Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2024

চলছে ভাসান, তবু ঠাকুর দেখার ধুম

শনিবার রীতি মেনে দশমীর পুজো শেষ হতেই গঙ্গার ঘাটে শুরু হয়েছিল বিসর্জনের তোড়জোড়। মূলত বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। রবিবার সকাল থেকে কঠোর নিরাপত্তায় বাড়ির পুজোর সঙ্গে বারোয়ারি পুজোর বিসর্জনও চলতে থাকে কলকাতার গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে।

বিসর্জনের আগে প্রতিমা বরণ।

বিসর্জনের আগে প্রতিমা বরণ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৩০
Share: Save:

বিসর্জনের ঢাকের বাদ্যি বেজে চলেছে। কিন্তু প্রতিমা দর্শনের আকুতিতে ছন্দপতন নেই। রবিবার সন্ধ্যার শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ের দৃশ্য এটাই বুঝিয়ে দিল। বাগবাজারের ঠাকুর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরোয় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ। টালা পার্ক বা দমদম পার্কের পুরস্কার পাওয়া প্রতিমা দেখার টানে বেলগাছিয়া সেতু তখন যানজটে কার্যত অবরুদ্ধ।

শনিবার রীতি মেনে দশমীর পুজো শেষ হতেই গঙ্গার ঘাটে শুরু হয়েছিল বিসর্জনের তোড়জোড়। মূলত বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। রবিবার সকাল থেকে কঠোর নিরাপত্তায় বাড়ির পুজোর সঙ্গে বারোয়ারি পুজোর বিসর্জনও চলতে থাকে কলকাতার গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। রীতিমতো গঙ্গার প্রতিটি ঘাট ঘিরে রেখে চলে বিসর্জন-পর্ব। মাইক হাতে পুলিশকেও দেখা যায় তৎপরতা হতে। বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট-সহ গঙ্গার ঘাটগুলিতে পুরসভার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমা বিসর্জনের পরে দ্রুত কাঠামো তুলে ফেলেন তাঁরা।

বিসর্জন পর্ব ঘিরে কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে রাজ্যজুড়ে। বিসর্জনে কেন ডিজে বাজানো হয়নি, সেই অভিযোগ তুলে পাশের পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে অশান্তি বাধে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের রঘুনাথপুরে। ছ’জন জখম হয়েছেন। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রঘুনাথপুর সর্বজনীন দুর্গাপুজোর নিরঞ্জন চলছিল। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি স্বপন দাঁর অভিযোগ, পাশের পাড়ার বাসিন্দা এক সিভিক ভলান্টিয়ারের নেতৃত্বে কয়েক জন এসে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় চড়াও হন। তাঁর দাবি, কেন ডিজে-র ব্যবস্থা করা হয়নি সেই অভিযোগ তুলে হামলা করা হয়। স্বপন-সহ ছ’জন জখম হন। যদিও ভলান্টিয়ারের বোনের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পুজো কমিটিরই কয়েক জন চড়াও হন। দাদা ও পাড়ার লোকজন প্রতিবাদ করেন।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার টাকির ইছামতী নদীতে বিসর্জনের ভিড় এ দিন সে ভাবে হয়নি। বাড়ির পুজোর বিসর্জন হয়েছে শনিবার। ক্লাবের পুজোর বিসর্জন হয় রবিবার। ফলে ভিড় খানিকটা কমে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নদীতে বেশি প্রতিমা নামেনি। বেশির ভাগ প্রতিমাই রাজবাড়ি ঘাট থেকেই নদীতে বিসর্জন হয়েছে। প্রতি বছর যাত্রী নিয়ে কিছু নৌকা নদীবক্ষে ঘোরে। এ বার সেই সংখ্যাটাও কম ছিল। অন্য দিকে, বনগাঁয় ইছামতী নদীর জলদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পুরসভার তরফে থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ক্রেনের সাহায্যে প্রতিমা জলে ডুবিয়ে উপরে তুলে নিয়েছেন পুরকর্মীরা। ফুল, বেলপাতা সহ পুজোর উপকরণ ফেলা হয়েছে নদীর পাড়ে।

মুর্শিদাবাদে ভাগীরথীর বিভিন্ন ঘাটে এ দিন বিসর্জন হয়। তবে সোমবারও বেশ কিছু প্রতিমা বিসর্জন হবে। বিকেল থেকে প্রতিমা রাস্তায় বার হয়। পরে সন্ধ্যায় নিরঞ্জন শোভাযাত্রা সহ প্রতিমা পথ পরিক্রমায় করে। অনেক রাত পর্যন্ত চলে এই শোভাযাত্রা।

পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট মেনে ঐতিহ্যবাহী বড়দেবীর প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে কোচবিহারে। রবিবার দেবীবাড়ি এলাকায় ওই মন্দিরের কাছেই যমুনা দিঘিতে প্রতিমা বিসর্জন হয়। মদনমোহন মন্দির চত্বরের কাঠামিয়া দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন হয় তোর্সা নদীতে। আলিপুরদুয়ার রামকৃষ্ণ আশ্রমের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয় জংশনের রেল হাসপাতাল পুকুরে।

জলপাইগুড়িতে দুপুর থেকেই বিসর্জন শুরু হয়। বছর দু’য়েক আগে মালবাজারে হড়পা বানের পর থেকে প্রশাসন সতর্কতার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। নদীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না পুজো কমিটির কাউকে।

শিলিগুড়ির লালমোহন মৌলিক নিরঞ্জন ঘাটে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্রতিমা বিসর্জন হয়। মহানন্দা নদীতে নামা নিয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে। ফুলহার, টাঙন, পুনর্ভবা, বেহুলা নদী ও বিভিন্ন পুকুরে বিসর্জন হয়। রায়গঞ্জে কুলিক নদীতে বিসর্জন চলাকালীন দুর্ঘটনা রুখতে ঘাট সহায়ক নিয়োগ করেছে পুরসভা।

আজ, সোমবার মেদিনীপুরে বিসর্জনের কার্নিভাল হবে। প্রস্তুতি সারা হয়েছে। শহরের বটতলাচক থেকে গোলকুয়াচক রাস্তায় এই কার্নিভাল হবে। প্রায় কুড়িটি পুজো কমিটি বিসর্জনের কার্নিভালে অংশগ্রহণ করবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘কার্নিভাল ঘিরে যাবতীয় প্রস্তুতি সারা হয়েছে।’’ বিসর্জন শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে। কংসাবতীর গান্ধীঘাটে পুরসভার তরফ থেকে যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ক্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫ অক্টোবর খড়্গপুর পুরসভা কার্নিভালের ব্যবস্থা করছে। তার আয়োজন চলছে। ঘাটাল মহকুমাতে কিছু বড় পুজোর বিসর্জন হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিসর্জন হবে সোমবার।

রবিবার দুপুরের পর থেকেই রানাঘাট, শান্তিপুর, ফুলিয়া, তাহেরপুর এলাকায় চূর্ণী, ভাগীরথী নদীর ঘাটগুলিতে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। নদী দূষণ ঠেকাতে ঘাটগুলিতে ফুল ও পুজো ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ফেলার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়।

তবে বিসর্জনের পাশাপাশি অনেক জায়গাতেই প্রতিমা দর্শনের উন্মাদনাও ফিকে হয়নি। কলকাতায় এ বার ধারাবাহিক ভাবেই ভিড়ে দক্ষিণকে টেক্কা দিয়েছে উত্তর কলকাতা। সেই সঙ্গে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেলগাছিয়া সেতু বা যশোহর রোডে যান নিয়ন্ত্রণেও কার্যত ব্যর্থ পুলিশ। যে পুজোর প্রতিমাগুলি কার্নিভালে অংশ নেবে তা দেখতে এ দিন রাতেও ভিড় উপচে পড়েছে। ফুরোতে না-চাওয়া উৎসবের মেজাজ বিসর্জনের বিষাদকে ছুঁয়ে থেকেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2024 Durga Puja Durga idol immersion Durga Puja Pandal Hopping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy