মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে এ দিন আউটডোরে মেলেনি চিকিৎসা। ছবি: নীলোৎপল বিশ্বাস
কিডনির সমস্যার জন্য ডায়ালিসিস চলছে। বুধবার দেখবেন বলে সময় দিয়েছিলেন চিকিৎসক। সেই মতো এ দিন সকাল সকাল মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন লেক টাউনের গোপীকুমার ধাড়া। তবে সকাল ন’টায় হাসপাতালে ঢুকলেও তাঁকে ঠায় অপেক্ষা করতে হয়েছে বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত। তার পরেও অবশ্য ডাক্তারের দেখা পাননি। বেসরকারি হাসপাতালটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বারান্দায় বসে ধুঁকতে থাকা গোপীকুমারবাবু বলেন, ‘‘সকাল থেকে বসে আছি। দাদা কাজ কামাই করে আমায় নিয়ে এসেছে। এখন শুনলাম, ডাক্তারবাবুই আসবেন না!’’
এর পরে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অনেক কষ্টে এত বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছি। এক দিন কাজে না গেলে দাদার টাকা কাটে। ডাক্তারবাবু আসবেন না, সে কথা বেলা ১২টাতেও জানিয়ে দিলে দাদা কাজে চলে যেতে পারত।’’
বেসরকারি হাসপাতালে এ দিন চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু রোগীকে এ ভাবেই ভুগতে হয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, প্রায় সর্বত্র কার্যত ছুটির চেহারা। রোগীর ভিড় থাকলেও আসেননি বহু চিকিৎসক। ফলে কাউকে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পরে ফিরে যেতে হয়েছে। কেউ আবার জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুকে ফোন করায় তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘আমাদের মারলে আমরা রোগী দেখব কেন? বাড়ি ফিরে যান।’ যদিও সব ক’টি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সুরে দাবি করেছেন, ‘‘হাসপাতাল খোলা রয়েছে, চিকিৎসা পেতে কোনও সমস্যা নেই।’’ তবে কর্তৃপক্ষের ঠান্ডা ঘরের বাইরের চিত্রটা অন্য কথা বলেছে।
যেমন, বাংলাদেশ থেকে শহরে চিকিৎসা করাতে এসেছেন মহম্মদ শরিফ হাসান। স্ত্রী জাহান বেগমের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে বসে শরিফ বললেন, ‘‘এ দিন তারিখ পাওয়া গিয়েছে বলে সোমবার রাতেই কলকাতায় চলে এসেছি। আজ সকালে এসে শুনলাম, কোনও ডাক্তার আসবেন না। কবে ফের দেখানো যাবে, বুঝতে পারছি না। আবার ফিরে গিয়ে কত দিনের মধ্যে আসতে পারব, তা-ও জানি না।’’ স্ত্রীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই ও অজ্ঞান হয়ে যায়। এই শরীরে ওকে নিয়ে বারবার যাতায়াত করা সম্ভব?’’ সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবার অস্ত্রোপচার হওয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন সঞ্জীব মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে চিকিৎসকের মেয়েকে দেখার কথা ছিল, তিনি বিদেশে ছিলেন। আজ তাঁর দেখার কথা। এত ক্ষণ বসে থাকার পরে ফোন করলাম। ডাক্তারবাবু বললেন, রাজ্যে কী হচ্ছে দেখুন। কোনও ডাক্তার পাবেন না।’’ চিকিৎসকদের অপেক্ষায় একই চিত্র দেখা গিয়েছে মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটাল্স ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সহ-সভাপতি রূপক বড়ুয়া সমস্যা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের বেশির ভাগই ভিজ়িটিং চিকিৎসক। ফলে তাঁরা যদি না আসেন, আমাদের সত্যিই কিছু করার থাকে না। তবু আমরা পরিষেবা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখেছি।’’
এই হয়রানির মধ্যেই উল্টো ছবি মুকুন্দপুরের পিয়ারলেস হাসপাতালে। সেখানে কর্মবিরতি নয়, প্রতিবাদ হিসেবে রোগীদের থেকে এ দিনের ফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ওই হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক সোমেন দাস বলেন, ‘‘এনআরএসের ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, ভীত। প্রতিবাদের ভাষা নেই। তবে রোগী দেখা বন্ধ করছি না।’’ হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত মিত্রের বক্তব্য, ‘‘রোগী না দেখে তাঁদের হয়রানি বাড়ানোর পক্ষে আমরা নই। প্রতিবাদ করার পাশাপাশি রোগীও দেখেছি। তবে এ দিনের ফি নিইনি।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy