কলেজ স্ট্রীটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা বই বিক্রি হচ্ছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কলেজ স্ট্রিটের একটি বইয়ের দোকানে গল্পের বই কিনতে এসেছিলেন দমদমের বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনসূয়া বেদজ্ঞ। দোকানের সামনের তাকেই রাখা ছিল সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা কিছু বই। কয়েকটি বই নাড়াচাড়ার পরে বুদ্ধদেবের লেখা ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’ বইটি হাতে নিয়ে অনসূয়া বললেন, ‘‘এই বইটির কথা আগেও শুনেছি। হাতের সামনে দেখে কিনেই ফেললাম।’’ অনসূয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আন্দুল কলেজের শিক্ষিকা স্বর্ণালী কাঞ্জি। বুদ্ধদেবের লেখা বই দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘কলেজের একটি অনুষ্ঠানে পুরস্কার হিসাবে বই দেওয়া হবে। সেই বই কিনতেই এসেছি। ভাবছি, এ বারের পুরস্কারে দেওয়ার জন্য বুদ্ধবাবুর কয়েকটা বই নিয়ে যাব।’’
শুধু অনসূয়া বা স্বর্ণালী নন, শুক্রবার কলেজ স্ট্রিটে ঘুরে দেখা গেল, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখা নানা বইয়ের খোঁজ করছেন অনেকেই। তাঁদের একাংশ আবার এসেছিলেন বুদ্ধদেবকে আলিমুদ্দিনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে ফেরার পথে কলেজ স্ট্রিটে ঢুঁ মারেন তাঁরা। আলিমুদ্দিন থেকে সোজা কলেজ স্ট্রিটে এসেছিলেন কালনার বাসিন্দা সঞ্জিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কালনায় একটি মেলা হবে। সেখানে বইয়ের স্টলে বুদ্ধবাবুর ‘ফিরে দেখা’, ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’, ‘বিপন্ন জাহাজের এক নাবিকের গল্প’— এই তিনটি বই রাখব বলে এখানে এলাম।’’
বুদ্ধদেবের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছে, এমনই একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘বুদ্ধবাবুর বইয়ের চাহিদা গত কয়েক দিনে বেড়েছে। তাঁর দু’টি বই, ‘এই আমি মায়াকোভস্কি’ এবং ‘পুড়ে যায় জীবন নশ্বর’ আমরা নতুন করে ছাপব।’’ অনিরুদ্ধ জানান, শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার মধ্যেই বুদ্ধদেব লিখেছিলেন ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’ এবং ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’। বই দু’টি তাঁরাই প্রকাশ করেন। অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘চিন আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ওঁর খুব উৎসাহ ছিল। ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’ বইটি চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উপরে লেখা। চিনের উপরে আরও একটি বড় কিছু লেখার পরিকল্পনা ছিল ওঁর।’’ বুদ্ধদেবের লেখার ভক্ত এক প্রৌঢ় অরূপ রায় বললেন, ‘‘ওঁর বিদেশি কবিতার অনুবাদ ‘চেনা ফুলের গন্ধ’ আমার খুবই ভাল লাগে। ওঁর লেখা নাটক ‘দুঃসময়’ এক সময়ে তোলপাড় ফেলেছিল। এখনও কী প্রাসঙ্গিক ওই নাটক।’’ পুজোর সময়ে মার্ক্সীয় বইয়ের যে স্টল দেওয়া হয়, সেই স্টলে বুদ্ধদেবের বই বেশি করে রাখা হবে বলে জানাল একটি বামপন্থী প্রকাশনা সংস্থা।
কলেজ স্ট্রিটের একটি ইংরেজি বইয়ের প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার রাজু বর্মণ বললেন, ‘‘বইমেলায় এলে আমাদের স্টলেও বুদ্ধবাবু আসতেন। হিটলারের উপরে বই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কিত বই, দক্ষিণ আমেরিকা বিষয়ক বইয়ে ওঁর খুব আগ্রহ ছিল। বইমেলার সময়ে এই সমস্ত বিষয়ের বইগুলি আমি ওঁর জন্য আলাদা করে রেখে দিতাম। এমনকি, উনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও মহাকরণে ওঁর পছন্দের বই নিয়ে যেতাম। আমি বলেছিলাম, আমাদের জন্য একটা বই লিখুন।’’ কলেজ স্ট্রিটের আর একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে ১৯৮৬ সাল থেকে আলাপ। আমরা ওঁর ‘দু’টি নাটক’, ‘চেনা ফুলের গন্ধ’, ‘চিলিতে গোপনে’ প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে ‘চিলিতে গোপনে’ বইটি এক সময়ে প্রচুর বিক্রি হয়েছে।’’
জীবনানন্দ দাশের উপরে বুদ্ধদেবের লেখা ‘হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর’ বইটির ছাপা বন্ধ আছে বলে জানালেন কলেজ স্ট্রিটের আর এক প্রকাশক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। ত্রিদিব বলেন, ‘‘১৯৯৭ সালে বইমেলা পুড়ে গিয়েছিল। সেই বছরই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। বুদ্ধবাবু বইটির উদ্বোধন করেছিলেন। সম্প্রতি এই বইটার ফের খোঁজ শুরু হয়েছে। তাই বইটি আবার ছাপার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy