Advertisement
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
school student

পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াত নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকেরা

অনেকেই জানাচ্ছেন, যাঁদের নিজেদের গাড়ি, মোটরবাইক, স্কুটার রয়েছে তাঁরা নিজেরাই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেবেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল চালু হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে। কিন্তু পড়ুয়ারা স্কুলে যাবে কী ভাবে? স্কুল কোভিড-বিধি মেনে চললেও স্কুলবাস কিংবা স্কুলগাড়িতে কি সব নিয়ম বজায় থাকবে? এ সব নিয়েই এখন চিন্তিত বহু অভিভাবক।

অনেকেই জানাচ্ছেন, যাঁদের নিজেদের গাড়ি, মোটরবাইক, স্কুটার রয়েছে তাঁরা নিজেরাই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেবেন। তবে যাঁদের সে সব উপায় নেই, তাঁরা জানাচ্ছেন, স্কুলবাস কিংবা স্কুলগাড়িই তাঁদের ভরসা। স্কুলগাড়ির মালিকেরা অবশ্য কোভিড-বিধি মেনেই পড়ুয়াদের বসানো হবে বলে দাবি করেছেন।

লেক টাউন থেকে মধ্য কলকাতার একটি স্কুলে যায় নবম শ্রেণির অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তার অভিভাবকের প্রশ্ন, স্কুলবাস ঠিক মতো স্যানিটাইজ় করা হবে তো? বাসে দূরত্ব-বিধি মানা হবে তো? টালিগঞ্জের বাসিন্দা এক অভিভাবক প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘গত আট মাসে মেয়ে বাইরে কার্যত বেরোয়নি। বাস-অটোয় চাপেনি। আমার স্কুটারে করে ওকে স্কুলে পৌঁছে আসতে পারব। কিন্তু ও ফিরবে কী ভাবে? ওর যখন স্কুল ছুটি হয় তখন তো আমি অফিসে থাকি।’’ অভিভাবকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্কুলের নিজস্ব বাসে কোভিড-বিধি না মানা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করা যাবে। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলেরই নিজস্ব বাস নেই। পড়ুয়ারা স্কুলগাড়িতে যাতায়াত করে। সেই সব স্কুলগাড়িতে কোভিড-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা সব সময়ে নজর রাখা কী ভাবে সম্ভব?

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নিজস্ব বাস রয়েছে। স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের সঙ্গে বাসও খুব ভাল করে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। সব ক্লাস চালু না থাকায় সব বাসও কাজে লাগবে না। বাসে বসার জায়গার তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ পড়ুয়া নেওয়া হবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে।’’

তবে অনেক স্কুলেরই নিজস্ব স্কুলবাস নেই। যেমন, শ্রী শিক্ষায়তন। ওই স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যাঁরা বাসে বা স্কুলগাড়িতে পড়ুয়াদের নিয়ে আসবেন, তাঁরা যেন যথেষ্ট সতর্কতা নেন, তা নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ রামমোহন মিশন হাই স্কুলেরও নিজস্ব বাস নেই। ওই স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, তাঁরা নিজেদের গাড়ি, মোটরবাইক, স্কুটারে পড়ুয়াদের পাঠানোর চেষ্টা করতে বলেছেন অভিভাবকদের।

মধ্য কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য কয়েকটি বাস ও স্কুলগাড়ি রয়েছে বিপ্লব সরকার নামে এক ব্যক্তির। বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘আট মাস বসে থেকে আমাদের ব্যবসার প্রচুর লোকসান হয়েছে। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। স্কুল খুললেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই শুধু যাবে। তাই বাসে ভিড় হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। তবে বাসের জন্য স্যানিটাইজ়ার ও তাপমাত্রা মাপার জন্য কয়েকটি থার্মাল
গান কিনছি।’’

স্কুলে যাতায়াত চালু হলেও তাঁদের খরচ কতটা পোষাবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কোনও কোনও গাড়ির মালিক। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা থাকবে। পড়ুয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় দূরত্ব-বিধি মানা যাবে। বাস স্যানিটাইজ়ও আমরা করব। কিন্তু এত কম পড়ুয়া নিয়ে আমাদের খরচ কতটা পোষাবে সেটাও দেখতে হবে। কম পড়ুয়া নিয়ে বাস চালালেও তেলের খরচ, চালকের বেতন তো কমবে না।’’

তিনি জানান, তাঁদের সংগঠনের অধীনে স্কুলে যাতায়াতের জন্য কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে প্রায় চার হাজার বাস চলে। সে সব চালানো হলে কী ভাবে হবে, কোন কোন বাসমালিক বাস চালাতে উৎসাহী, সেই বিষয়ে জানতে আগামী মঙ্গলবার তাঁদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

অন্য দিকে, ছোট স্কুলগাড়ির মালিকদের একটি সংগঠন ‘বেঙ্গল কারপুল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পার্ক স্ট্রিট ইউনিটের সভাপতি তপন ঘোষ বলেন, ‘‘ছোট গাড়িতে নিচু ক্লাসের পড়ুয়ারাই বেশি যায়। নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়া খুব কম থাকে। তাই কয়েক জন পড়ুয়ার জন্য এখনই ছোট গাড়ি চালানো যাবে কি না, সেটা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। স্কুলগাড়ি চালানো নিয়ে সরকারি কোনও নির্দেশ আছে কি না, তা-ও তাঁরা দেখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona school student Coronavirus Pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE