Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Medical College And Hospital

RG Kar Hospital: পরীক্ষা-ওষুধের জন্য ‘বহির্মুখী’ না হলে গতি নেই বহু ক্ষেত্রে

শহর বা জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিনই এই চিত্র দেখা যায়। বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখানোর পরে বহু রোগীকেই ছুটতে হয় বাইরে ওষুধের দোকানে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ, আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৫
Share: Save:

হাসপাতালের গেট সংলগ্ন পাইস হোটেলের সামনে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যুবক। চোখেমুখে অসহায়তার ছাপ স্পষ্ট। হাতে ধরা এক গোছা কাগজের মধ্যেই একটা বিলের দিকে বার বার তাকাচ্ছেন তিনি।

কী হয়েছে?

যুবক বললেন, ‘‘পাঁচশো টাকা নিয়ে এসেছিলাম। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতেই ৩৫০ টাকা খরচ হয়ে গেল। সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। এখন খাবার কিনলে বাড়ি ফিরব কী করে?’’ পেশায় ঠেলাগাড়ি চালক মহম্মদ নইমুদ্দিন বারাসতের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে স্ত্রী সেলিমা বিবিকে নিয়ে সাতসকালেই ছুটে এসেছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মাঝেমধ্যেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে সেলিমার। নইমুদ্দিনের দাবি, কয়েকটি ওষুধ হাসপাতালে বিনামূল্যে মিললেও বাকি সব কিনতে হয়েছে। আর তাতেই বিপদে পড়েছেন তাঁরা।

শহর বা জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিনই এই চিত্র দেখা যায়। বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখানোর পরে বহু রোগীকেই ছুটতে হয় বাইরে ওষুধের দোকানে। কারণ, প্রেসক্রিপশনে লেখা সব ওষুধ হাসপাতালে মেলে না। অনেকে আবার জানেনও না যে, হাসপাতালের কোথায় গেলে বিনামূল্যে ওষুধ মিলবে। একাংশের এমনও অভিযোগ, হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে এতই ভিড় থাকে যে, লাইনে দাঁড়ালে বাড়ি ফেরার ট্রেন বা বাস ধরা সম্ভব হয় না।

শুধু ওষুধ নয়, বহির্বিভাগের প্রেসক্রিপশনে লেখা বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ পেতেও এত দেরি হয় যে, অগত্যা যেতে হয় বেসরকারি পরীক্ষাগারে। আর জি করে আসা রাজারহাটের মফুজা বিবি ইউএসজি-র তারিখ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, ডিসেম্বরের আগে হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার জন্য অনেক বাড়ি থেকে কাজ চলে গিয়েছে। এ দিকে, পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তবু বাইরে থেকেই করাতে হবে।’’ এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা, ডায়মন্ড হারবারের অমূল্য নিয়োগী স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজ করছিলেন, কোথায় গেলে কিছুটা কম খরচে রক্ত পরীক্ষা করানো যাবে।

৫২ বছরের প্রৌঢ় বললেন, ‘‘এখানে বলছে, সকালে এসে রক্ত দিতে হবে। এত দূর থেকে আবার আসার ক্ষমতা নেই। ওষুধেই প্রায় তিনশো টাকা খরচ হল। অনেক দিন ধরে বুকে ব্যথা ও কিডনির অসুখে ভুগছি। কাজও নেই।’’ হাসপাতালের বাইরে একটি দোকান থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরোনোর সময়ে কৃষ্ণনগরের দেবগ্রামের বাসিন্দা রেজাউল হক ফোনে বলছিলেন, ‘‘ট্রেনের সময় তো হয়ে এল। বাসে গেলে ট্রেন মিস হবে।
ট্যাক্সিতে যাওয়ার টাকাও তো আর নেই।’’

আট বছরের নাতি সুলেমানের চিকিৎসা করাতে এসেছেন রেজাউল। হাসপাতালে সব ওষুধ না পেয়ে বাইরে থেকে প্রায় ৬০০ টাকা খরচ করে তা কিনেছেন। বললেন, ‘‘এ বার ট্রেন না পেলে তো স্টেশনে থাকতে হবে।’’ বিনামূল্যে পাওয়া ওষুধের গুণগত মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসা ফাল্গুনী হালদারের। তাঁর কথায়, ‘‘ক’দিন আগে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়েছিলাম। কিন্তু স্ট্রিপ থেকে ট্যাবলেট বার করে দেখি, সেটা ভেজা। ধরতেই গুঁড়িয়ে গেল।’’ ওই হাসপাতালের তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁ দিকের ভবনের তিনতলায় ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র। লাইন নেমেছে একতলা পর্যন্ত। ভিড় ঠেলে বেরিয়ে ফাল্গুনীর দাবি, ‘‘দাদার অস্ত্রোপচার হবে। কিছু ওষুধের দরকার। একটাও পেলাম না।’’

হাসপাতালের উল্টো দিকের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে হতাশার সুর মনোজ পণ্ডিতের গলাতেও। বললেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে স্ত্রীর কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। হাসপাতালে না হওয়ায় বাইরে করাতে এসেছি। বিল হয়েছে আড়াই হাজার। এক হাজার জোগাড় করেছি। বাকিটা কোথায় পাব?’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিনামূল্যে পরিষেবা পেতেই এখন বহির্বিভাগে বছরে প্রায় ১৬ কোটি রোগী আসছেন। জেনেরিক নামেই ওষুধ লিখতে ও তা মজুত রাখতে সব হাসপাতালকে বলা হয়। তবে চিকিৎসকদের সব সময়ে জানা থাকে না যে, কোন ওষুধটি স্টকে রয়েছে। প্রবীণ চিকিৎসকেরা বিষয়টিতে সড়গড় হলেও নতুনদের ক্ষেত্রে প্রথমে একটু সমস্যা হয়।’’ তাঁর আরও দাবি, পিপিপি মডেলের
পরীক্ষা কেন্দ্রের উপরে নির্ভরতা কমাতে রাজ্যের সমস্ত স্তরের হাসপাতালেই পরীক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নে পদক্ষেপ করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy