Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

ধুঁকছে পরিষেবা, দিনভর সর্বত্রই দুর্ভোগ রোগীদের

শনিবার, ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ দেশব্যাপী চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় বড়সড় সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কর্মবিরতিতে থাকা আবাসিক চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা কাজ না করলেও জরুরি পরিষেবা সর্বত্র চালু রয়েছে।

পুনর্গঠন: আর জি কর হাসপাতালে ভাঙা বিক্ষোব মঞ্চ ঠিক করেছেন সেখানকার কর্মীরা। শুক্রবার।

পুনর্গঠন: আর জি কর হাসপাতালে ভাঙা বিক্ষোব মঞ্চ ঠিক করেছেন সেখানকার কর্মীরা। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

কোথাও ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পরিজনেরা। কোথাও আবার যক্ষ্মা রোগী ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কলকাতা তো বটেই, রাজ্য জুড়ে সমস্ত স্তরের হাসপাতালেই কর্মবিরতির জেরে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে রোগীদের ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ফলে ক্রমশ ফাঁকা হচ্ছে হাসপাতালগুলির বিভিন্ন ওয়ার্ড। রাজ্য জুড়ে এই অচলাবস্থা কবে কাটবে, তার উত্তর এখনও অজানা!

আজ, শনিবার, ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ দেশব্যাপী চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় বড়সড় সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কর্মবিরতিতে থাকা আবাসিক চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা কাজ না করলেও জরুরি পরিষেবা সর্বত্র চালু রয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে নিয়মিত পরিষেবা দিচ্ছেন। শুক্রবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মবিরতি চলবে। এ দিন তাঁরা দাবি তোলেন, আর জি করের ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে সিবিআইকে এবং তথ্যপ্রমাণ-সহ তা জানাতে হবে আন্দোলনকারীদের। এর পাশাপাশি, ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সুপার এবং অন্য আধিকারিকদের কখনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনও প্রশাসনিক পদে রাখা যাবে না। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্রের জন্য তাঁদের লিখিত ভাবে ক্ষমাও চাইতে হবে। গত বুধবার রাতে আর জি করে হামলার দায় কলকাতা পুলিশকে নিতে হবে। নিরাপত্তা বাড়াতে কী পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করার পাশাপাশি নগরপালকে পদত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনকারীদের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘আমরাও কাজে যোগ দিতে চাই। কিন্তু দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা জানাতে হবে। অন্য দাবিগুলিও পূরণ করতে হবে। না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’

তবে, রোগী পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে না বলেই দাবি সিনিয়র চিকিৎসকদের। তাঁদের অনেকে আন্দোলন মঞ্চে এসে সেই দাবি করেছেন। এ দিন আর জি করে আন্দোলনে শামিল হয়ে এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘‘কয়েক জন ক্যানসার রোগীকে দেখে এই মঞ্চে এসেছি। চিকিৎসা করছি। আন্দোলনেরও পাশে আছি। আর জি করে পরিষেবা বন্ধের গুজবে কান দেবেন না।’’

ভোগান্তির ছবি অন্যান্য হাসপাতালেও ধরা পড়েছে। দিন দশেক ধরে আর জি করে চিকিৎসাধীন ছিলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দা ফয়জুল মল্লিক। বুকে জল জমেছিল। অস্ত্রোপচারও হয়েছে। এ দিন তাঁর ছেলে তহিকুল বলেন, ‘‘কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করব।’’

গত বুধবার রাতের হামলায় তছনছ হয়ে গিয়েছে আর জি করের জরুরি বিভাগ। তাই ট্রমা কেয়ারের জরুরি বিভাগেই সামাল দেওয়া হচ্ছে সাধারণ জরুরি বিভাগের কাজকর্ম। এ দিন সেখানে আনা হয়েছিল নির্মাণ শ্রমিক শ্রীমন্ত মাহাতোকে। মাথায় চোট পাওয়া ওই রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে অন্যত্র যেতে বলা হয়েছে বলেই দাবি পরিজনদের। আবার যক্ষ্মায় আক্রান্ত ভাইয়ের জন্য ওষুধ নিতে আসা শ্যামলী ভৌমিকের দাবি, ‘‘কয়েক দিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু আন্দোলনের জন্য ওষুধ পাচ্ছি না। কোথায় পাব, জানি না।’’

অন্য দিকে, এ দিন কল্যাণীর এমস হাসপাতালে আচমকা মূল ফটক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যান রোগীরা। সেখানে এ দিন বহির্বিভাগ খোলা হলেও অল্প ক্ষণের মধ্যেই জুনিয়র ডাক্তারেরা অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। তখনই বন্ধ করে দেওয়া হয় মূল ফটক। উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর মেডিক্যালেও কর্মবিরতির জেরে রোগীদের হয়রানি অব্যাহত। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের বহির্বিভাগে সিনিয়র চিকিৎসক থাকলেও সংখ্যায় কম। ফলে রোগীদের পাঁচ-ছ’ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিছু রোগী ফিরে গিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ-সহ বীরভূম ও হুগলির বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জুনিয়রদের কর্মবিরতি চললেও সিনিয়র চিকিৎসকেরা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। তাই খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। বাস্তব চিত্র কি সত্যিই তা-ই? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE