থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে অপেক্ষায় জাকির ও করিমা। —নিজস্ব চিত্র।
১২ ঘণ্টার বেশি কেটে গেলেও এনআরএস-এ এখনও চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বিক্ষোভ। তাতে চরম হেনস্থার শিকার হাসপাতালে ভর্তি রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। হাসপাতালের মূল গেটে তালা পড়েছিল আগেই। মঙ্গলবার দুপুরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শিয়ালদহ উড়ালপুলের দিকের গেটেও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত গেট খোলা হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। রোগীদের পরিবারের কাউকেই হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না তাঁরা।
এমন পরিস্থিতিতে গেটের বাইরেই হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছেন অনেকে। বেলা বাড়লে যদি ঢুকতে পারেন, সেই আশায় রয়েছেন অনেকে। আবার প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে কিছু মানুষকে।
আরও পড়ুন: এনআরএস কাণ্ডের জের, রাজ্য জুড়ে সব মেডিক্যাল কলেজেই প্রতীকী কর্মবিরতি, বন্ধ আউটডোর পরিষেবা
মালদহের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন, তাঁর ১৪ মাসের ছেলে জিশান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রতি মাসে এক বার করে রক্তের প্রয়োজন হয় তার। স্ত্রী করিমা খাতুন, জিশানকে এ দিন এনআরএসেএসেছিলেন জাকির। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন, হাসপাতালের গেট বন্ধ। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ছেলের ‘থ্যালাসেমিয়া’র কথা বলেও কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি । শেষমেশ রক্ত না নিয়েই মালদহে ফিরে যেতে হবে কি?দিনের শেষে আশঙ্কায় জাকির। তবে সাধ্য মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্বামীর উপর ভরসা রেখে এনআরএসের সামনের রাস্তায় ছেলে কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন করিমা। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ছেলেটাকে রক্ত দিতে দিল না ওরা!’’
সন্তান প্রসব করতে গিয়ে, গত ১৮ মে মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর হয় ব্যারাকপুরের বাসিন্দা তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাসতুতো বোন কাবেরী চক্রবর্তীর। শিশুটি মারা গিয়েছে আগেই। তবে বোনকে নিয়ে যমে-ডাক্তারে টানাটানি চলছেই। প্রত্যেক দিনই বোনকে দেখতে হাসপাতালে আসেন তপনবাবু। এ দিনও এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তারদের বিক্ষোভে আজ হাসপাতালে ঢুকতেই পারেননি তিনি। আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ করলে তাঁকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, আজ দেখা করা যাবে না। চিকিৎসা যেমন চলছে চলবে। তবে বোনের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তপনবাবু।
রাজু শেখের বাড়ি মালদহে। তাঁর শাশুড়ি মনোয়ারা বিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এনআরএসে ভর্তি। প্রতিদিনই বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং ওষুধপত্রের প্রয়োজন হয় তাঁর। হাসপাতালের খাবার খেতে দেওয়া হয় না তাঁকে। চিকিৎসার কারণেই শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন রাজু। বাড়ি থেকে শাশুড়ির জন্য খাবার নিয়ে আসেন তিনি। এ দিনও বাড়ির খাবার নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তিনি। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁকে সটান বলে দেন, ‘‘আজ কোনও খাবার উপরে যাবে না। যত ক্ষণ না মীমাংসা হচ্ছে, দেখাওকরা যাবে না।’’ তাই শাশুড়ির সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে রাজু শেখকে।
আরও পড়ুন: রোগীর আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত, এনআরএস-এ তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের
তবে শুধু এই ক’জনই নন, এই বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালে ভর্তি নিজেদের রোগীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি কয়েকশো পরিবার। আবার অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে এসেও, ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy