টালা সেতু বন্ধের জেরে গাড়ির প্রবল চাপ আর জি কর রোডে।
দু’দিনের ‘ক্লাস টেস্টের’ পরে সোমবার ছিল চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রথম দিন। পয়লা ফেব্রুয়ারি টালা সেতু বন্ধের পরে এটি ছিল আবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনও। তাই বাস, গাড়ির চাপ সামলে টালা ও সংলগ্ন এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার পরীক্ষায় কলকাতা পুলিশ কেমন ফল করবে, এ দিন ছিল তারই পরীক্ষা।
ভোর থেকে রাস্তায় অতিরিক্ত দেড়শো পুলিশকর্মী মোতায়েন, বড়কর্তাদের নজরদারিতে সেই পরীক্ষায় পুলিশ ‘উতরে’ গিয়েছে বলেই জানাচ্ছেন সকলে। কিন্তু তার পরেও টালা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে! লোকজনের দাবি, টালার ‘ম্যাচ’ ওয়ান ডে নয়, টেস্ট। সেখানে মাঝপথে ‘খেলোয়াড়’দের ক্লান্তি আসতে পারে। তখন ফের যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।
কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশের নজরদারি তো ছিলই। পাশাপাশি সাধারণ লোকজন ও গাড়িচালকেরা সচেতন ভাবে নির্দেশিকা মেনে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেছেন। তাই যানজট প্রায় হয়নি।’’
সেতু পুরো ভাঙার পরে হাঁটাচলার জন্য ফুট ওভারব্রিজের দাবি জানিয়ে টালার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সেঁটেছেন স্থানীয়েরা। এ দিন অনেক বাবা-মাকে দেখা গিয়েছে, সন্তান কোলে পুরসভার এক নম্বর বরো অফিস থেকে বেরিয়ে টালা সেতু ধরে হেঁটে শ্যামবাজারের দিকে আসছেন। ক্যানাল ইস্ট রোডের বাসিন্দা আরাধনা চৌধুরী পণ্ডিত বলেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে বরো অফিসে গিয়েছিলাম জন্মের শংসাপত্র আনতে। এখন না হয় হেঁটে যাতায়াত করছি। কিন্তু কয়েক দিন পরে কী ভাবে রেললাইন পারাপার করব?’’
দমদম রোড, রাজা মণীন্দ্র রোড, ইন্দ্র বিশ্বাস রোড, কে বি সরণি, কাশীপুর রোড, ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ-সহ বিভিন্ন রাস্তায় এ দিন তেমন যানজট হয়নি। কয়েক হাত অন্তর দেখা গিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের। নির্দিষ্ট স্টপ ছাড়া দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি কোনও গাড়িকে। ট্র্যাফিক ব্যবস্থা দেখতে এ দিন পথে নেমেছিলেন বিশেষ পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম, অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ, যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে, ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার-সহ অন্য আধিকারিকেরা।
তবে দীর্ঘক্ষণ যানজটে ফেঁসে না থাকলেও সারা দিন গাড়ির প্রবল চাপ ছিল বেলগাছিয়া সেতু, আর জি কর রোড, বাগবাজার এলাকা এবং লকগেট উড়ালপুলে। পুলিশকর্তাদের দাবি, একে তো বেলগাছিয়া সেতুর উপরে ট্রামলাইন রয়েছে। তার উপরে আর জি কর হাসপাতালের সামনে রোগীদের বাস ধরার ভিড়। সব মিলিয়ে ওই সেতুতে গাড়ির লাইন পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে আর জি কর রোডেও গাড়ির গতি কমছে। এ দিনও বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় বসে ছিলেন কয়েক জন রোগী। কেউ আবার হেঁটেই বেলগাছিয়া সেতু পেরিয়েছেন।
লালবাজারের খবর, কলকাতামুখী গাড়ির চাপ কমাতে সকালে কয়েক বার কাশীপুর রোড এবং কাশীপুর সেতু দিয়ে শুধু দক্ষিণ দিকে গাড়ি চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে খগেন চ্যাটার্জি রোড দিয়েও সকাল ন’টার পর থেকে দফায় দফায় বি টি রোড থেকে কাশীপুরের দিকে গাড়ি চালানো হয়েছে। পরে অবশ্য ওই দুই রাস্তাই উভয়মুখী করে দেওয়া হয়।
তবে এ দিন কাশীপুর রোড দিয়ে আসা গাড়ি যখন শ্যামবাজারের দিকের রাস্তায় উঠছে, তখন উল্টো দিকে লকগেটমুখী গাড়ি আটকাতে হচ্ছে। এর ফলে বাগবাজারের রাস্তায় গাড়ির গতি ছিল কম। পাশাপাশি সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দুপুরে লকগেট উড়ালপুল দিয়ে লরি যেতে দেখা গিয়েছে।
দিনের বেলায় কী ভাবে ঢুকল পণ্যবাহী গাড়ি? ট্র্যাফিক আধিকারিকদের একাংশ মানছেন, ১০০ শতাংশ লরি আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে টালা ও সংলগ্ন রাস্তা যানজট-মুক্ত রাখার চেষ্টা চলছে, সেখানে এই লরি কি ভোগান্তি বাড়াবে না? এক ট্র্যাফিক কর্তা বলেন, ‘‘তেমনটা নয়। দিনে শুধু ছোট ও মাঝারি মালবাহী গাড়ি লকগেট উড়ালপুল দিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু উড়ালপুল দিয়ে যে গতিতে অন্য গাড়ি যাচ্ছে, তার সঙ্গে ওই মালবাহী গাড়ির তাল না মিললে সেটিকে আটকে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy