খোঁজ: আগুন নেভার পরে পোড়া জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টায় স্থানীয়েরা। বৃহস্পতিবার, সল্টলেকের এফডি ব্লকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বহু বছর ধরে অস্থায়ী কাঠামো বানিয়েই চলছিল দোকান থেকে গুদাম, সব কিছু। ছিল শাসকদল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ও। আর সবটাই সরকারি জমি দখল করে। বৃহস্পতিবার সকালে সল্টলেকের এফডি ব্লকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেল সে সব। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন গিয়ে ঘণ্টা পাঁচেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে জখম হন বিধাননগর পুরসভার এক সাফাইকর্মী। ঘটনার পরেই সরকারি জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গড়ে ওঠা ঝুপড়ি নিয়ে নড়ে বসেছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ একটি ডেকরেটর্সের গুদাম থেকে আগুন বেরোতে দেখেন এফডি ব্লকের ওই জমির দোকানদারেরা। তাঁরা জানান, দমকলকে খবর দেওয়া হলেও ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তিনটি দোকান ভস্মীভূত হয়ে যায়। একটি দোকান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বাইরে বেশ কয়েকটি ডেকরেটর্সের গুদাম ভস্মীভূত হয়। ওই জমিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে থাকা তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ও পুড়ে যায়। দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার রাখা ছিল। সেটি ফেটে যাওয়ায় আহত হন ভোলা পাইক নামে পুরসভার এক সাফাইকর্মী।
ওই জমিতেই দোকান ছিল মালতী মণ্ডল ও তাঁর ছেলে বাবু মণ্ডলের। আগুনের গ্রাসে সর্বস্ব গিয়েছে তাঁদের। বাবুর কথায়, ‘‘আমি দোকানে ঘুমোই। সকালে দোকানের বাইরে পরিষ্কার করার সময়ে দেখি, ডেকরেটর্সের গুদামে আগুন লেগেছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল।’’
আগুন যেখানে লেগেছিল, তার আশপাশে অনেকগুলি খাবারের দোকানও রয়েছে। সেখানে রান্না গ্যাসেই হয়। আগুন দেখে স্থানীয়েরাই গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের বাইরে বার করে আনেন। দমকলকর্মীরা জানান, সর্বত্রই কাপড়, বাঁশ, দরমা-সহ নানাবিধ দাহ্য বস্তু ঠাসা ছিল। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে ও সংশ্লিষ্ট জমির আশপাশে সিলিন্ডার-সহ নানা ধরনের দাহ্য বস্তু স্তূপ করে জড়ো করা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরেই বিধাননগর পুরসভা এলাকায় এবং পার্শ্ববর্তী জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া-২ পঞ্চায়েতের খালপাড়ে গজিয়ে ওঠা জবরদখলকারীদের অস্থায়ী আস্তানায় দু’বার আগুন লাগে। এ দিনের আগুনের তাপে গলে গিয়েছে পাশে থাকা পুর বাজারের নিকাশি পাইপ।
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ঝুপড়ি দোকানগুলিকে পাশের স্থায়ী বাজারে পুনর্বাসন দেওয়া নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই কাজ শুরুর আগেই এ দিন আগুনের ঘটনা ঘটল।’’ যদিও সল্টলেকে পুরসভার বিভিন্ন স্থায়ী বাজারের বাইরে সরকারি জায়গায় বাঁশ ও টিনের কাঠামো দিয়ে তৈরি অজস্র ঝুপড়ি দোকান রয়েছে। অভিযোগ, শাসকদলের নেতাদের একাংশের মদতেই সল্টলেকের বাইরের লোকজন ওই সব দোকান তৈরি করেছেন।
এ দিনের ঘটনার পরে ওই সব দোকান-সহ জবরদখলের সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্দেশ দেন, জমিটি পরিষ্কারের পরে চার দিক ঘিরে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জীবন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়, এমন কিছুই করতে দেওয়া হবে না। বেআইনি দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) রাজেশ চিরিমার জানান, ঘটনাস্থলে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু পৌঁছনোর পরেই পুরসভার বাজারগুলিতে ফায়ার অডিট করানোর জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেছেন তিনি। রাজেশ বলেন, ‘‘পুরসভার বাজার এবং তার আশপাশে ফায়ার অডিট হবে। তার আগে বাজারের বাইরে ভিডিয়োগ্রাফি করে দখলদারদের দোকানের ছবি তোলা হবে। বাজারের ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করতে দেওয়া হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy