ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গের ট্রেন ধরবেন বলে বাড়ি থেকে হাতে সময় নিয়েই বেরিয়েছিলেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা রবীন দাশগুপ্ত। মৌলালি পার করার পরে শিয়ালদহ উড়ালপুলে যানজটে আটকে গেল তাঁর গাড়ি। অথচ, মৌলালি থেকে শিয়ালদহ স্টেশনের দূরত্ব একেবারেই বেশি নয়। কিন্তু অভিযোগ, রাতের কিংবা দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজটের কারণে ওইটুকু পথ পেরোতেই লেগে যাচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
গত কয়েক বছর ধরে এমনই অবস্থা শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ওই রাস্তার। এক দিকে স্টেশন চত্বরের বাইরে একটি বড় অংশ আটকে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকাজ। এর পাশাপাশি, রাতে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে একসঙ্গে অনেক গাড়ি চলে আসায় ওই অবস্থা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই দুই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিয়ালদহ উত্তর শাখার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের দিকের গেটটি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা। এ বার এই জট ছাড়াতে শিয়ালদহ স্টেশনের পূর্ব দিকে থাকা পার্সেল গেট ব্যবহার করার জন্য পূর্ব রেলের কাছে প্রস্তাব পাঠাল লালবাজার। সূত্রের দাবি, শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে ওই যানজট কমাতে মৌখিক ভাবে সম্মত হয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারি ভাবে রেলের তরফে লালবাজারকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। ওই গেট ব্যবহারের ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে রেল এবং লালবাজারের পুলিশকর্তারা জায়গাটি ঘুরে দেখতে পারেন বলে খবর।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যার পরে শিয়ালদহ স্টেশনের ৯-১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরপাল্লার একাধিক ট্রেন ছাড়ে। ফলে, ওই সব ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীদের গাড়ির চাপও বাড়ে। যা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশকে। অন্য দিকে, ক্যানাল ওয়েস্ট রোড সংলগ্ন এলাকায় শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকার একটি গেট রয়েছে। যা পার্সেল গেট নামে পরিচিত। ওই গেট দিয়ে বর্তমানে রেলের পার্সেল ভ্যান এবং রেল পুলিশের গাড়ি যাতায়াত করে। লালবাজারের তরফে রেলকে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ওই গেট দিয়ে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীদের গাড়ি ঢোকানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ প্রথমত, পার্সেল গেটের খুব কাছেই রয়েছে ৯-১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। দ্বিতীয়ত, ওই গেটটি খুলে দেওয়া হলে উত্তর এবং পূর্ব কলকাতা থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীরা শিয়ালদহ উড়ালপুল বা বেলেঘাটা মেন রোড ব্যবহার না করে নারকেলডাঙা মেন রোড থেকে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ধরে গাড়ি নিয়ে সোজা স্টেশনে ঢুকে পড়তে পারবেন। পুলিশের দাবি, এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনই যানজটের কবলেও পড়তে হবে না যাত্রীদের।
তবে লালবাজারের প্রস্তাব, ওই গেট দিয়ে শুধুমাত্র দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীরাই প্রবেশের অনুমতি পাবেন। তাঁদের নামিয়ে গাড়ি সেখান থেকে চলে যাবে। কোনও গাড়ি সেখানে দাঁড়াতে পারবে না, অথবা কেউ ওই গেটের সামনে থেকে গাড়িতে উঠতেও পারবেন না।
সূত্রের খবর, পুলিশের দেওয়া প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, পার্সেল গেট চালু করার আগে সেখানকার রাস্তা চওড়া করতে হবে। একই সঙ্গে, যে সময়ে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি ছাড়ে, তখন যাতে রেলের মাল খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে, তা দেখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, দূরপাল্লার ট্রেন যাতে ৯-১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকেই ছাড়ে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রেলকে। এক পুলিশকর্তা জানান, এ বিষয়ে রেলকে আগে এক বার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আবারও এপ্রিল মাসের শেষে আর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে মেট্রোর কাজের জন্য অধিকাংশ রাস্তা আটকে রয়েছে। তার উপরে স্টেশনের বাইরে থেকে বিভিন্ন রুটের অটো ছাড়ে। শিয়ালদহে যান-শৃঙ্খলা ফেরাতে অটো এবং ট্যাক্সির লাইন পৃথক করা ছাড়াও পথচারীদের জন্য আলাদা পথের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশের মতে, শিয়ালদহ স্টেশন এবং আদালত সংলগ্ন এলাকায় গাড়ির চাপ কমাতে পারলে তবেই সেখানকার যান চলাচল মসৃণ হবে। তার জন্য বিকল্প ওই রাস্তা ব্যবহার করা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy