অত্যাচার: ডিজে বাজিয়ে এ ভাবেই চলে উল্লাস। ফাইল চিত্র
উপলক্ষ হলেই হল! কলকাতায় বক্স বাজিয়ে শব্দ-তাণ্ডবের বিরাম নেই। তা সে কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যতই কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিক না কেন। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর ভাসানের পরে এ বার বক্স বাজিয়ে শব্দ-দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠল বাঙালির নোবেল জয় নিয়েও। যা শুনে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক থেকে মনোরোগ চিকিৎসক সকলে একমত, ‘‘লোক দেখিয়ে তারস্বরে কিছু করার প্রবণতা যত দিন না কাটবে, এ জিনিস বন্ধ করা কঠিন। কঠোর আইন প্রণয়ন ছাড়া অন্য পথ নেই।’’
চলতি মাসের ৮ তারিখ দশমী থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন ঘিরে শহরের নানা জায়গায় প্রবল শব্দ-তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে। গৌরীবাড়ি, গ্রে স্ট্রিট, অরবিন্দ সরণির পাশাপাশি বক্স বাজিয়ে ভাসানের জেরে তাঁদেরও ব্যাপক ভুগতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিডন স্ট্রিটের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। বাদ পড়েনি বাবুঘাট ও বাজেকদমতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকাও। দুর্গাপুজো মিটতে না মিটতেই একই রকম বক্সের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে লক্ষ্মীপুজোর ভাসানেও।
এরই মধ্যে সোমবার কসবায় দেখা গিয়েছে অন্য চিত্র। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে শব্দ-তাণ্ডব চলছে ষোলো আনা। যদিও উপলক্ষ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখি, তারস্বরে বক্স বাজিয়ে শোভাযাত্রা যাচ্ছে রাসবিহারী কানেক্টর দিয়ে।’’ প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, এ বুঝি লক্ষ্মীপুজোর ভাসান। উদ্দাম নাচে ব্যস্ত এক কিশোরকে ডেকে ব্যাপার কী জানতে চাওয়ায় সে শুধু বলে, ‘‘নোবেল, নোবেল!’’
ঘটনার বিবরণ শুনে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বললেন, ‘‘এ বার নোবেলেও বক্স বাজিয়ে নাচ?’’ তাঁর মতে, বক্স বাজানো বা আইন ভাঙাতেই ব্যাপারটা এখন আর সীমাবদ্ধ নেই। এ আদতে একটা গোটা সমাজের পরিচিতি প্রকাশের ধরন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ে, পিকনিক, পুজো, পৈতে— সব ক্ষেত্রে একই ব্যাপার। আসলে আমি তারস্বরে কিছু করছি সেটা জানান দেওয়া এবং করেও পার পেয়ে যাচ্ছি, এটা বোঝানোর গরিমা কাজ করছে। উৎসবের ধরনই বদলে যাচ্ছে।’’ অনিরুদ্ধবাবুর দাবি, কড়া আইন প্রণয়ন না করলে এ জিনিস আটকানো যাবে না।
সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের আবার বক্তব্য, কিছু করেই এ জিনিস বন্ধ করা কঠিন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আসলে অদ্ভুত আত্মঘোষণার রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এই বহিঃপ্রকাশটাকেই অধিকার ভেবে নিয়েছেন। আর আইন থেকেও যেহেতু প্রয়োগ হচ্ছে না, তাই এ সব করেও লাইসেন্স হাতে পেয়ে যাওয়ার মতো ধারণা হচ্ছে কিছু মানুষের।’’
শত আলোচনা সত্ত্বেও শব্দ-তাণ্ডব রোখা যাচ্ছে না কেন? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, পর্ষদের একটি দল রাস্তায় ঘুরছে। ৬৫ ডেসিবেলের উপরে সাউন্ড বক্স বাজতে দেখলেই তাঁরা পুলিশকে জানাচ্ছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়। সব পুলিশকর্মীকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও কসবা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক জানাচ্ছেন, ওই অঞ্চলে বক্স বাজিয়ে শোভাযাত্রার খবর তাঁর কাছে ছিল না। লালবাজারের এক কর্তা আবার দাবি করলেন, ‘‘অভিযোগ তো সে ভাবে আসছেই না!’’
অভিযোগের অপেক্ষাই বা করা হবে কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান এই শারদোৎসবে মিলবে কি না, সংশয় থেকেই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy