বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় স্বপন বৈদ্য। বৃহস্পতিবার, পিজিতে। নিজস্ব চিত্র।
একরাশ উদ্বেগের মধ্যেই ৭ ডিসেম্বর বিকেলের একটি ফোনে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল গড়িয়ার বৈদ্য পরিবারে। সময় নষ্ট না করে ওই দিন রাতেই ৫৮ বছরের স্বপন বৈদ্যকে নিয়ে এসএসকেএমের ‘স্কুল অব ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজ়িজ়েস’ (এসডিএলডি)-এ পৌঁছে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। পরের দিন, অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর দুপুর পৌনে ২টো থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর যকৃতের প্রতিস্থাপন।
চরম উৎকণ্ঠায় কেটেছিল প্রায় ১২ ঘণ্টা। সেই অস্ত্রোপচারের পরে কেটে গিয়েছে ১৬ দিন। বৃহস্পতিবার ‘এসডিএলডি’র ক্রিটিক্যাল কেয়ার থেকে সকলের সামনে নিয়ে আসা হল সিআইএসএফের কর্মী স্বপনবাবুকে। চিকিৎসকেরা জানালেন, ওই অস্ত্রোপচারের জন্য দিল্লি থেকে প্রশিক্ষক চিকিৎসকদের আর আসতে হয়নি। বদলে পিজি-র লিভার প্রতিস্থাপনের শল্য চিকিৎসক সুকান্ত রায়, সোমক দাস, তুহিনশুভ্র মণ্ডল, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক তাপস ঘোষ, সৈকত ভট্টাচার্য, দিব্যেন্দু গড়াই, হেপাটোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী এবং শেখ মৈউদ্দিন আহমেদরাই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আজ, শুক্রবার স্বপনবাবুকে ছুটি দেওয়া হতে পারে।
এ দিন ‘এসডিএলডি’র সেমিনার হলে স্বপনবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর মেয়ে তৃপ্তি বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগে লিভার পাওয়া গেলেও তা বাতিল হয়েছিল। কারণ, ব্রেন ডেথ হওয়া ওই রোগীর যকৃতের অবস্থা ভাল ছিল না। তখন খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর ফোন পাওয়ার পরে সারা ক্ষণ শুধু প্রার্থনা করেছি, যাতে আর বাতিল না হয়।’’ তিনি জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে হাত-পা ফুলে যাচ্ছিল স্বপনবাবুর। কর্মস্থলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো ছোপ পড়ছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হলদিয়ার কর্মস্থল থেকে ছুটিতে বাড়ি ফেরেন ওই প্রৌঢ়। আচমকাই মুখ ফুলে যায় ও নিঃশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়।
তৃপ্তি আরও বলেন, ‘‘স্থানীয় হাসপাতাল জানায়, যকৃতের সমস্যা রয়েছে বাবার। এর পরে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই যকৃৎ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি জানানো হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে পিজি-তে চিকিৎসা শুরু হয়।’’
সেই সময় থেকেই স্বপনবাবুর নাম নথিভুক্ত হয়েছিল ‘রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (রোটো)-এর কাছে। গত ৭ ডিসেম্বর পিজি-র ট্রমা কেয়ারে ব্রেন ডেথ হওয়া সূর্যকান্ত মণ্ডলের যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয় স্বপনবাবুর শরীরে। ‘এসডিএলডি’র ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের ইন-চার্জ, চিকিৎসক তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘যকৃৎ প্রতিস্থাপনে শল্য, অ্যানাস্থেশিয়া, ক্রিটিক্যাল
কেয়ার-সহ পাঁচ-ছ’টি বিভাগের চিকিৎসকেরা যুক্ত থাকেন। দীর্ঘ প্রশিক্ষণে সমস্ত বিভাগই দক্ষতা বৃদ্ধি করেছিল। তবে যকৃতের ‘হেপাটিক ধমনী’ জুড়তে অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন হয়। গত জুলাইয়ে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সেই পরীক্ষাতেও আমরা পাশ করে যাই।’’
এ দিন পিজি-তে এসেছিলেন এক যুগ ধরে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের প্রশিক্ষক হিসাবে হাজির থাকা চিকিৎসক সুভাষ গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রশিক্ষণ আজ সার্থক হল। পিজি-র মতো অন্যান্য সরকারি
হাসপাতালেও যকৃৎ প্রতিস্থাপন হওয়া জরুরি। আশা করি, আগামী দিনে সেটিও হবে। যে কোনও প্রয়োজনে আমি সব সময়েই পাশে থাকব।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন পিজি-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপার পীযূষ রায়, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালি প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy