—প্রতীকী ছবি
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ই-পাসের ব্যবহার আগামী ১৫ জানুয়ারির পরে বন্ধ করে দিতে চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণ এড়াতে শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা যাত্রীদেরই আপাতত সফরের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, পরিষেবা শুরু হওয়ার পরে প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেলেও স্মার্ট কার্ড থাকা যাত্রীদের অনেকেই এখনও মেট্রো চড়ছেন না। কত দিনে তাঁদের বড় অংশকে মেট্রোমুখী করা যাবে, তা এখনও কারও জানা নেই। আর্থিক ক্ষতি নিয়ে এখনই মুখ না খুললেও মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা যে ভাবে হ্রাস পেয়েছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে কর্তাদের।
প্রাক্-করোনাকালে শহরের গণপরিবহণের মধ্যে মেট্রোই ছিল প্রধান। তবে গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বছরখানেক আগেও মেট্রোয় প্রতিদিন সাড়ে ছ’লক্ষ মানুষ যাতায়াত করতেন। ট্রেন-পিছু যাত্রীর সংখ্যা ছিল আড়াই-তিন হাজার। আনলক-পর্বে মেট্রো পরিষেবা শুরু হওয়ার সময়ে সংক্রমণ এড়াতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এর পরে গত কয়েক মাসে সংক্রমণের হার কমতেই যাত্রীদের স্বার্থে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেন মেট্রোকর্তারা। এখন দিনে চলছে ২২৮টি ট্রেন। দূরত্ব-বিধি মেনে ওই সংখ্যক ট্রেনের মাধ্যমে দৈনিক আড়াই লক্ষ যাত্রী পরিবহণ করা সম্ভব বলে মনে করেন মেট্রোর আধিকারিকেরা। কিন্তু, বর্তমানে কাজের দিনেও মেট্রোর যাত্রী-সংখ্যা থমকে রয়েছে দেড় লক্ষের আশপাশে।
করোনার আগের স্বাভাবিক সময়ে মেট্রোয় দৈনিক যত সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করতেন, তার খুব সামান্য অংশই এখন মেট্রোয় উঠছেন। প্রায় পাঁচ লক্ষ যাত্রীর কাছে মেট্রোর স্মার্ট কার্ড থাকলেও গত পাঁচ মাসে তাঁদের মধ্যে বড়জোর দু’লক্ষ যাত্রী নতুন করে নিজেদের স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করিয়েছেন। মেট্রোর নতুন স্মার্ট কার্ড নিয়ে অবশ্য যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে মেট্রোয় স্মার্ট কার্ড বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজারের কাছাকাছি। অক্টোবর মাসে ওই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৭ হাজার। নভেম্বরে তা সাড়ে ৪৪ হাজার এবং ডিসেম্বরে ৯৩ হাজারের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। তবে এর পাশাপাশি প্রতিদিন যাত্রীদের একাংশ সফর মিটে গেলে স্মার্ট কার্ড ফিরিয়েও দিচ্ছেন। যাত্রী-সংখ্যায় বিপুল হ্রাসের ফলে মেট্রোর আয় কমেছে প্রায় আনুপাতিক হারেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল, কলেজ বন্ধ। এখনও অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করছেন। সংক্রমণ নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ না কমা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মুশকিল।’’
সাধারণত, পুজোর পরে ডিসেম্বর মাসে মেট্রোয় ভিড় অনেকটাই বাড়ে। কিন্তু গত বছরের বড়দিন, প্রাক্ নববর্ষের সন্ধ্যা এবং নতুন বছরের প্রথম দিনেও দিনেও মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা ঘোরাফেরা করেছে দেড় লক্ষের মধ্যে। গত ২৫ ডিসেম্বর মেট্রোয় যাত্রী হয়েছিল মাত্র ৮৭ হাজার। প্রাক্ নববর্ষ সন্ধ্যায় সেই সংখ্যা ছিল ১.৪৫ লক্ষ। নতুন বছরের প্রথম দিনে তা কমে দাঁড়ায় ১.২১ লক্ষে।
তবে চলতি সপ্তাহে প্রথম বার মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে যাত্রী-সংখ্যা। তবে সেটাও প্রত্যাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম বলে জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
যাত্রী-সংখ্যা হ্রাসের এই চিত্র দেখে পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বহু যাত্রী এখনও গণপরিবহণে ফিরতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত নন। তাই দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রবণতা বজায় থাকলে তা মেট্রোর বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy