খিদিরপুরের বকরি মান্ডিতে হাজির সুদেশকুমার যাদব। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
ভোট গণনার দিন পর্যন্ত ইদের বাজার নিয়ে ধন্দে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ার যুবক সুদেশকুমার যাদব। ভোটে কী হয়, কে জানে! অন্য বারের মতো জমবে তো বকরি ইদে কলকাতার বাজার? ভোটের ফল প্রকাশেই সব দুশ্চিন্তার অবসান।
পর দিনই ইটাওয়া, কনৌজে সমাজবাদী পার্টির খাস তালুক থেকে ছাগলবোঝাই কলকাতামুখী ট্রাকে চেপে বসেন সুদেশ যাদব, জিতু যাদব, প্রীতম যাদবেরা। ওই তল্লাট থেকে ৫-১০ গাড়ি ছাগল মুম্বই-দিল্লি গেলে, কলকাতায় আসে অন্তত ৫০টি গাড়ি। কলকাতার ইদুজ্জোহার কুরবানির সঙ্গে দশকের পর দশক জড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের যমুনাপাড়ের যাদবকুল। ধর্মে হিন্দু ইউপি-র ছাগ কারবারিদের বাদ দিলে খিদিরপুরে ‘বকরি মান্ডি’র কেনাবেচা কার্যত জৌলুসহীন।
উত্তরপ্রদেশ কিংবা দিল্লিতেও দেওয়ালি, নবরাত্রিতে মুসলিম বিক্রেতাদের দোকান বন্ধ করানোর অভিযোগ শোনা যায়। দু’বছর আগে কর্নাটকের হাসন জেলার বেলুড়েও দ্বাদশ শতকীয় চেন্নাকেশব মন্দিরের কাছে মুসলিম বৃদ্ধার খেলনার দোকানে উচ্ছেদের নোটিস ধরানোর অভিযোগ উঠেছিল। কুমোরটুলির দুর্গা প্রতিমার চুল, সাজের সরঞ্জামের জোগান দিতে কিন্তু ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকেন হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুসলিম কারিগর, শিল্পীরা। ঠিক তেমনই কুরবানির ইদের পশুবাজারেও উত্তরপ্রদেশের যাদবদের রমরমা। সুদেশ আসছেন তাঁর বালক বয়স থেকে, অন্তত বছর ১৫। দেশের নানা টানাপড়েনে এই ইদেও বাংলায় অটুট সহাবস্থান, সম্প্রীতির ধারাবাহিকতা।
প্রাক্-ইদ কেনাকাটির ব্যস্ত বাজারে সুদেশ বলছিলেন, “আমাদের মুলুকে সমাজবাদী পার্টির জয়ে ইদের খুশি ডবল হয়ে গেছে।” তাঁর বাড়ি ইটাওয়া জেলায় মুলায়ম সিংহ যাদবের জন্মভিটের পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ফোনে নিজের পাগড়ি পরা ছবি দেখালেন সুদেশ। অখিলেশ যাদবের ভোটপ্রচারের মিছিল। পাশেই কনৌজ কেন্দ্রে অখিলেশের হয়ে খেটেওছেন সুদেশ। যাদবরা সপা-র একনিষ্ঠ ভোটার। কনৌজ, ইটাওয়া, মৈনপুরী সর্বত্র অখিলেশের জয়জয়কার।
খিদিরপুরে সুদেশের সঙ্গে আসা পেল্লায় বারবারি ছাগলও নজর কাড়ছে। অন্য ছাগলের দাম ২৫-৩০ হাজার টাকা হলে বারবারির দাম হাজার ৭০! কলকাতায় এসেই সুদেশের একটি ছাগল ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় তাঁর মেজাজ খুশ। আমিনিয়ার কর্ণধার মহম্মদ আজহার বলছিলেন, “ইউপি-র যমুনাপাড়ে চরা ছাগলই সব থেকে সুস্বাদু। তবে ওজন ১০-১২ কেজিই ভাল।” ইদের কুরবানির মাংস অবশ্য অনেকের মধ্যে ভাগ হবে। সুদেশের ৪০ কেজির তাগড়াই ছাগলের তাই বিশেষ কদর।
উট, দুম্বা কুরবানির ক্ষমতা গুটিকয়েক বিত্তবানের থাকে। তবে ইদে গরিবদের জন্যও অনেকে মিলে ভাগ করে লক্ষাধিক টাকার মোষ, গরু কুরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। খিদিরপুর, পার্ক সার্কাসের মোড়ে মোড়ে সেই ‘হিসসাদারি কুরবানি’র বিজ্ঞাপন। তাতে ২১০০ বা ১৭০০ টাকা দিয়েও বড় পশু কুরবানির পুণ্যের সুযোগ। ‘অল বেঙ্গল ইমাম মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলছিলেন, “নিম্নবিত্তদেরও ধর্ম পালনে শরিক হওয়ার মর্যাদা দিতে ভাগাভাগি বা হিসসাদারির কুরবানির আয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy