্রতারকদের ফাঁদে পড়া ব্যক্তির পক্ষে প্রমাণ করা কঠিন যে, ওই সিম কার্ডটি তাঁর নয়।

একই বক্তব্য পুলিশেরও। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই আমাদের কাছেআসছে। দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যের কোনও বাসিন্দার নামে তোলা সিম কার্ড ব্যবহার করে অন্য রাজ্যথেকে অপরাধ ঘটানো হয়েছে। এ রাজ্যের বাসিন্দা যখন পুলিশের নোটিস পান, তত ক্ষণে আসল অপরাধী পুলিশের নাগাল পেরিয়ে অনেক দূর চলে যায়।’’ তাই পুলিশের পরামর্শ— শুধুমাত্র মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার নথিভুক্ত আউটলেট থেকেই আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম কার্ড তোলা উচিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE