ফাইল চিত্র।
টানা ৪৫ দিনের সুদীর্ঘ গরমের ছুটির শেষে স্কুল খোলার কথা ছিল আর দিন দুই পরেই। কিন্তু সোমবার স্কুলশিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছে, তীব্র গরমের কারণে স্কুল বন্ধ থাকবে ২৬ জুন পর্যন্ত। আর এই বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শহরের অধিকাংশ স্কুলপড়ুয়ার অভিভাবকেরা। তাঁদের মতে, এমনিতেই কোভিডের জন্য গত দু’বছরে পড়াশোনার বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এ বছরও শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে দু’মাস পর থেকে। এক মাস ক্লাস হতে না হতেই গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছিল। টানা দেড় মাস ছুটির পরে ফের ২৬ জুন পর্যন্ত সেই ছুটি বাড়ালে সিলেবাস শেষ হবে কী ভাবে? যদিও শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই।’’
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রীর অভিভাবকদের বক্তব্য, আগামী ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে পুরো সিলেবাসে। কিন্তু এ ভাবে ছুটি চললে সিলেবাস শেষ হবে কবে? হিন্দু স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির কয়েক জন পড়ুয়ার অভিভাবকেরা জানালেন, দ্বাদশের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষাই এখনও হয়নি। সিলেবাস শেষ হওয়া নিয়ে চিন্তায় তাঁরাও। অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘গরম কি আজ নতুন করে পড়ছে? এ ভাবে ছুটি বাড়ানোর ফলে পড়ুয়াদের ক্ষতির দায় কি সরকার নেবে?’’
প্রতিবাদের ঝড় সমাজমাধ্যমেও। কেউ বলছেন, আগে সারা বছর স্কুল খোলা থাকত। ছুটি মিলতমাঝেমধ্যে। এখন সারা বছরই ছুটি। মাঝেমধ্যে স্কুল খোলে। কেউ আবার লিখেছেন, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে হাল্লার রাজা জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার ছুটি হবে না? আর এখন তাঁদের ছেলেমেয়েদের প্রশ্ন, আমাদের ছুটি শেষ হবে না?
কারও কারও প্রশ্ন, এর পরে বর্ষা নামবে। তার পরে ভাদ্র মাসের গরম। তা হলে কি আবারও স্কুল বন্ধ রাখা হবে? পুজোর ছুটির কথাও মনে করিয়েছেন কেউ কেউ। কারও মতে, পড়াশোনা যত কম হবে, চাকরির চাহিদাও তত কম থাকবে। পরিকল্পিত ভাবেই স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
অনেকের মতে, বেশির ভাগ স্কুলেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তাঁদের প্রশ্ন, সেই সমস্যাকে ঢাকতেই স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে না তো? এক জন আবার লিখেছেন, এত দিন স্কুলের গণ্ডি পেরোলে তবে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা ভাবত পড়ুয়ারা। এ বার তো স্কুলে পড়ানোর জন্যই ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়ে দিতে হবে তাদের।
অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলই চাইছে এ বার ক্লাস চালু করে দিতে। যদিও কোনও কোনও স্কুলের অধ্যক্ষেরপ্রশ্ন, ২৬ জুনের আগে স্কুল খুললে আবার সরকারের ধমক খেতে হবে না তো? তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকার যখন ২ মে থেকে গরমের ছুটি দিল, তখন বেসরকারি স্কুলগুলি খোলাই ছিল। কিন্তু তার পরে সরকারি চাপে বাধ্য হয়েই বেসরকারি স্কুলগুলিকে গরমের ছুটি ঘোষণা করতে হয়। রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বললেন, “১৬ বা ১৭ তারিখ স্কুল খুলে দিলে ফের সরকারি হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যাবে না তো? বিরোধিতা এড়াতে ২৬ জুন পর্যন্ত অনলাইন ক্লাসই করানো হবে। তবে অভিভাবকেরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। আমাদেরও খুবই অসুবিধা হচ্ছে।” ডিপিএস রুবি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। স্কুল খোলার কথা ১৬ জুন। কাল, ১৫ জুন তাঁরা জানিয়ে দেবেন, কবে খুলবে। শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, স্কুল কবে খুলবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে বন্ধ থাকলে অনলাইন ক্লাস হবে। সাউথ পয়েন্টের অধ্যক্ষ রূপা সান্যাল ভট্টাচার্য এবং ক্যালকাটা গার্লসের অধ্যক্ষ বাসন্তী বিশ্বাস জানিয়েছেন, ওই দুই স্কুলে ২৬ মে পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস হয়ে গরমের ছুটি পড়েছে। তাই স্কুল খুলবে ২৭ জুন। তবে সাউথ পয়েন্টের জুনিয়র বিভাগের খোলার কথা ছিল আগেই। তারা কী করবে, সিদ্ধান্ত হয়নি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy