প্রতিবাদ: দুর্ঘটনার পরে যাত্রী-বিক্ষোভ। শনিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
কামরার দরজায় সেন্সর ছিল না? যদি থাকে, তা হলে সেটি কাজ করল না কেন? যদি সেন্সর এ ভাবে অকেজো থাকে, তা হলে তো এমন দুর্ঘটনা যে কোনও সময়ে, যে কোনও যাত্রীর ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে?
শনিবারের দুর্ঘটনার পরে এই সব প্রশ্ন ঘিরেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মেট্রোযাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, দরজায় সেন্সর লাগানো থাকে, এই আশ্বাসে মেট্রোর দরজা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও অনেককেই দেখা যায় হাত বা পা বাড়িয়ে দিতে। তাতে দরজা যে খোলে না, তেমনটাও নয়। তা হলে শনিবার সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে মেট্রোর দরজায় হাতের মুঠো আটকে যাওয়ার পরেও তা খুলল না কেন? তা হলে কি ঝাঁ-চকচকে নতুন রেকগুলি বিকল সেন্সর নিয়েই কাজ শুরু করেছে?
এক যাত্রী সম্বিৎ রায়ের কথায়, ‘‘এ কেমন পরিষেবা বলতে পারেন? যেখানে বিপদ হলে ট্রেন থামানোর যন্ত্রটাই কাজ করে না! এমনকি, হাত আটকে থাকলেও কী ভাবে ট্রেন চলতে শুরু করে দেয়, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
শহরের মেট্রো পরিষেবার একাধিক গলদ নিয়ে এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যাত্রীরা। একে তো প্রায়ই শহরের কোনও না কোনও মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় মেট্রো চলাচল। ভোগান্তির শিকার হন অসংখ্য যাত্রী। তার মধ্যে এ দিনের এই ঘটনা অনেকটাই যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।
পরিষেবা চালুর পরে মেট্রোয় ঠাসাঠাসি ভিড়। শনিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
এ দিন পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেল সুরক্ষা বাহিনীর কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও। কারণ, সমস্ত প্ল্যাটফর্মের শুরু ও শেষে থাকেন আরপিএফ কর্মীরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের। তাঁদের প্রশ্ন, এ দিনের ঘটনা কেন চোখে পড়ল না ওই স্টেশনে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীদের? আর সেই প্রশ্ন করা হলে ওই প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে থাকা এক মহিলা আরপিএফ কর্মী যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। তাতেই যাত্রীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
নতুন রেকে এ দিন সেন্সর যেমন কাজ করেনি, তেমনই কামরার ভিতরে কাজ করেনি আপৎকালীন অ্যালার্মের বোতামও। এমনকি, কুড়ি মিনিট ধরে যখন ট্রেনটি দাঁড়িয়ে ছিল, তখনও জানার উপায় ছিল না কী ধরনের বিপদ ঘটেছে। কারণ, দরজা পর্যন্ত খোলেনি ওই মেট্রোর। কোনও ঘোষণাও হয়নি। গড়িয়ার বাসিন্দা সুব্রত হালদার বলেন, ‘‘একেবারে পিছনের কামরায় ছিলাম। আচমকা ট্রেন দাঁড়িয়ে গিয়ে পোড়া গন্ধ পাওয়ায় ভাবি, আবার বোধহয় আগুন লাগল।’’ অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন।
এ দিনের ঘটনার পরে যাত্রীরা অনেকেই নিজেদের সাবধানতার প্রয়োজনের কথাও সামনে এনেছেন। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘বাচ্চাদের নিয়েও অনেক বাবা-মাকে হাত বাড়িয়ে মেট্রোর দরজা বন্ধ হওয়া ঠেকাতে দেখেছি। এ দিনের পরে আশা করি, তাঁরা সতর্ক হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy