প্রতিবাদ: স্বাধীনতার মধ্যরাতে রাত দখলের চার মাস পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানেও প্রতিবাদের সুর। শনিবার, রাণুচ্ছায়া মঞ্চে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ। মানুষের উপরে মানুষের বিশ্বাস। আর জি করে নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতার মধ্যরাতে একজোটে পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রবল নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়তার মুখে বেঁধে বেঁধে থাকার অঙ্গীকারই তখন জুগিয়েছিল ভরসা। সেই আন্দোলনের অভিমুখ পরে মিশে গিয়েছিল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সংস্কারের দাবির আন্দোলনের সঙ্গে। এই ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ধৃত আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল গত ১৩ ডিসেম্বর আদালতে জামিন পেয়েছেন। যার পরে ফের দানা বাঁধছে প্রতিবাদের সুর। সেই সুরই শোনা গেল শনিবার, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের রাণুচ্ছায়া মঞ্চে। রাত দখলের চার মাস পূর্তির দিনে ‘রাত দখল (নারী, ট্রান্স, কুইয়ার) ঐক্যমঞ্চ’-এর ডাকে সেখানে শোনা গেল ‘স্পর্ধার চিৎকার’।
চার মাস আগের আন্দোলনের পরেও আর জি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার অধরাই। ঘটনাটি নিয়ে বহু ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। এর পাশাপাশি, রাজ্যে পর পর ঘটে চলেছে একাধিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। ফলে প্রশ্ন, নিরাপত্তার, মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের, সমান অধিকারের যে দাবি তোলা হয়েছিল, তা পূরণ কবে হবে? এ দিন মঞ্চ থেকে সেই সব দাবি ফের তুললেন কর্পোরেট কর্মী, গৃহ পরিচারিকা, আইনজীবী, প্লাস্টিক কারখানার কর্মী, যৌনপল্লির বাসিন্দা কিশোরী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী, নাট্যকর্মী থেকে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার নানা মানুষ। সংগঠিত হোক বা অসংগঠিত— কোনও জায়গাতেই যে মেয়েরা, প্রান্তিক মানুষেরা নিরাপদ নন, সে সবই উঠে এল তাঁদের বক্তব্যে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানানোর কমিটি বহু ক্ষেত্রেই রয়েছে খাতায়-কলমে। হেনস্থার অভিযোগ জানাতে যে আঞ্চলিক কমিটি তৈরির কথা, তা-ও নেই। এ নিয়ে সচেতনতাও খুবই কম।
প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের ক্ষেত্রে সেই অধিকারের দাবি আরও সঙ্কীর্ণ। তাঁদের জন্য নেই শৌচাগার, নেই হাসপাতালে নির্দিষ্ট শয্যা। এমনকি, আইনও যেন তাঁদের ব্রাত্যই করে রেখেছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে রূপান্তরকামী নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মী ও শিল্পী অনুরাগ মৈত্রেয়ী বললেন, ‘‘অনেকেই আমাদের যৌন আক্রমণকারী হিসাবে ভাবেন। কারও কাছে আমরা কেবল ‘অ্যাকাডেমিক’ কৌতূহলের বস্তু। আমাদের একটাই দাবি, মানুষের মতো মানুষের মর্যাদা দেওয়া হোক।’’
মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা, ডলি বণিকের কথায় উঠে এল গৃহ পরিচারিকাদের প্রতি অসম্মানের কথা। ‘ঝি’ বলে সম্বোধন কিংবা ছুটি পেতে সমস্যার কথা উল্লেখ করে ডলির প্রশ্ন, ‘‘কবে সব কাজ সমান চোখে দেখা হবে?’’ হাওড়ার প্লাস্টিক কারখানার কর্মী নির্মলা দত্ত জানালেন, একটানা ১২ ঘণ্টা পরিশ্রমের কথা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে বাড়তি রোজগার তো দূর, কখনও সারা মাস হাড়ভাঙা খেটেও ঠিক সময়ে মাইনে জোটে না বলে জানালেন তিনি। কালীঘাটের যৌনপল্লিতে বেড়ে ওঠা কিশোরীর কথায় উঠে এল পাচার হয়ে আসা, বিক্রি করে দেওয়া মেয়েদের কথা। এমনকি, স্বামী বা সঙ্গী জোর করে যৌন কাজে নামিয়ে দিচ্ছে যে মেয়েদের, তাঁদের কথা। গত অগস্টে আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে পথে নেমেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু তাঁদের অধিকারের কথা? সেটা কারা বলবে? মঞ্চ থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় দশম শ্রেণির কিশোরী।
আর জি করের ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি-সহ কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত বিশ্রামাগার, ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি ও লোকাল কমপ্লেন্টস কমিটি তৈরি, প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের জন্য শৌচাগার তৈরির মতো একগুচ্ছ দাবি তোলা হয় এ দিনের সমাবেশ থেকে। ওঠে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ ধ্বনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy