Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

পরিষেবা ঠিক আছে, ভোগান্তি সত্ত্বেও দাবি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের

দিনভর এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে অসহায়ের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। অ্যাম্বুল্যান্সে করে বহু দূর থেকে আসা গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায়।

অসহায়: চলছে ডাক্তারদের কর্মবিরতি। তাই চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যেতে হল অমল রায় নামে এক রোগীকে। মঙ্গলবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

অসহায়: চলছে ডাক্তারদের কর্মবিরতি। তাই চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যেতে হল অমল রায় নামে এক রোগীকে। মঙ্গলবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৪
Share: Save:

কর্মবিরতি আর কত দিন? সকাল থেকে রাত, এই প্রশ্নই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের উদ্বিগ্ন চোখে-মুখে। দিনভর এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে অসহায়ের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। অ্যাম্বুল্যান্সে করে বহু দূর থেকে আসা গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায়। আর ভর্তি থাকা রোগীদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসা ঠিক মতো মিলছে না।

মঙ্গলবার বিভিন্ন হাসপাতালে যখন এমন পরিস্থিতি, তখনও আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা দাবি করলেন, তাঁদের কর্মবিরতির জন্য চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটছে না। কারণ, সিনিয়র ডাক্তারেরা সাধ্যমতো পরিষেবা দিচ্ছেন। পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক ভাল। তাঁদের বক্তব্য, রোগী-পরিষেবা যদি ব্যাহত হয়, তা হলে তা প্রশাসনের দোষ। প্রশ্ন তোলা হয়, কেন পর্যাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসক নেই হাসপাতালগুলিতে? আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আরও প্রশ্ন, সিবিআইয়ের তদন্ত থেকে সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের পর্যবেক্ষণ, সবই তাঁদের নজরে রয়েছে। কিন্তু এত দিনেও কাজের কাজ কিছু এগিয়েছে কি? সুবিচার তো পাওয়া যায়নি এখনও। তাই এই মুহূর্তে কর্মবিরতি ওঠানোর কথা তাঁরা ভাবছেন না।

তখন বিকেল সাড়ে ৪টে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শয্যায় শুয়ে ছিলেন বৃদ্ধা কণিকা বাহাদুর। অক্সিজেন চলছে। চিকিৎসক তাঁর পরিজনদের বলে দিলেন, ‘‘ওঁকে বাড়ি নিয়ে যান। ভর্তি হলে কে দেখবেন? জুনিয়র ডাক্তারেরা
সকলেই কর্মবিরতিতে রয়েছেন। বরং বাড়িতে ভাল থাকবেন।’’ রোগীর এক আত্মীয় করুণা বাহাদুর বললেন, ‘‘বাড়ি নিয়ে গেলে কি হাসপাতালের পরিকাঠামো পাব? শ্বাসকষ্ট তো বাড়ছে।’’ উত্তর নেই জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে। ওই বিভাগেই রঞ্জন কর্মকার নামে আরও এক রোগী শুয়ে ছিলেন। তাঁর আত্মীয় তনয় পাল বললেন, ‘‘ওঁর ডায়ালিসিস দরকার। কিন্তু ডাক্তারেরা বলছেন, হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিট বন্ধ। বেসরকারি জায়গায় ডায়ালিসিস করানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ জোড়াবাগান থানার পুলিশ অমল রায় নামে এক রোগীকে এনেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তাঁর নিকটাত্মীয় কেউ নেই। থানার পুলিশের সঙ্গে আসা সত্যজিৎ প্রামাণিক নামে এক জন ওই রোগীকে ট্যাক্সিতে ওঠানোর সময়ে বললেন, ‘‘ওঁর কোমর ভেঙেছে। কিন্তু এখানে ভর্তি নিল না। কোথায় যে যাব?’’

এসএসকেএম হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিলকনাথ বিশ্বকর্মা। তাঁর স্ত্রী সুনীতা বিশ্বকর্মা বললেন, ‘‘পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙেছে। অস্ত্রোপচার খুব দ্রুত করা দরকার। কিন্তু ডাক্তারেরা বললেন, এক মাস পরে আসতে। তা হলে কি এক মাস ধরে যন্ত্রণায় কাতরাতে হবে?’’ সেখানেই ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে গত ৮ তারিখ থেকে ভর্তি নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে আসা রেবেকা বিশ্বাস। রেবেকার ছেলে শাহিদ বললেন, ‘‘মায়ের চিকিৎসা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে। ভর্তি থাকা রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক মতো পাচ্ছেন না বলে শুনছি। গত কাল বিকেলে এ নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে। তা মেটাতে পুলিশও এসেছিল।’’ শাহিদের মতে, আন্দোলনের অধিকার চিকিৎসকদের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তাঁদের একটানা এত দিনের কর্মবিরতির অধিকার থাকতে পারে না। এসএসকেএমেই চিকিৎসার জন্য এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে স্ট্রেচারে করে ঘুরছিলেন প্রতাপচন্দ্র ঘোষ নামে এক রোগী। তাঁর এক পরিজন সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘জন্ডিস হয়েছে ওঁর। বিলিরুবিন ২২। ভর্তি হওয়া দরকার। কিন্তু কর্মবিরতি চলায় হাসপাতাল ভর্তি নেবে কি?’’

ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তির টিকিট কাউন্টারের সামনে অন্যান্য দিন যেখানে ভিড় উপচে পড়ে, এ দিন সেই জায়গা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। কাউন্টারে বসা হাসপাতালের এক কর্মী বললেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের কী পরিস্থিতি, অনেকেই জানেন। অনেকেই দূর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসেন। এসে যদি পরিষেবা না পান? সেই আশঙ্কায় অনেকেই
আসছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE