ভোগান্তি: বারাসত থেকে আর জি কর হাসপাতালে এসেছিলেন অসুস্থ রিজিয়া বিবি। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে গাড়িতে শুয়ে ছটফট করলেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
কর্মবিরতি ছিলই। কিন্তু, সময় গড়াতেই অবস্থান-বিক্ষোভ মঞ্চে এসে আন্দোলনকারী আবাসিক পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা জরুরি পরিষেবা প্রদান থেকেও বিরত থাকবেন। যার ফলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার সকাল থেকে কার্যত সারা দিনই রোগীদের ভোগান্তি চলল। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিয়েই এখন বড়সড় সংশয় দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা করাতে এসে ফিরে যাওয়া রোগীর পরিজনদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘এমন জঘন্যতম ঘটনায় অভিযুক্তের কঠিন শাস্তি আমরাও চাই। কিন্তু আমাদের কথাও একটু ভেবে দেখা প্রয়োজন।’’
চিকিৎসক-পড়ুয়াদের কর্মবিরতির জেরে আর জি কর তো বটেই, রাজ্যের সব হাসপাতালেই তার প্রভাব পড়েছে। সে জন্য এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, ছুটিতে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে হবে। এবং নতুন করে কাউকে এখন ছুটি দেওয়া হবে না।
কিন্তু রবিবার সকাল থেকে আর জি করে রোগী-ভোগান্তির ছবিই বেশির ভাগ সময়ে দেখা
গিয়েছে। যেমন, বুকের একটা অংশ ফেটে রক্ত বেরোচ্ছিল বারাসতের বৃদ্ধা রিজিয়া বিবির। পরিজনেরা গাড়ি ভাড়া করে তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন আর জি করে। এ দিন সকালে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ট্রমা কেয়ারের সামনে গাড়িতে শুয়ে ওই বৃদ্ধা ছটফট করলেও মেলেনি কোনও চিকিৎসক। আবার চার বছরের আরিয়ান মোল্লার হাতে চোট লাগলেও চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে ভাঙড়ের বাসিন্দা ওই বালকের পরিজনদের। ছেলেকে কোলে নিয়ে মা মুসলিমা বিবি বলেন, ‘‘জরুরি বিভাগে গেলাম, ডাক্তার নেই। এক জন বললেন ট্রমা কেয়ারে যেতে। সেখানেও গিয়ে দেখলাম, হাড়ের চিকিৎসার কোনও ডাক্তার নেই। এখন এন আর এসে গিয়ে দেখি!’’
রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। তাই রোগীর চাপ ছিল অনেকটাই
কম। কিন্তু জরুরি পরিষেবার জন্য আসা রোগীদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। আচমকাই কানে যন্ত্রণা হচ্ছিল বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মঞ্জু যাদবের। জরুরি বিভাগে গিয়ে, খানিক ক্ষণ অপেক্ষার পরেও কোনও চিকিৎসক না মেলায় কানে রুমাল চেপে বেরোনোর সময়ে কাঁদতে কাঁদতে ওই প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘সকলকে অনেক অনুরোধ করলাম, কেউ দেখলেন না। এখন কোথায় যাব জানি না।’’
কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে অন্তর্বিভাগেও। পেটের ব্যথায় গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এক যুবক। কিন্তু তাঁকে শুধু স্যালাইন দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ওই রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘‘কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। কী করব! বাঁচাতে হলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’
আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেন, চুক্তিভিত্তিক সমস্ত কর্মীকে পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদেরও নির্দিষ্ট পোশাক পরা ও পরিচয়পত্র ঝোলানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু, এ দিন জরুরি বিভাগ ও অন্যত্র কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের প্রায় সকলেই পোশাক পরলেও, কারও পরিচয়পত্র ছিল না। কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন তাঁরা পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখেননি? প্রশ্ন করতেই কেউ পকেট থেকে বার করে তা পরে নেন। কেউ আবার অফিসে ছোটেন, ব্যাগ থেকে তা নিয়ে আসতে। তা দেখে, ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনেরা বলেন, ‘‘কোনও কারণে কার্ড ওয়ার্ডে রেখে নীচে নামলে ওঁরা উপরে উঠতে দেন না। দুর্ব্যবহার করেন। আর এখন নিজেরাই পরিচয়পত্র ছাড়া ডিউটি করছেন!’’
এ দিন দুপুরে আইসিইউ-তে থাকা পরিজনকে দেখতে সোদপুর থেকে এসেছিলেন পলি ঘোষ। হাতে প্লাস্টার বাঁধা ওই তরুণীর অভিযোগ, ‘‘সিকিউরিটিকে অনুরোধ করলাম, এক বার যেতে দিন। দূর থেকে এসেছি, একটু দেখেই চলে যাব। কিন্তু উনি কার্ড কেড়ে নিয়ে
দুর্ব্যবহার করতে লাগলেন।’’ রাতে নিউ ব্যারাকপুর থেকে আসা এক রোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না মেলায় জরুরি বিভাগের সামনে অসহায়ের মতো তাঁরা ঘুরছিলেন। তাই দেখে আন্দোলনকারী কয়েক জন চিকিৎসক ওই রোগীকে ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাতে জরুরি পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy