অর্থভান্ডার: বেলঘরিয়ার রথতলার ফ্ল্যাট থেকে টাকা ভর্তি ট্রাঙ্ক বার করে আনা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
পাঁচ নম্বর ব্লকের ন’তলার ‘৮এ’ এবং দু’নম্বর ব্লকের তেতলার ‘২এ’ ফ্ল্যাটে কেউ এলে, তাঁর উপরে কড়া নজর রাখতে হবে। যিনি আসছেন (ভিজ়িটর), তাঁর সব তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে প্রবেশপথে থাকা রেজিস্টারে। তিনি গাড়ি নিয়ে এলে বেরোনোর সময়ে সেটি পরীক্ষা করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। ওই ফ্ল্যাটের মালিকের গাড়িও যদি আসে, তা হলে সেটিকেও পরীক্ষা করে তবেই ঢোকা ও বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হবে।
গত ২২ জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার শুরু হতেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন ওঁরা। বেলঘরিয়ার রথতলার ‘ক্লাবটাউন হাইটস্’ আবাসন কমিটির কর্তারা নিরাপত্তারক্ষীদের এমনই কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ, ওই আবাসনে ২০১৩ সাল থেকে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। যদিও কোনওটিতেই কেউ কখনও আসেননি। তবে বুধবার ওই দু’টি ফ্ল্যাটে ইডি হানা দেওয়ার পরে একটি থেকে কোটি কোটি টাকা ও সোনা যে পাওয়া যাবে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি অন্য আবাসিকেরা। বরং তাঁরা বিস্মিত। ২০১৯ সালে আবাসনের দুর্গাপুজোয় ২০০০ টাকা চাঁদা চাওয়ায় যিনি দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁর ঘরেই কি না ‘গুপ্তধন’!
এই কাণ্ড নিয়ে বেজায় বিড়ম্বনায় বাসিন্দারা। বেশির ভাগই বলছেন, ‘‘লজ্জাজনক ঘটনা। এখানে এমন করে টাকা ও সোনা জমিয়ে রেখেছিলেন, বোঝাই যায়নি।’’ অনেকেই জানাচ্ছেন, টালিগঞ্জে টাকা উদ্ধারের পরেই প্রকাশ্যে আসে অর্পিতার রথতলার ফ্ল্যাটের বিষয়টি। স্থানীয় এক দোকানির কথায়, ‘‘আগে আবাসনের নাম বললে অটোচালকেরা চিনতে পারতেন না। কিন্তু, টালিগঞ্জের ঘটনার পর থেকে এক নামে সকলে চিনছেন।’’ যদিও ‘লজ্জা’ সরিয়ে বুধবার ইডি থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের ‘বন্ধু’ হয়ে উঠেছিলেন আবাসনের প্রায় সব বাসিন্দাই। আবাসন কমিটির সভাপতি কল্লোল সিংহরায় বলেন, ‘‘অন্য আবাসিকদের নামে অনেক কথা রটানো হচ্ছে। তাতে বেশি অসম্মানিত হচ্ছি। যিনি টাকা, সোনা লুকিয়ে রেখেছিলেন, লজ্জা তো তাঁর।’’
আবাসনের সাতটি ব্লকে ৩০৫টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৫০টিতে লোক থাকেন। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে সমস্ত পুজো, অনুষ্ঠান হলেও কখনও সেখানে অভিনেত্রী অর্পিতাকে কেউ দেখেননি। তবে বুধবার তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশিতে আসা আধিকারিকদের খাওয়াদাওয়া থেকে পানীয় জল, চায়ের ব্যবস্থা করেন আবাসিকেরাই। আবাসন কমিটির সম্পাদক অঙ্কিত চুরারিয়া বলেন, ‘‘অফিসারেরা খুবই ভাল ব্যবহার করছিলেন। ওঁদের কয়েক বার শুধু চা খাইয়েছি। তবে খাবারের বিল ওঁরাই দিয়েছেন। আমরা শুধু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।’’
প্রায় ২০ ঘণ্টার তল্লাশি অভিযানের বেশির ভাগ সময়েই পাঁচ নম্বর ব্লকের সামনে ভিড় করেছিলেন আবাসিকেরা। কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এত টাকা কবে, কখন কী ভাবে নিয়ে এলেন? অর্পিতা তো কালেভদ্রে আসতেন।’ তল্লাশিতে থাকা আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ব্যাঙ্ককর্মী মিলিয়ে ৬০ জনের জন্য স্থানীয় হোটেল থেকে ২৪০টি রুটি, তরকারি, চানা মশলা, ডাল মাখানি, মটর পনিরের ব্যবস্থা করে দেন আবাসিকেরা। অর্পিতার উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের দম্পতি-বাসিন্দা থালা ও পানীয় জলের বন্দোবস্ত করেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশ্রামের জন্য ‘ব্লক ৫’-এর একতলার কমিউনিটি হল খুলে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, টাকার অঙ্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে, সেই খোঁজে থাকা সাংবাদিকদের জন্য পানীয় জল নিয়ে আসা, গভীর রাত পর্যন্ত চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা করেছিলেন আবাসন কমিটির কোষাধ্যক্ষ সঞ্জয় চন্দক। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনায় আমরা হতবাক তো বটেই। কিন্তু ইডি অফিসার ওসাংবাদিকেরা আমাদের অতিথি।’’ প্রয়োজনে মহিলা সাংবাদিকদের নিজেদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়েছেন মহিলা আবাসিকেরা। বৃহস্পতিবার সকালে বেলঘরিয়া কাণ্ডের জল্পনার অবসানের পরে, প্রায় সব আবাসিকই একযোগে বলেছেন, ‘‘ঘটনা যা-ই ঘটুক, আবাসনের মর্যাদা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy