Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

‘নোংরা জলে বন্দি, এসে দেখুন প্রার্থীরা’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক মাস ধরে ওই জল জমে থাকায় তা পেরিয়ে যাতায়াত করতে করতে বাসিন্দাদের চর্ম রোগ হয়ে গিয়েছে। ঠিক ভোটের আগে এমন বেহাল অবস্থা হলেও দেখা মেলেনি কোনও রাজনৈতিক নেতারই। 

বেহাল: জমা জল এড়িয়ে সন্তর্পণে যাত্রা। শনিবার, হাওড়ার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বেহাল: জমা জল এড়িয়ে সন্তর্পণে যাত্রা। শনিবার, হাওড়ার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

এই ভরা গ্রীষ্মেও বাড়ির সামনে পাঁকজল উপচে পড়ছে নর্দমা থেকে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় সেই বিষাক্ত পাঁকজল ঢুকে পড়ছে গৃহস্থের হেঁসেলেও। আশপাশের অলিগলি সর্বত্র একই ছবি। দুর্গন্ধে টেকাই দায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক মাস ধরে ওই জল জমে থাকায় তা পেরিয়ে যাতায়াত করতে করতে বাসিন্দাদের চর্ম রোগ হয়ে গিয়েছে। ঠিক ভোটের আগে এমন বেহাল অবস্থা হলেও দেখা মেলেনি কোনও রাজনৈতিক নেতারই।

নিয়মিত নিকাশির সংস্কার না হওয়ায় এমনই দুরাবস্থা হয়েছে হাওড়া পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তৃত এলাকায়। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন না করে হাওড়া পুরসভাকে প্রশাসকের দায়িত্বে তুলে দেওয়ায় এমনই মারাত্মক অবস্থার শিকার হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এই পিচ-গলা গরমেও নর্দমা উপচে জলে ভরে থাকছে দেবী মন্দির লেন, কুমোরপাড়া রোড, কুমোরপাড়া লেন-সহ ম্যাজিস্ট্রেট বাগানের মত বিভিন্ন এলাকায়। শাসক দল তৃণমূলেরই কর্মীদের অভিযোগ, রাস্তায় জমা জল নিয়ে পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। এলাকার মানুষ চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।

গত ডিসেম্বর মাসে হাওড়া পুরসভার তৃণমূল বোর্ডের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে নির্বাচন না

করে পুরসভায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। কয়েক মাস পরে পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গড়ে দেওয়া হয় সরকারের তরফে। সেই কমিটির

কাজ ছিল পুরসভার কাজকর্ম পরিচালনা করা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় ভোট এসে যাওয়ায় আদর্শ আচরণ বিধির কারণে একটি বৈঠকের পরে আর কোনও বৈঠক করা যায়নি। যার ফলে পুর কমিশনারকেই ৬৬টি ওয়ার্ডের সমস্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও পরিষেবার বিষয়টিকে একাই দেখতে হচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র এক জন প্রশাসনিক প্রধান দিয়ে এত বড় পুর এলাকার সর্বত্র যে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় লিলুয়ার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা তা পরিষ্কার করে দিয়েছে। কাঠফাটা রোদেও জমা জলের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বছর খানেক আগে থেকে। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে গিয়েছিল গোটা এলাকায়। সেই জল নামেনি বর্ষা বিদায়ের আগে পর্যন্ত। এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘এর পরে গত এক মাস ধরে আমাদের গোটা এলাকার এই বেহাল অবস্থা। নর্দমার নোংরা জল বার হওয়ার জায়গা না পেয়ে উপচে রাস্তায় চলে আসছে। ঢুকে যাচ্ছে অনেকের বাড়ির ভিতরেও। পুরসভার নিকাশি দফতরের কর্মীদেরও গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে না। আমরা নোংরা জলে বন্দি, এসে দেখুন প্রার্থীরা।’’

একই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সক্রিয় ভাবে তৃণমূল করি। এলাকার লোকজন আমাদের কথা শোনাচ্ছেন। কাউন্সিলর না থাকায় কাকে বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে নিকাশির কাজ না হওয়ার খেসারত এলাকার মানুষকে দিতে হচ্ছে। গত বছরই এলাকায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। এক জন মারাও যান। কিন্তু তার পরেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা।

হাওড়া পুরসভার কমিশনার অবশ্য জানান তাঁর কাছেও ওই এলাকার দুরাবস্থার খবর এসেছে। নর্দমার জলে ভাসছে গোটা এলাকা। পুর কমিশনার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গত বছর হাইড্র্যান্টগুলির পলি অপসারণ করা হয়নি। তার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। নর্দমার জল বেরোবার রাস্তা পাচ্ছে না।’’ পুর কমিশনার জানান, ইতিমধ্যে ওই হাইড্র্যান্টগুলি পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে খুব শীঘ্র এর সুফল মিলবে না। তবুও বর্যার আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে বলেই কমিশনার জানান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy