—প্রতীকী চিত্র।
নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় আট মিনিট দেরিতে পৌঁছেছে মেট্রো। যার জেরে দু’টি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ মিনিট! সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে সেই কারণেই থিকথিকে ভিড় চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে। গাদাগাদি ভিড় ঠেলে কোনও মতে কামরায় উঠেছিলেন মানিকতলার বাসিন্দা নিশীথ বল্লভ। গন্তব্য, গিরিশ পার্ক। সেই পর্যন্ত কোনও মতে বেঁকে দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজার কাছে। বেশি ভিতরে ঢোকার সুযোগ হয়নি। কিন্তু নামার সময়ে পরিস্থিতি এমন হল যে, প্রথমে যেন কিছু ক্ষণ খণ্ডযুদ্ধ চলল! এর পরে দড়ি টানাটানির কায়দায় প্রাণপণে নিজের ব্যাগ টেনে বার করলেন। এসি কামরা থেকে নামতেও যেন কালঘাম ছুটে গিয়েছে! কোনও মতে বললেন, ‘‘ঝাড়া প্রায় ২০ মিনিট দেরি। মেট্রো সময়জ্ঞান হারিয়েছে। এই অসহ্য গরমে আর ধৈর্য থাকছে না।’’
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মেট্রো পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের বড় অংশ এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে, আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। প্রতিদিনই তাঁরা মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। লেখা হচ্ছে, ‘মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ সব ঠিক আছে বলে জানালেও আসলে রেক চুরি যাচ্ছে!’ কেউ আবার লিখছেন, ‘যদি চুরি না-ই যায়, তা হলে সময়ে মেট্রো আসছে না কেন? কেন কোনও ঘোষণা ছাড়াই সময় বদলে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মের ট্রেন আসার সময়-যন্ত্রে?’
এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা বুঝতে শুক্রবার ঘোরা হয়েছিল কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো বা ‘ব্লু লাইন’-এ। কাজের দিনে দু’দিক থেকেই সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে মেট্রো চলাচল শুরু হয় এই লাইনে। দু’দিক থেকেই শেষ মেট্রো ছাড়ে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে। সব মিলিয়ে ২৮টি রেক চলে। মোট ২৮৮টি ‘ট্রিপ’ হয় সারা দিনে। ব্যস্ত সময়ে দু’টি ট্রেনের মধ্যে ঘোষিত সময়ের ব্যবধান থাকে ছ’মিনিট। ব্যস্ত সময় পার হওয়ার পরে মেট্রো চলে সাত মিনিট অন্তর। রাত সওয়া ৯টার পর থেকে ট্রেন চলে ১০ মিনিট অন্তর। দেখা গেল, দিনের শুরুতেই সময় মিলছে না। গিরিশ পার্ক স্টেশনে দাঁড়ানো যাত্রী সুমেধা কর কালীঘাটে যাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। তাঁর দাবি, ‘‘ঘড়িতে দেখাচ্ছিল, মেট্রো আসবে ১০টা ৩৪ মিনিটে। কিন্তু সেটি এসেছে ১০টা ৪১ মিনিটে। তাতে এতই ভিড় ছিল যে, ওঠা যায়নি।’’ এর পরে ১০টা ৪৬ মিনিটের মেট্রো ধরেন তিনি। রবীন্দ্র সদন থেকে দমদমের দিকের ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা সুজয় দাসের আবার দাবি, ‘‘বাড়ি থেকে বেরিয়ে কবি সুভাষ হয়ে প্রতিদিন মেট্রোয় দমদম যাই। কাজ থাকায় রবীন্দ্র সরোবরে নেমেছি। ৮টা ২২ মিনিটের মেট্রো সকালে স্টেশনে ঢুকেছে চার মিনিট দেরিতে। ওই সময়ে এমনিতেই অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে। তখন দু’মিনিট দেরিও অসহ্য মনে হয়।’’
বিকেলে পার্ক স্ট্রিট থেকে বাড়ি ফেরার ভিড় মেট্রোয় ওঠার আগে তমালিকা দত্ত নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘যে দিন তাড়াতাড়ি বেরোনো যায় অফিস থেকে, সে দিন শুধু ভিড় আর মিনিট কয়েকের দেরি সহ্য করলেই মিটে যায়। কিন্তু রাত হলে আর দেখতে হবে না! ধরুন, কোনও স্টেশনে ৯টা ২১ মিনিটে একটি মেট্রো এল। কেউ সেটি অল্পের জন্য ধরতে পারলেন না। নিয়ম অনুযায়ী, পরের মেট্রোর আসার কথা ৯টা ৩১ মিনিটে। কিন্তু দেখা যায়, কোনও ঘোষণা ছাড়াই সময় বদলে গেল। পরের মেট্রো এল ৯টা ৪১ মিনিটে। মানে ২০ মিনিট অপেক্ষা। পরের প্ল্যাটফর্মগুলিতে এই মেট্রোই পৌঁছবে ২৫-৩০ মিনিট পরে। কী রকম ভিড় হতে পারে ভাবুন!’’ দীর্ঘদিন মেট্রোয় যাতায়াত করা এক যাত্রী আবার বললেন, ‘‘মেট্রো পরিষেবা ঠিকঠাক আছে কি না বা কোনও ট্রেন বাতিল হল কি না, তা জানিয়ে প্রতিদিন দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠাতে হয় কর্তৃপক্ষকে। সেই রিপোর্টে সব ট্রেন চলছে বলে জানানো হলেও গোপনে ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে প্রতিদিন। সবটাই ভূতুড়ে ব্যাপারের মতো।’’
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র যদিও বললেন, ‘‘সময় নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ট্রেন বাতিল করার কথা ঠিক নয়। কিছু প্রযুক্তিগত ব্যাপার থাকে, তাতেই দেরি হয়। দ্রুত এই সমস্যাও মিটে যাবে।’’ ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, ঠিক কবে সমস্যা মিটবে? এ প্রশ্নের অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy