—প্রতীকী ছবি।
তরুণীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগে এক নাবালক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পর্ণশ্রী থানা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, মদের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে তাঁকে প্রথমে বেহুঁশ করা হয়। এর পরে তাঁকে ধর্ষণ করে ওই পাঁচ জন। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে আড়াল করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় যায় সিপিএম। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিল বিজেপি। দুই দল হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে বিষয়টিকে অনভিপ্রেত বলে ব্যাখ্যা দেয় সিপিএম।
লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে ওই অভিযোগ দায়েরের পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে এক জন নাবালক। বাকি চার জনের নাম রথীন্দ্র নায়েক ওরফে শুভ, তমোজিৎ সর্দার, দেবজ্যোতি দত্ত এবং সঞ্জয় হালদার। রথীন্দ্র, তমোজিৎ এবং দেবজ্যোতি পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা। সঞ্জয়ের বাড়ি বি এস রোডে। ওই চার অভিযুক্তকে এ দিন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। সোমবার নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।’’ অন্য দিকে ধৃত নাবালককে জুভেনাইল কোর্টে হাজির করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, পুলিশ জানিয়েছে, কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীর পরিবারের তরফে বুধবার প্রথমে যৌন হেনস্থা, ভয় দেখানো ও জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। যার ভিত্তিতে সে দিনই তিন জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তারা জামিন পায়। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ওই তরুণীকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছিল বলে প্রথমে তাঁর পরিবার অভিযোগ করে। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে নির্যাতিতার পরিবার নতুন করে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলে ওই তিন জন-সহ বাকি দু’জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে এক জন নাবালক।
পুলিশ সূত্রের খবর, নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে অভিযুক্তদের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। মঙ্গলবার রাতে পর্ণশ্রী থানা এলাকার একটি বাড়িতে পার্টি চলছিল। মদ্যপান করা হচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে নির্যাতিতাকে মদের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয় অভিযুক্তেরা। সেই মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে দেওয়া হয় ওই তরুণীকে। সেই অবস্থায় তাঁকে নাবালক-সহ পাঁচ অভিযুক্ত ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই বাড়ি থেকে গোলমালের আভাস মিলতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নির্যাতিতাকে তাঁর পরিজনেরা এসে নিয়ে যান বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সূত্রের খবর, ওই আসরে আর এক তরুণীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, পুলিশের তরফ থেকে দ্বিতীয় তরুণীর বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ঘটনার রাতেই নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের তরফে তিন জনের নামে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তবে আদালত থেকে ধৃতেরা জামিন পেয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিন জন-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। যার তদন্তে নেমে পুলিশ শুক্রবার পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, এসএসকেএমে নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ গণধর্ষণের মামলা দায়ের করতে গড়িমসি করেছে। ধৃতদের কেউ কেউ শাসকদলের এক নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রথমে লঘু ধারায় মামলা করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। যদিও লালবাজারের কর্তাদের দাবি, যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা হয়েছে। গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার পরেই সব অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন পর্ণশ্রী থানায় বিক্ষোভ দেখাতে যান বিজেপি ও সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। যা ঘিরে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে বিজেপি সেখানে
আন্দোলন চালায়। সিপিএমের লোকজন সন্ধ্যায় থানায় ঢুকতে গেলে দু’তরফে বিবাদ শুরু হয়। শেষে তা মারপিটে গড়ায়। বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলের বি-টিম হিসেবে কাজ করছে সিপিএম। ওদের তৃণমূল বিরোধিতা লোক দেখানো।’’
সিপিএমের আবার দাবি, তৃণমূলের লোকজন বিজেপিতে ঢুকে তাদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেছেন। সিপিএম নেতা কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ঘটনার মূল অভিযুক্ত ১৩০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি নিজেই। তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ দেখাই। বিজেপির সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা অনভিপ্রেত। বিজেপি বর্বরের দল। আমরা বলেছিলাম, সন্দেশখালি আর হাথরস পৃথক নয়। তখন তারা মারমুখী হয়ে ওঠে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy